একদল ছায়াসঙ্গী আর তাদের গল্প ……/…

অনেক দিন পর লিখতে এলাম । এই লেখাটি এর জন্য অনেক ব্লগ ঘাঁটতে ও অনুবাদ করতে হয়েছে । আসা করি এটি আপনাদের ভাল লাগবে । পুরো লেখাটিতে অনেক সংজোযন - বিযোজন করা হয়েছে
১৯৮৯ সালের দিকের কথা। তরুণ এসাঞ্জ ও তার সহ-হ্যাকাররা যুক্তরাষ্ট্রের সামরিক নিরাপত্তা সমন্বয়-কেন্দ্রের কম্পিউটার নেটওয়ার্কে গোপনে প্রবেশে সক্ষম হয়। একটি গুপ্ত চোরাছিদ্রের ( back door ) মাধ্যমে তারা অনায়াসে এই সামরিক ইন্টারনেটে ঢুকতে পারতো। আবিষ্কারের পর প্রায় দুবছর যাবৎ এইসব সামরিক কম্পিউটারে তাদের অবাধ বিচরণ ছিল। আসান্‌জ্‌ তখন অস্ট্রেলিয়ার মেলবোর্ণে বসবাসরত একজন উঠতি হ্যাকার। সে সময় মহাকাশ সংস্থা NASA-ও মেলবোর্ণের এই হ্যাকিং-চক্রের আক্রমণের স্বীকার হয়। নেটওয়ার্কে সন্দেহজনক আনাগোনা দেখে, FBI অস্ট্রেলীয় কর্তৃপক্ষকে তাদের সন্দেহের কথা জানায়। '৯২-তে প্রায় ২০-টি বিভিন্ন হ্যাকিং কর্মকান্ডের অভিযোগে আসান্‌জ্‌কে গ্রেফতার করা হয়। জরিমানা ধার্য করে আসান্‌জ্‌-কে শাস্তি প্রদান করা হলেও, বিচারক তখন তাকে মূলতঃ একজন কম্পিউটার-পাগল কৌতুহলী যুবক হিসেবেই দেখেন। অল্পের ভেতর সাজা দিয়ে আদালত মামলা নিষ্পত্তি করে। কালক্রমে ছাড়া পান এসাঞ্জ

এই রচনাটি মূলতঃ তথ্য-ফাঁসকারী সংস্থা Wikileaks এর জন্মকথা, প্রতিষ্ঠার প্রথম দিনগুলোতে তাদের দর্শন, তাদের স্বপ্ন, একটি আন্তর্জাতিক মাত্রার সংগঠন হিসেবে তাদের বেড়ে ওঠা, আজকের বাস্তবতায় তাদের সম্ভাব্য পরিণতি, তাদের ভূত-ভবিষ্যৎ ------- ইত্যাদি নিয়ে লেখা। অন্যদিকে, সরকারের ভেতরে কারা, কেন, কোন আশ্বাসে Wikileaks কে এসব তথ্য পাচার করে, পাচারকারীদের পরিচয় গোপনের জন্য, টিকে থাকার জন্য Wikileaks কি প্রযুক্তি ব্যবহার করে --- এসব নিয়েও সীমিত আলোকপাত করবো। লেখার "আইস্ল্যান্ড অধ্যায়" ও তার পূর্ববর্তী অংশের মূল প্রেরণা এসেছে, সুইডেনের জাতীয় দূরদর্শনে উইকিলিক্‌সকে নিয়ে নির্মিত তথ্যবহুল প্রামাণ্যচিত্র থেকে। লেখার "ম্যানিং অধ্যায়" সি.এন.এন-এর বিভিন্ন প্রতিবেদন ও Wired ম্যাগাজিন এ প্রকাশিত বিভিন্ন প্রবন্ধ অবলম্বনে লেখা হয়েছে। এছাড়াও ঘটনার সাথে প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে জড়িত অনেকের সাক্ষাৎকার (সি-বি-এস ও সি.এন.এন) এর আলোকে ঘটনা গুলো সাজানো হয়েছে।

বোধোদয়ঃ সুবিচার প্রতিষ্ঠায় গোপন তথ্যের প্রচন্ড শক্তি প্রথম অনুধাবন

'৯২ এর ঘটনার পর আসান্‌জ্‌ ISP ব্যবসা শুরু করেন। '৯৩ -এ কিছু বন্ধুদের নিয়ে অস্ট্রেলিয়ার প্রথম ইন্টারনেট সেবাদাতা প্রতিষ্ঠান গড়ে তোলেন এসাঞ্জ  নিজের কারিগরী দক্ষতা কাজে লাগিয়ে ক্রেতাদের দ্বারে দ্বারে পৌঁছে দেন ইন্টারনেট। এ সময়ই তিনি সেবা গ্রহণকারীদের জন্য স্বাধীন মতামত প্রকাশের একটি মুক্তমঞ্চ প্রদান করেন।

ছবিঃ'৯২ তে ২০টি বিভিন্ন হ্যাকিং
কর্মকান্ডের অপরাধে ধরা পড়ার
পর যুবক এসাঞ্জ

এক পর্যায়ে এসাঞ্জ একজন গ্রাহক Church of Scientology (ক্যালিফোর্নিয়া) এর কিছু গোপন নথি এই মঞ্চে প্রকাশ করে ফেলেন। সায়েন্টোলজি চার্চের ভেতরের এসব গোপন তথ্য ফাঁস হওয়াতে এর অনুসারীরা প্রচন্ড ক্ষুব্ধ হয়। গির্জার উকিল আসান্‌জকে সতর্ক করে বহু চিঠি পাঠায়। এমনকি বেসরকারী গোয়েন্দা(private investigator) ভাড়া করে তারা শেষ পর্যন্ত আসান্‌জের একান্ত ব্যক্তিগত ফোন নাম্বার সংগ্রহ করে এবং ফোনে কড়া হুমকি দেয়। উল্লেখ্য, সায়েন্টোলজি তুলনামূলক ভাবে নতুন একটি মতবাদ যা ভিনগ্রহের প্রাণীদের সাথে যোগাযোগে বিশ্বাসী এবং এদের বিরুদ্ধে, উপাসনালয়ের ভিতর সদস্যদের শারীরিক নির্যাতনের নানান অভিযোগ রয়েছে।

যা হোক, এসব হুমকির পর, গোপন-তথ্য প্রকাশের একটি সর্বজনীন মুক্তমঞ্চের প্রয়োজনীয়তার ব্যাপারে এসাঞ্জ এর  বিশ্বাস আরো পোক্ত হয়। সমাজের বিভিন্ন কোণে ধামাচাপা দিয়ে রাখা সত্য-গুলো বের করে আনতে পারলে তা এক বিরাট পরিবর্তন সূচিত করবে, এটা ধরতে পারেন  এসাঞ্জ । '৯৯ -এ তিনি leaks.org শীর্ষক নামায়তনটি* ( Name Domain ) নিবন্ধন করেন।

উইকি-"পিডিয়া" মডেলের ব্যর্থতা ..... বিনে পয়সায় কোন প্রতিবেদক মিললো না

small২০০৬ সালে wikileaks.org নিবন্ধিত হয় এবং প্রারম্ভিক যাত্রা শুরু হয় উইকিলিক্‌স এর। হ্যাকার, গণিতবিদ, সাংবাদিক -সহ সমমনা একদল সদস্য এ প্রকল্প শুরু করে। এরা সংরক্ষিত বার্তালিকা* ( mailing list / মেইল গ্রুপ এর সমতুল) -এর মাধ্যমে যোগাযোগ রক্ষা করতো। শ্রেণীবদ্ধ* নথি ( classified documents ) সাধারণ্যের মাঝে ফাঁস করে দেয়ার একটি আন্তর্জাতিক উদ্যোগের শপথ নেয় সেদিন সবাই।

সহজ-মনে সবাই ধারণা করেছিল, যেহেতু উইকিপিডিয়ায় বিশ্বব্যাপি স্বেচ্ছাসেবকদের যৌথপ্রয়াসের মডেলটি খুবই সাফল্যজনক বলে প্রমাণিত হয়েছে, সুতরাং তথ্যফাঁস প্রকল্পেও অনুরূপ মডেল যুৎসই হবে। তাই প্রাথমিক পরিকল্পনা ছিল, বিভিন্ন উৎস থেকে সংগৃহীত গোপন নথি গুলো বিশ্বব্যাপি স্বেচ্ছাসেবকদের ভিতর বন্টন করা হবে।

এরা

--এইসব নথি খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে পড়ে তার বিশদ বিশ্লেষণ করবে,

--প্রকাশযোগ্য প্রতিবেদন প্রস্তুত করবে,

--প্রকাশের পর সরকারের কোন নির্দোষ / নিরীহ কর্মকর্তা যেন অহেতুক বিপাকে না পড়ে সেজন্য কিছুকিছু নাম কালো কালিতে ঢেকে দেবে

--ভুঁয়া নথি ছাঁটাই করবে তথা উৎসের সত্যাসত্য নিরূপণ করবে

--এবং সর্বোপরি ফাঁসকারী উৎস যেন কোনভাবেই ধরা না পড়ে তার জন্য উৎসের সকল চিহ্ণ নিশ্চিহ্ণ করে দেবে।

কিন্তু কিসের কি? স্বেচ্ছাসেবক পাওয়াই মুশকিল। হাজার হাজার পাতার এসব নথি বসে বসে পড়ার ধৈর্য নেই কারোর। তখনই আসান্‌জ এবং তার সহকর্মীদের চৈতন্যোদয় হয় যে, একমাত্র পেশাদার, পুরোমাত্রায়-নিয়োজিত গণমাধ্যমের সাংবাদিক এবং প্রতিবেদকরাই এই বিশাল কাজ মাথায় নিতে রাজি হবে। কেননা সেটাই তাদের জীবিকা, পেশা।

খুব দ্রুতই তাই, উইকিলিক্‌স তাদের কার্যনীতিতে পরিবর্তন আনে। গণমাধ্যমের সাথে যৌথ উদ্যোগে তথ্যফাঁস কার্যক্রম চালাতে হবে। এই ধারণা থেকেই, ব্রিটিশ সংবাদপত্র Guardian এর সহায়তায় তারা প্রথম, কেনিয়ার রাষ্ট্রপতির বিপুল অর্থ আত্মসাতের ঘটনা ফাঁস করে। এর অনতিকাল পরেই কেনিয়ান পুলিশের যম-বাহিনী* ব্যবহার( death patrol ) ও অমানবিক প্রহারের কাহিনী ফাঁস করে তারা। এসব খবরে তুমুল বিতর্কের ঝড় ওঠে। গণমাধ্যমে তোলপাড় পড়ে যায় এ নিয়ে। কিন্তু সবকিছুর নেপথ্যে উইকিলিক্‌সের অবদান সবার অজানা রয়ে যায়।

জার্মান হ্যাকারদের যোগদানঃ নিরাপদ নীড়ের খোঁজে ইউরোপ চষা

কিন্তু উইকিলিক্‌স এর খবর কানে কানে পৌঁছে যায় দেশ বিদেশের মুক্ত-সাংবাদিকতা আন্দোলনের বিভিন্ন কর্মীদের কাছে। এভাবেই জার্মান হ্যাকিং সংগঠন "কেওস কম্পিউটার ক্লাব" উইকিলিক্‌স এর কথা জানতে পারে। হ্যাকিং এ পৃথিবীর অন্যতম প্রাচীন ও বৃহত্তম এই ক্লাবটি, সকল তথ্যসূত্রে অবাধ প্রবেশাধিকার নিয়ে দীর্ঘদিন ধরে সরকারের সাথে লড়াই করে আসছিল। লিক্‌স আর কেওস ----- দুপক্ষের দর্শন বহুদিক দিয়ে মিলে যায় পাতায় পাতায়। এই ক্লাবেরই এক সদস্য ড্যানিয়েল ডম-শাইট বেরি পেশায় প্রযুক্তি-পরামর্শদাতা(Computer consultant).


ছবিঃ
বার্লিনে জার্মান হ্যাকিং সংগঠন "কেওস" এর সদর-দপ্তর।

সত্যিকারের মুক্ত-সাংবাদিকতা প্রতিষ্ঠা, সমাজপতিদের চাপা দেয়া গোপন তথ্যাদি ফাঁস ইত্যাদি নিয়ে ডম-শাইটের নানান পরিকল্পনা, নানান স্বপ্ন। উইকিলিক্‌স এর সাথে পরিচয়ের পর ডমশাইট চাকরি ছেড়ে দিয়ে নিজেকে পুরোপুরি এই নব-গঠিত সংগঠনের সেবায় নিয়োজিত করার সিদ্ধান্ত নেন। কেওস ক্লাবের মেধাবী হ্যাকারদের অন্তর্ভুক্তি ও অবদানের ফলে ক্রমেই আরো শক্ত হয়ে ওঠে লিক্‌স। এখন প্রয়োজন শুধু এসব সরকারী, সংবেদনশীল, শ্রেণীবদ্ধ দলিলাদি ফাঁসের জন্য উন্মুক্ত আইন, উন্মুক্ত দেশ...... নির্ভয়ে সবার সামনে গোপন-নথি টাঙ্গিয়ে রাখা যায় এমন সার্ভার।

কোথায় ঘাঁটি গাড়া যেতে পারে তার জন্য আসান্‌জ আর ডমশাইটের শীর্ষ বাছাই গুলোর মধ্যে ছিল,

১) বেলজিয়াম

২) মার্কিন সংবিধানের প্রথম সংশোধনী ( first amendment ) এর বলে যে কেউ স্বাধীন মতামত প্রকাশ করতে পারে। সেই হিসেবে যুক্তরাষ্ট্র-ও স্বাধীন সাংবাদিকতার জন্য অনুকূল হতে পারে (!)

৩) সুইডেন

এর মধ্যে সুইডেনের আইন মুক্ত-সাংবাদিকতার জন্য তুলনামূলকভাবে বেশী অনুকূল বলে মনে হয়। বিগত কয়েক বছরে সংবাদ মাধ্যমকে যে কোন মূল্যে রক্ষার সুনাম রয়েছে সুইডেনের। বিশেষ করে যাবতীয় সংবরণ নীতিমালার (censorship laws) হাত থেকে বিভিন্ন আন্তর্জাল সঞ্চারণাকে*(Internet Propaganda) রক্ষার বিরল নজির স্থাপন করেছে সুইডেন।

কেওস ক্লাবের এক সন্মেলনে আসান্‌জ আর ডম-শাইট এসব চিন্তা তুলে ধরেন। ক্লাবের সুইডিশ সদস্যদের আহবান করা হয় এগিয়ে আসার জন্য।

কাজ আগায় দ্রুত। খুব শীঘ্রই সুইডিশ ইন্টারনেট কোম্পানী PQR এর সার্ভার থেকে তথ্য পরিবেশন শুরু করে উইকিলিক্‌স্‌। বড় বড় কোম্পানী বা সরকার কারুরই তোয়াক্কা করে না PQR.। পয়সা দিলে যা-ই বল, তা-ই সার্ভারে পরিবেশনে রাজি তারা। যতক্ষণ না পর্যন্ত আইন ভঙ্গ হচ্ছে PQR ততক্ষণ পরিবেশিত তথ্যের "বিষয়" নিয়ে মাথা ঘামায় না। আর সুইডিশ আইন হল ব্যাপক উদার এবং শিথিল। সেই শিথিল আইনের পূর্ণ সদ্ব্যবহার করে PQR.

ছবিঃ সুইডেনের প্রত্যন্ত মফস্বলের এই গোডাউনের -সদৃশ স্থাপনায় PQR এর সার্ভার থেকেই তথ্য পরিবেশন শুরু করে লিক্‌স।

PQR তথ্য বিনিময়ের জন্য গ্রাহকদের নিরাপদ সুড়ঙ্গ ( VPN Tunnels ) প্রদান করে থাকে। কর্তৃপক্ষ যদি গণজালে(Public Internet) আড়িপাতার চেষ্টা-ও করে, (Packet sniffing/Eavesdropping) তাহলেও সুড়ঙ্গের ভেতরের তথ্য তারা দেখতে পাবেনা। কাজেই উইকিলিক্‌স্‌ এর নিজস্ব আলাপ-কক্ষ (chat rooms) - গুলোতে কি হচ্ছে না হচ্ছে তা বাইরের লোকেদের জন্য দুর্বোধ্য ও সংকেতায়িত*(encrypted).

PQR এর এই ঘাঁটি থেকেই একের পর এক অজানা কাহিনী প্রকাশ করে চলে উইকিলিক্‌স্‌। এ ধারায় প্রথম তারা গুয়ান্তানামো কারাগারের একটি সামরিক-হাতবই*(Manual) প্রকাশ করে। মানবাধিকার কর্মীরা এই হাতবইটি প্রকাশের জন্য বহুদিন যাবৎ সরকারকে চাপ দিয়ে আসছিল... কোন লাভ হয়নি। বন্দিদের নির্যাতনের বিভিন্ন অমানবিক-পদ্ধতি এই হাতবই এ সবিস্তারে পাওয়া যায়।

এরপর "ট্রাফিগিউরা" নামের একটি বহুজাতিক কোম্পানির কিছু গোপন দলিল ফাঁস করে তারা। এখানে দেখা যায়, কোম্পানিটি গোপনে বিভিন্ন বিষাক্ত বর্জ্য আফ্রিকার আইভরি-কোস্টে ফেলেছে, যা কালক্রমে হাজার হাজার মানুষকে রোগাক্রান্ত করে।

ছবিঃ "ট্রাফিগিউরা" নামক বহুজাতিক কোম্পানীটি গোপনে আইভরি-কোস্টে বিষাক্ত শিল্প বর্জ্য ফেলাতে হাজার হাজার মানুষ রোগাক্রান্ত হয়ে পড়ে। ডানে রোগীর পা।

প্রথম পরিকল্পনা ছিল ব্রিটিশ পত্রিকা Guardian এর সহযোগিতায় এই কেলেঙ্কারি প্রকাশ করা হবে। কিন্তু বাঁধ সাধলো রাঘব-বোয়াল নিয়ন্ত্রিত বৃটেন এর গণমাধ্যম ও আইন। ফাঁসের ঘটনায় মরিয়া হয়ে ওঠে "ট্রাফিগিউরা"। রাতারাতি তারা যুক্তরাজ্যের আদালত থেকে একটি সংবরণাদেশ*(Gag order ) বের করে। এই নিষেধাজ্ঞায় যুক্তরাজ্যের স-ক-ল সংবাদপত্রকে "ট্রাফিগিউরা" সংক্রান্ত প্রতিবেদনটি প্রকাশ থেকে বিরত থাকার নির্দেশ দেয়া হয়। এমনকি, এরূপ একটি সংবরণাদেশ যে জারি করা হয়েছিল সেটি পর্যন্ত প্রকাশ না করার নির্দেশ দেয় আদালত। --- এতটাই দাপট ট্রাফিগিউরার! চুপিয়ে যায় Guardian - সহ ব্রিটেনের সকল পত্রিকা। জিতে যায় ট্রাফিগিউরা। উইকিলিক্‌স্‌ চালিয়ে যায় মুক্ত সাংবাদিকতার লড়াই ......

পরবর্তী দুবছরে হাজারে হাজারে শ্রেণীবদ্ধ দলিল প্রকাশ করে লিক্‌স্‌। থাইল্যান্ড, চীন, ইরানসহ বিভিন্ন দেশে নিষিদ্ধ ঘোষিত হয় উইকিলিক্‌স্‌। যুক্তরাষ্ট্র একটি শ্রেণীবদ্ধ প্রতিবেদনে সাইটটিকে নিরাপত্তা হুমকি হিসেবে চিহ্নিত করে। লৌহাসিকভাবে**(ironically) ওই গোপন প্রতিবেদনটি-ও উইকিলিক্‌স্‌ -এ ফাঁস হয়ে যায়।

ICELAND অধ্যায়ঃ রাষ্ট্রীয় আইন পাল্টাতে WiKileaks কে তলব...... পাল্টাবার স্বপ্নের শুরু

২০০৮ এর অক্টোবরে ICELAND এর গোটা ব্যাংকিং ব্যবস্থায় ধস নামে। ব্যাংকগুলো তাদের ১৭/১৮ - অংশ ভর হারায়। গড়ে প্রায় প্রতি সপ্তাহে একটি করে ব্যাংক ঋণখেলাপী হতে থাকে। এ সময়ই উইকিলিক্‌স্‌ একটি গোপন নথি অর্জনে সক্ষম হয় যাতে দেখা যায়, ব্যাংক-ধসের পেছনে স্বজনপ্রীতি, হর্তাকর্তাদের অবহেলা ও উদাসীনতা আংশিকভাবে দায়ী।

এতে স্পষ্ট প্রতীয়মান হয় যে, একদিকে মান-নিয়ন্ত্রণকারী কর্তৃপক্ষের সবাই অবহেলা-বশতঃ ব্যাংক গুলোকে অবাধ ছাড় দিয়েছে, অপরদিকে ব্যাংক কর্মকর্তারা প্রকৃত নাজুক অবস্থা ঢাকার জন্য বরাবর মিথ্যে বলে এসেছে।

এসব সত্য উইকিলিক্‌স্‌ টানিয়ে দেয় আন্তর্জালে, সর্বসাধারণের পড়ার জন্য। ঘটনায় ব্যাংকগুলো প্রচন্ড ক্ষুব্ধ হয়। মরিয়া হয়ে তারা ফাঁসকৃত তথ্যের প্রচার বন্ধের জন্য উঠে পড়ে লাগে।

ICELAND এর জনৈক সাংবাদিক র‌্যাফন্সন প্রথম জানতে পারেন যে উইকিলিক্‌স্‌ নামক সাইটে এসব তথ্য সবিস্তারে টানানো আছে। উল্লেখ্য যে ইদানিং সংবাদ চ্যানেল গুলোতে আসান্‌জের অনুপস্থিতিতে উইকিলিক্‌সের হয়ে যাকে প্রতিনিধিত্ব করতে দেখা যায় তিনিই র‌্যাফন্সন। কিন্তু এখানে আমরা ২০০৮ সালের ঘটনা বলছি। তখনও র‌্যাফন্সন জানেন না যে তিনি আর উইকিলিক্‌স অঙ্গাঙ্গিভাবে জড়িয়ে যাবেন অচিরেই। উইকিলিক্‌স এর ফাঁসকৃত তথ্য অবলম্বনে প্রতিবেদন তৈরী করেন র‌্যাফন্সন। ওদিকে ব্যাংকগুলোও থেমে নেই। সব ধামাচাপা দেয়ার অন্তিম প্রয়াস হিসেবে তারা আদালতের আশ্রয় নেয়। শুধু চাই একটা সংবরণাদেশ।(Gag order), যার বলে সবার মুখ বন্ধ করে দেয়া যায়। ব্যাংকগুলোর চাপে নতজানু হয় আদালত এবং ব্যাংক এর রাঘব-বোয়ালদের মনমত নিষেধাজ্ঞা জারি করে। নিষেধাজ্ঞাটি ছিল আইস্ল্যান্ডিক দূরদর্শন(Television)-এ ব্যাংক কেলেঙ্কারি প্রচার বন্ধের জন্য কড়া নির্দেশ। ব্যাংক গুলো জানতো যে জাতীয় দূরদর্শনে(National television) এ নিয়ে অচিরেই সংবাদ প্রচার হতে যাচ্ছে। তাই এত তাড়াহুড়ো করে আদালত থেকে সমন বের করা।

কিন্তু দেরী একটু বেশী-ই করে ফেলেছিল ধূর্ত ব্যাংকগুলো। নিষেধাজ্ঞা জারি হল ঠিকই কিন্তু ততক্ষণে দূরদর্শনে প্রতিবেদনটি প্রচারের জন্য তৈরী। প্রচারের ঠিক মিনিট কয়েক আগে আদেশটি দূরদর্শনের দরজায় পৌঁছায়। সংবাদপাঠক পাঠ শুরুর পরপরই বাঁধা আসে। উদ্ভূত পরিস্থিতিতে সংবাদ পাঠক এভাবে ব্যাপারটা টিভি-দর্শকদের সামনে উপস্থাপন করেন,

আজকের সংবাদ এ পর্যন্তই ......যতটুকু আমরা বলতে চেয়েছিলাম তার পুরোটা হয়ত নয়... তবে এর সবটুকু আপনাদের জন্য তোলা আছে ডব্লিউ... ডব্লিউ......ডব্লিউ......ডট......... উইকিলিক্‌স্‌...ডট......

এ খবর মহীরুহের মত দিগ্বিদিকে ছড়িয়ে পড়ে। ব্যাংকারদের মিথ্যাচারের খবরে জনমনে ক্ষোভের আগুন জ্বলে ওঠে। সেই সাথে রাতারাতি উইকিলিক্‌স আইসল্যান্ডে তারকা বনে যায়......... দেশবাসীর কাছে তারা যেন এখন সত্যপ্রকাশের নিভৃত দূত।

ছবিঃ ২০০৮ সালেব্যাংক কেলেঙ্কারি ফাঁসের পর আইসল্যান্ডের জাতীয় দূরদর্শনে জাতীয় নায়ক রূপে আবির্ভূত হন এসাঞ্জ  ও হ্যাকার ডমশাইট

ব্যাংকের "একান্ত ব্যক্তিগত ও সংবেদনশীল তথ্য" -------- এই দোহাই দিয়ে সত্য গোপন করে রাখা এবং দিনের পর দিন মিথ্যাচারের ফলভোগ করে আইসল্যান্ডের সাধারণ মানুষ। তাই দেশে সম্পূর্ণ স্বচ্ছ একটি নতুন ব্যবস্থা প্রয়োজন যেখানে তথ্যের অবাধ প্রবাহ থাকবে। এমন স্বচ্ছ একটি নতুন ব্যবস্থার স্বরূপ কেমন হতে পারে, সেই পরামর্শের জন্য উইকিলিক্‌স্‌ কে আইসল্যান্ডে সাদর আমন্ত্রণ জানায় দেশবাসী। সেই আমন্ত্রণে সাড়া দিয়ে উড়ে আসেন আসান্‌জ্‌ আর ডমশাইট। আইস্ল্যান্ডের জাতীয় দূরদর্শনে এক আন্তরিক সাক্ষাৎকারে হাজার হাজার দর্শকের সামনে তারা মুক্ত-সাংবাদিকতা, তথ্যের অবাধ প্রবাহ ইত্যাদি সম্পর্কে নিজেদের দর্শন ও চিন্তা তুলে ধরেন।

হোটেলে দীর্ঘ বৈঠক ও সংসদে বিল পাশ

সাক্ষাৎকারের পরদিন সকালেই ডম-শাইট বুঝতে পারেন, সবাই এ নিয়ে আরো খোলামেলা কথা বলতে চায়। হোটেলে উইকিলিক্‌স এর প্রতিনিধিদের সাথে যোগাযোগ করে কর্তৃপক্ষ। উল্লেখ্য যে, এসবের আগে থেকেই আইসল্যান্ডে বেশ দুর্বল আকারে একটি মুক্ততথ্য আন্দোলন চালু ছিল। কিন্তু এই আন্দোলনের সক্রিয় কর্মীরা কিভাবে কি আগাবেন ঠাহর করতে পারছিলেন না। যেমন মুক্ত-সাংবাদিকতা বলতে আসলে কি বোঝায়? কেউ যদি গোপন তথ্য ফাঁস করে, তাহলে তার নিরাপত্তার জন্য সরকারের আইন কি? কোন ওয়েবসাইট বা ইন্টারনেট সেবাদাতা এসব সংবেদনশীল তথ্য পরিবেশন করলে, তা কি শাস্তিযোগ্য? ---এসব ব্যাপারে একটি পূর্ণাঙ্গ নকশার অভাব ছিল। উইকিলিক্‌স্‌ এসব ব্যাপারে তাদের দিক নির্দেশনা দেয়। কেননা একটি মুক্ত সমাজে এ সংক্রান্ত আইনগুলো কেমন হওয়া উচিত তা নিয়ে আসান্‌জ আর ডম-শাইটের খুব স্পষ্ট দর্শন ছিল।

যা হোক, হোটেলকক্ষে টানা ৪-৫ ঘন্টার বৈঠক চলে। সেদিনের আলোচনায় উপস্থিত ছিলেন,

১) বিরগিটা জন্সডট্টির ( সংসদ সদস্যা / আইস্ল্যান্ড)

২) স্মারি ম্যাক-কার্থি ( আন্দোলনের সক্রিয় কর্মী / আইস্ল্যান্ড)

৩) হার্বার্ট স্নরসন ( ইতিহাসবিদ / আইসল্যান্ড )

৪) জুলিয়ান আসান্‌জ

৪-৫ ঘন্টার টানা বৈঠকের পর তারা একটি খসড়া দাঁড় করাতে সক্ষম হন। শীঘ্রই সংসদে উত্থাপিত হয় খসড়াটি। কিন্তু সংসদ মানেই তো রাজনীতির মারপ্যাঁচ......বাক-বিতন্ডা.. .........স্থবিরতা। তবে এক্ষেত্রে সবাই বিলটিতে সমর্থন জানায়। অবিসংবাদিতভাবে বিলটি সংসদে পাশ হয় যা খুবই বিরল। সে খসড়ার খুঁটিনাটি বিশ্লেষণ এই রচনার মূল উদ্দেশ্য নয়। তবে এর দুএকটা ভিত্তি নিয়ে আলোচনা না করলেই নয়।

১) উৎসের নিরাপত্তা : সাংবাদিক যেই উৎস থেকে গোপন তথ্য আহরণ করেছে তার বিস্তারিত নাম-পরিচয় প্রকাশে সাংবাদিক বাধ্য নন। আইন-প্রয়োগকারী সংস্থা( পুলিশ ), সরকার বা কোন কোম্পানী --- কেউই জোরপূর্বক সাংবাদিক-কে ওই উৎসের নাম বলতে বাধ্য করতে পারে না। একমাত্র আদালত যদি বিবেচনার পর প্রয়োজনীয় মনে করে তাহলে সাংবাদিককে উৎসের নাম-পরিচয়ের ব্যাপারে মুখ খোলার নির্দেশ দিতে পারে। কিন্তু এই শেষ বাক্যটি আবার খুব ঘোলা। সাংবাদিককে নাম প্রকাশে চাপ দেয়ার ব্যাপারে আদালতের ক্ষমতারও একটা সীমা-পরিসীমা থাকা দরকার। আর কোন্‌ কোন্‌ বিশেষ ক্ষেত্র ঠিক "প্রয়োজনীয়" বলে বিবেচিত হবে, তাও সুনির্দিষ্টভাবে সংজ্ঞায়িত করা দরকার। খসড়ায় এসব ব্যাপারে জোরারোপ করা হয়।

২) ফুৎকারকের নিরাপত্তাঃ (Whistle-blower Protection): ফুৎকারক তথা তথ্য-ফাঁসকারী কি দোষী না নির্দোষ তা 'আপেক্ষিক' এবং উদ্ভূত পরিস্থিতির উপর নির্ভরশীল। এ ব্যাপারে যুক্তরাষ্ট্রের একটি আইন ধার করা হয়। যদি বৃহত্তর জনস্বার্থের কথা চিন্তা করে প্রতিষ্ঠানের ভেতরের কোন অনৈতিক কার্যকলাপ কোন কর্মচারী বাইরে প্রকাশ করে ফেলে তাহলে তার জন্য তাকে সাজা দেয়া যাবে না। বিশেষ করে সরাসরি জনগণের বা সরকারের ক্ষতি করা হচ্ছে এমন কোন তথ্য/পরিসংখ্যান যদি ফাঁস করা হয় বা কেউ যদি কোন সংসদ সদস্যের কাছে গিয়ে এসব খুলে বলে তাহলে ওই তথ্য যতই "সংবেদনশীল ও ব্যক্তিগত" হোক ফাঁস-কারীকে দোষী সাব্যস্ত করা যাবে না। এরকম চূড়ান্ত পরিস্থিতিতে কর্মচারী, প্রতিষ্ঠানে যোগদানের সময় নেয়া "স্তব্ধতার শপথ( Oath of Silence )" ভাঙ্গতে পারেন। উপরন্তু, ফাঁসকারী কর্মচারী বরখাস্ত হবার সম্ভবনা থাকলে তাকে সম-মর্যাদার ও সমান বেতনের নতুন জীবিকা প্রদানে সরকার বাধ্য এবং ফাঁস হওয়া তথ্যের বদৌলতে সরকার যদি আর্থিক ক্ষতির হাত থেকে রক্ষা পায় তাহলে ওই অর্থের ১৫ থেকে ৩০ শতাংশ ফুৎকারকের প্রাপ্য।


ছবিঃ
আইসল্যান্ড হচ্ছে প্রথম দেশ যেখানে তদন্তভিত্তিক-সাংবাদিকতা (investigative journalism)-র কথা মাথায় রেখে তথ্য-ফাঁসকারীদের অনুকূলে আলাদাভাবে আইন প্রণিত হয়

৩) অন্তর্বর্তী বাহকের নিরাপত্তাঃ ফাঁসকৃত তথ্য, উৎস থেকে শুরু করে জনগণের কাছে পৌঁছানোর মধ্যবর্তী সকল বাহক ( সাংবাদিক, তথ্যপরিবেশক ওয়েব-সাইট, প্রচারমাধ্যম, দূরালাপনী সেবাদাতা প্রতিষ্ঠান (Telecommunication providers) ইত্যাদি ) ফাঁস সংক্রান্ত যাবতীয় সাজা থেকে সম্পূর্ণ মুক্ত। কোন অবস্থাতেই তথ্যফাঁসের দায়, এসব অন্তর্বর্তীদের উপর চাপানো যাবে না। বলাই বাহুল্য, এই আইন আসান্‌জের মত তথ্যসংগ্রাহক বা উইকিলিক্‌স্‌ এর মত তথ্যপরিবেশক সাইট এবং PQR এর মত ইন্টারনেট সেবাদাতা প্রতিষ্ঠানের জন্য প্রধান রক্ষাকবচ।

১) ২) এবং ৩) এই খসড়া অবলম্বনে লেখা। উৎসাহী পাঠক ওই সংযোগ থেকে বিস্তারিত দেখে নিতে পারেন।

ম্যানিং অধ্যায়ঃ নিঃসঙ্গ, ভারসাম্যহীন সেনা কর্মকর্তার তথ্য পাচার

২০০৯ সাল। ইউরোপে যখন উইকিলিক্‌স্‌ এর স্বর্ণযুগ চলছে, তখন হাজার হাজার মাইল দূরে ইরাকে "হ্যামার" নামক মার্কিন সেনাঘাঁটিতে নিযুক্ত ধী-বিশ্লেষক* কর্মকর্তা (Intelligence Analyst) ব্র্যাডলি ম্যানিং, শ্রেণীবদ্ধ তথ্যের এক বিশাল ভান্ডার খুঁজে পান। অচিরেই এসব সংবেদনশীল তথ্য তিনি পাচার করবেন উইকিলিক্‌স্‌কে। যুদ্ধের ভয়াবহতার অসংখ্য দলিল অচিরেই পৌঁছে যাবে গোটা পৃথিবীর কাছে। সে ঘটনা আসছে একটু পরেই কিন্তু, কেন ম্যানিং এগুলো এসাঞ্জ এর কাছে পাচার করেছিলেন সে প্রশ্নের উত্তর মোল্লা খুঁজতে চেষ্টা করেছেন লেখার এই অংশে। ম্যানিং এর মনস্তত্ত্ব বোঝার জন্য কিছু আনুষঙ্গিক তথ্য উপস্থাপন করবো যা শুরুতে কিছুটা প্রসঙ্গ-চ্যুতি বলে মনে হতে পারে। তবে শেষকালে দুইয়ে দুইয়ে চার হবে আশ্বাস দিচ্ছি। পড়ে যান।

ম্যানিংকে যে কর্তৃপক্ষের কাছে ধরিয়ে দেয়, সে সাবেক পেশাদার হ্যাকার এইড্রিয়ান লামো। বিভিন্ন সময়ে ইয়াহু, মাইক্রোসফট, এমসিআই ইত্যাদি কোম্পানীর নিরাপত্তা ভেদ করে তাদের নেটওয়ার্কে অনুপ্রবেশের নজির রয়েছে লামোর, কিন্তু তিনি সবচেয়ে বেশী পরিচিত নিউইয়র্ক টাইমস্‌ হ্যাকিং এর জন্য। নিউ ইয়র্ক টাইমস্‌, লেক্সিস-নেক্সিস আর্কাইভ ব্যবস্থার একটি অন্যতম গ্রাহক। লেক্সিস-নেক্সিস একটি বিশাল তথ্যভান্ডার, যা (১৭৭০ সাল থেকে এ পর্যন্ত প্রণিত) যুক্তরাষ্ট্রের বিভিন্ন আইন, সরকারী বিবিধ নথি ও বিভিন্ন মামলার অপ্রকাশিত দলিল...... ইত্যাদি তথ্য সংরক্ষণ করে এবং গ্রাহকদের সার্চ-সুবিধা প্রদান করে থাকে। প্রায় ১০০ টেরাবাইটের এই বিশাল সংকলনের অন্যতম গ্রাহক হল টাইম্‌স এর মত বিভিন্ন সংবাদপত্র । টাইম্‌স হ্যাক করার পর লামো টাইম্‌স এর একাউন্ট ব্যবহার করে লেক্সিস নেক্সিস এ ঢোকেন। এরপর অতীতের বিভিন্ন বিতর্কিত মামলা নিয়ে ব্যক্তিগত গবেষণার জন্য তিনি লেক্সিসে সংরক্ষিত দলিলাদি ব্যবহার করেন। লামোর সাথে ম্যানিং এর পরিচয় হয় টুইটার এর মাধ্যমে( সে গল্প আর আজকে ফাঁদছিনা )। ইরাকে অবস্থান কালে লামো এবং ম্যানিং নিয়মিত জালালাপন*(online chat) করতেন। এই জালালাপনের সময়ই ম্যানিং, লামোর কাছে তার তথ্য-পাচারের ঘটনা সবিস্তারে স্বীকার করে। পরবর্তীতে লামো কর্তৃপক্ষের কাছে এই চ্যাটলগ জমা দেন। ধরা পড়েন ম্যানিং।

পাচারকারী কর্মকর্তা ম্যানিং কিছুটা ভারসাম্যহীন ছিল বলে তার ঊর্ধ্বতনদের কাছে জানা যায়। ম্যানিং এর অন্যান্য সমস্যার মধ্যে অন্যতম ছিল সামাজিকীকরণে তার ব্যর্থতা। আর দশজনের মত তিনি সবার সাথে মিশতে পারতেন না। শৈশব থেকে তিনি যেখানেই যেতেন, সেখানেই সমাজের সবার সাথে মিশে যেতে খুব বেগ পেতে হত তাকে। খাপ খাওয়াতে পারতেন না। খুব অল্প বয়সে তার বাব-মার বিবাহ বিচ্ছেদ হয়। বাবা মার্কিন আর মা ইউরোপিয়ান ( ওয়েলশ ) হওয়ায় বিবাহ বিচ্ছেদের পর ওক্লাহোমা ছেড়ে ওয়েলস এ চলে যান তিনি মার সাথে। স্কুলের বন্ধুদের মতেও তিনি খুব একরোখা ও জেদী ছিলেন। নিজের মতামতের বাইরে বাকি কারো কথা সে শুনতো না। ১৬ বছর বয়সে স্কুল ছেড়ে যুক্তরাষ্ট্র ফেরেন এবং সেনা বাহিনীতে যোগ দেন।

বন্ধুদের ভাষ্যমতে ম্যানিং (শব্দ অপ্রকাশিত)  ছিলেন। এ নিয়ে সেনাবাহিনীতে তাকে নিয়ে ব্যাপক ঠাট্টা তামাশা করা হত। একেবারেই খাপ খাওয়াতে পারছিলেন না কঠোর সেনা জীবনে। এর মধ্যে একদিন অপর এক সেনাসদস্যের সাথে মারামারিতে জড়িয়ে পড়েন এবং বাজেভাবে প্রতিপক্ষকে মুষ্ঠাঘাত করে শুইয়ে দেন। ঘটনার সাজা হিসেবে তার পদমর্যাদা কেড়ে নেয়া হয় এবং একধাপ পদাবনতির আদেশ দেয় কর্তৃপক্ষ। ভয়াবহ একাকীত্বে ভুগছিলেন ইরাকে নিযুক্ত এই কর্মকর্তা।

কম্পিউটারে লগ অনুযায়ী নিচের উক্তি গুলো ম্যানিং এর,

"একা একা বেঁচে আছি ...যেন বহুযুহ ধরে। আর সবার মত সাধারণ জীবন নিয়ে বাঁচতে চেয়েছিলাম। পরিবারের কাছ থেকে কোন সহযোগিতা নেই, ... ...... চাকরি হারাতে বসেছি...... অন্য কোন জীবিকার উপায়ও দেখি না...

কিছুই নেই আজ...... শুধু আছে এই ল্যাপ্টপটা, কিছু ঘুণে ধরা বই...... আর আছে পৃথিবীকে বলার মত বিরাট এক গল্প" (leaked documents)

ম্যানিং এর সাথে লামোর কথোপকথনের পুরোটাই তোলা আছে Wired ম্যাগাজিন এর এই প্রবন্ধে. তবে ম্যানিং প্রথম যখন পাচারের কথা লামোর কাছে স্বীকার করেন সে রাতের কথোপকথনের চুম্বক অংশ নিম্নরূপঃ

ম্যানিং: যদি classified নেটওয়ার্কে দিনরাত ২৪ ঘন্টা তোমার অবাধ প্রবেশাধিকার থাকে, .........যদি অবিশ্বাস্য, ভয়াবহ সব ঘটনা তুমি নিজে চোখে দেখতে পাও তাহলে কি করবে?

লামোঃ কি ঘটনা তার উপর নির্ভর করে...

ম্যানিং: যাক! সব উইকিলিক্‌সে চালান করে দিয়েছি...... সাদা চুলের এক পাগলাটে আগন্তুক বন্ধুর কাছে (এসাঞ্জ  ) // [to a crazy white-haired dude!] বিশাল এক কেলেঙ্কারি করে ফেলেছি আমি। নিজেই বিশ্বাস করতে পারছিনা কি সব কথা তোমার কাছে স্বীকার যাচ্ছি।

লামোঃ তো তোমার শেষ পরিকল্পনা কি ??

ম্যানিং জানি নাহ্‌ ! খোদাই জানেন এখন কি হবে। আশা রাখি, বিশ্ব জুড়ে আলোচনার ঝড় উঠবে। সব ব্যবস্থা পাল্টাবে... পরিবর্তন আসবে (reform)!

অথবা হয়ত কিছুই হবে না। হয়ত আমি বয়সে তরুণ, সাদাসিধে এক নির্বোধ মাত্র।

নির্বোধই বটে। আলোচনার ঝড় উঠেছে ঠিকই কিন্তু তা "উইকিলিক্‌স্‌" কে নিয়ে। ম্যানিং এর উল্লিখিত "পরিবর্তন" (reform) নিয়ে নয়। এসাঞ্জ কে  নিয়ে আজ গণমাধ্যমে খবর এর পর খবর। কিন্তু ম্যানিং এর খবর সেই আড়ম্বড়ে চাপা পড়ার অবস্থা।

এসব যদি বাদও দিই, সবচেয়ে দুঃখজনক ব্যাপার হল, ল্যাপ্টপের বাক্সে টুকরো টুকরো জালালাপনের ভিতর সামাজিকতা খুঁজে পাওয়া নিঃসঙ্গ ম্যানিং, অগাধ বিশ্বাসে যার কাছে সব স্বীকার করলো, সেই লামোই তাকে ধরিয়ে দেয় কিছুকাল পর।

যেভাবে তথ্য পাচার করতেন ম্যানিং :

CBS এর একটি রিপোর্ট অনুযায়ী, ব্যাপারটার শুরু হয় এক অর্থে ৯/১১-এর পরপর যুক্তরাষ্ট্রের ধী-সংক্রান্ত কিছু নীতিমালা পরিবর্তনের মধ্য দিয়ে। এসময় কেন্দ্র আর প্রান্তের ভিতর অপর্যাপ্ত ধী-বিনিময় (intelligence exchange) একটি বিশাল প্রতিবন্ধকতা হিসেবে চিহ্ণিত হয় এবং ধী-সংস্থাগুলোর(intelligence agency) ব্যর্থতার পিছনে এটি অন্যতম উপাদান হিসেবে সনাক্ত করা হয়। এসময় সকল ধী-কর্মকর্তাদের যেন বিভিন্ন তথ্যসূত্রে পর্যাপ্ত প্রবেশাধিকার থাকে সে উদ্দেশ্যে তাদের জন্য মোটাদাগে অনেক কিছু খুলে দেয়া হয়।

ইরাক যুদ্ধের সময়ও, সন্মুখ ঘাঁটিগুলোতে (forward operative base) যে কোন সময় জরুরী অবস্থার সৃষ্টি হতে পারে ---এই ধারণা থেকে সেখানে নিযুক্ত ধী-বিশ্লেষক কর্মকর্তাদের সর্বক্ষণ সবরকম তথ্য দিয়ে প্রস্তুত রাখা হয়। একেবারে সন্মুখ ঘাঁটিতে জরুরী অ-বস্থার জন্য এই জরুরী ব্য-বস্থা।

অন্তত ধী-বিনিময়ে প্রতিবন্ধকতার মত ছোট কারণে যেন পদাতিক সেনাদের জীবন ঝুঁকির সন্মুখীন না হয় সেজন্যই এখানে এই বিশেষ ব্যবস্থা। এই ফোকর কিছু দিনের ভেতরই ধরতে পারেন ম্যানিং। সন্মুখঘাঁটির জরুরী অবস্থা বিবেচনা করতে গিয়ে কর্তৃপক্ষ অনেক অপ্রয়োজনীয় তথ্যে অবাধ প্রবেশাধিকার দিয়ে ফেলে অজান্তেই। যেমন ইরাকের একজন ধী-বিশ্লেষক কর্মকর্তার, চীন-কোরিয়ার কোন দূতাবাসে কবে কি দূরালাপন হয়েছিল তা জানার কোন দরকার নেই। কিন্তু মোটাদাগে স-ব তথ্যে প্রবেশাধিকার পেয়ে যান ম্যানিং।

ছবিঃ ইরাকের "হ্যামার" সেনাঘাঁটি। এখান থেকেই সকল গোপন নথি হাতিয়ে নেন ম্যানিং

প্রাথমিক পাচার পদ্ধতি:

সুদূর ইরাকের মরুতে বসে শ্রেণীবদ্ধ তথ্যের বিশালভান্ডারে অবিরাম বিচরণ করতেন ২২ বছর বয়সী ম্যানিং। হাজার হাজার মাইল দূরের আমেরিকার তথ্য তার বেয়ে চলে আসে তার ল্যাপ্টপে। তন্ময় হয়ে সেগুলো দেখেন ম্যানিং।

ম্যানিং এর প্রথম কাজ ছিল সংগৃহীত ফাইলগুলো সংকেতায়িত করা(encrypt) যাতে বাইরের লোকেদের কাছে নথিটি দুর্বোধ্য হয়ে যায়। শুধুমাত্র কাঙ্খিত প্রাপকই এই সংকেত ভেদ করে এর পাঠোদ্ধার করতে পারবেন। পাঠোদ্ধারের জন্য প্রয়োজনীয় শব্দচাবি(passkey) শুধু ওই প্রাপকের হাতে থাকে। OpenSSL ও AES-256 পদ্ধতি ব্যবহার করে তিনি এই সংকেতায়নের কাজটি করতেন।

আসানজের সাথে ম্যানিং এর একটি আস্থার সম্পর্ক তৈরী হয়েছিল। নথি সংকেতায়ন হয়ে গেলে ম্যানিং এগুলো সার্ভারে উত্তোলন করতেন। আসান্‌জ যে কাজটি করতেন তা হলো, খুব অল্প সময়ের জন্য ক্ষণস্থায়ী কিছু সার্ভার সৃষ্টি করতেন। কোন্‌ জাল-ঠিকানায়(IP Address) কখন ( ঠিক কোন সময়ে ) এসব সার্ভারের আবির্ভাব ঘটবে তা ম্যানিং কে জানিয়ে রাখতেন তিনি।

নির্ধারিত সময়ে, নির্ধারিত জাল-ঠিকানার সার্ভারে ম্যানিং নিরাপদ-নথি-বিনিময়-রীতি অনুযায়ী ( SFTP > Secure File Transfer Protocol) ফাইল উত্তোলন করতেন। উত্তোলন শেষে আবার সুবিশাল আন্তর্জালের গর্ভে বিলীন হয়ে যেত এসব সার্ভার।

এখানে উল্লেখ্য যে, এই পদ্ধতিটি উইকিলিক্‌স-এ সর্বসাধারণের নথিজমা দেয়ার পদ্ধতি থেকে আলাদা। উইকিলিক্‌স্‌ সাইটের মাধ্যমে যে সকল নথি জমা পড়তো সেগুলো একটি লম্বা সারিতে(long queue) ঝুলে থাকতো বহুদিন। উৎসের সত্যতা যাচাই, সাংবাদিকদের দিয়ে সেই সব নথি ঝালাই ইত্যাদি নানান প্রত্রিয়াকরণের ভেতর দিয়ে যাবার পর হয়তো তা উইকিলিক্‌স এ জায়গা পেত। উইকিলিক্‌স এর পর্যাপ্ত জনসম্পদের অভাব ছিল। এত নথি সময়মত পড়ে কুলিয়ে ওঠা সম্ভব না। যেহেতু ম্যানিং একজন মূল্যবান ও নির্ভরযোগ্য সূত্র হিসেবে আসান্‌জের আস্থা পেয়েছিলেন এবং তার প্রদানকৃত শ্রেণীবদ্ধ-নথি বিশেষ গুরুত্বের দাবীদার, তাই ম্যানিং এর জন্য এই খাস ব্যবস্থা। আর মামুলিদের জন্য ওই লম্বা সারি।

বাড়তি নিরাপত্তার জন্য ম্যানিং পেঁয়াজ পথায়ক (The Onion Router বা tor) প্রযুক্তি ব্যবহার করতেন। এতে গোপন নথিটি সরাসরি সার্ভারে না গিয়ে অনেক হাত ঘুরে তারপর সার্ভারে উত্তোলিত হতো। সংশ্লিষ্ট সার্ভারের সাথে তার সরাসরি যোগাযোগ হয়েছে ----এই ব্যাপারটা ঢাকার জন্য বহু হাত ঘুরে এই অপ্রত্যক্ষ পদ্ধতিতে নথি উত্তোলন।

ম্যানিং এর সন্দেহঃ

এত কিছুর পরও ধরা পড়ার ব্যাপারে শঙ্কিত ছিলেন ম্যানিং।

প্রথমত) নেটওয়ার্কে সন্দেহজনক গতাগত তত্ত্বাবধান এর জন্য বিশেষ সফটওয়্যার থাকে। সেই রাডারে তার নথি উত্তোলন কার্যকলাপ ধরা পড়ছে কিনা তা একটি শঙ্কার বিষয়। এ জন্য একদিন তিনি স্থানীয় একজন নিরাপত্তা কর্মকর্তার (local NSA operative) কাছে যান। এই কর্মকর্তা তখন গভীর মনযোগে মুভি দেখতে মশগুল। ম্যানিং তাকে জিজ্ঞেস করেন,

-- নেটওয়ার্কে কোন সন্দেহজনক গতিবিধি কি দেখা যাচ্ছে ?

-- নাহ্‌, বলার মত তেমন কিছুই নেই।

খুব দায়সারাভাবে ম্যানিং এর প্রশ্নের জবাব দিয়ে আবার মুভিতে ডুবে যান NSA operative. নিশ্চিন্ত হন ম্যানিং। কারিগরী দিক দিয়ে এত সতর্কতা নেয়া ম্যানিং যে মারাত্মক ভুলটি করেছিলেন তা হলো সরলমনে লামোর কাছে সব স্বীকার। দোষ দেয়া যায় না অবশ্য। কেননা, লামো নিজেও একসময় উইকিলিক্‌স্‌ এর সক্রিয় সমর্থক ছিলেন। এখন তাকে উইকিলিক্‌স এর ঘোরবিরোধী হিসেবে দেখা গেলেও এককালে তিনিই উইকিলিক্‌স এ অনুদানের জন্য আন্তর্জালে নানান প্রচারণা চালান।

দ্বিতীয়ত) লামো তাকে বলেছিলেন যে, এইসব তথ্য পাচার হল গুপ্তচরবৃত্তির সমতুল। এতে ম্যানিং এর প্রতিক্রিয়া ছিল > "গুপ্তচরবৃত্তি ?? আমি কি অন্য কোন দেশের হয়ে কাজ করছি ? ইচ্ছে করলেই আমি বিপুল টাকা দিয়ে এগুলো রাশিয়া বা চীনের কাছে বিক্রি করতে পারতাম। ব্যাংকে পাহাড় জমিয়ে ফেলতে পারতাম।"

দ্বিতীয় পদ্ধতিঃ

পরের দিকে ম্যানিং আরো সতর্ক হয়ে ওঠেন। ইরাকে আসার সময় তিনি ব্যাগে করে বেশ কিছু লিখনযোগ্য তথ্য-চাকতি(writable discs) নিয়ে আসতেন। এগুলোর উপরে "লেডি গাগা" নামক সঙ্গীত শিল্পীর নাম লেখা থাকতো এবং কেউ এসব নিয়ে তেমন ঘাঁটাঘাঁটি করতো না। সরাসরি আন্তর্জালের মাধ্যমে উইকিলিক্‌স এ উত্তোলন না করে তিনি এসব তথ্য-চাকতিতে শ্রেণীবদ্ধ তথ্যগুলো মুদ্রণ করতেন। ছুটিতে যখন বস্টনে আসতেন তখন লেডি-গাগার সিডিগুলো আবার ব্যাগে করে ফেরৎ যেত আমেরিকায়। বস্টনে উইকিলিক্‌সের প্রতিনিধিদের কাছে সিডিগুলো তুলে দিতেন ম্যানিং। সুতরাং পরেরদিকে ফাঁসকৃত তথ্যগুলো পাচার করা হয়েছিল একেবারে সনাতনী কায়দায় --- আন্তর্জালের সকল ঝামেলা এড়িয়ে একদম "হাতে করে" পাচার --- হ্যাকিং সম্প্রদায়ে এই সনাতনী মাধ্যমকে অনেক সময় "Sneaker Net" বলা হয়।

ছবিঃ ইরাক থেকে ছুটিতে বস্টনে আসার সময় লেডি গাগা লেখা সিডিতে করে গোপন নথি নিয়ে আসতেন ম্যানিং

M.I.T হ্যাকার সংযোগ

এই ব্যাপারটাও লামোই প্রথমে ফাঁস করেন। ম্যানিং নিজে অত্যন্ত তীক্ষ্ণ বুদ্ধির অধিকারী ছিলেন এবং কম্পিউটারের নানান কারিগরী দিক নিয়ে বিশদ জ্ঞান রাখতেন। কিন্তু তারপরও, শ্রেণীবদ্ধ নথি সংকেতায়ন থেকে শুরু করে সেনা-নেটওয়ার্কের সকল নিরাপত্তা ব্যবস্থাকে ফাঁকি দিয়ে উইকিলিক্‌স এ তথ্য উত্তোলন ইত্যাদির জন্য তিনি বাইরে থেকে অন্য হ্যাকারদের সহায়তা পেয়েছিলেন। এদের মধ্যে অন্যতম ছিল বস্টন এলাকায় বসবাসকারী দুজন MIT ছাত্র। এরা উইকিলিক্‌সের হয়ে কাজ করতো এবং ম্যানিং কে বিভিন্ন সংকেতায়ন সফটওয়্যার দিয়ে সহায়তা করে। হ্যাকিং আন্ডারওয়ার্ল্ডে গতাগত থাকার কারণে এরা দুজনই লামোর facebook বন্ধু ছিলেন। এগুলো সবই অবশ্য লামোর দেয়া তথ্য অনুযায়ী। সি.এন.এন এর এই প্রতিবেদনে এই তথ্যগুলো পাওয়া যায়।

এখানে উল্লেখ্য যে,  ম্যানিং এর এককালীন সঙ্গী(partner) বস্টনে বাস করতো। এই সুবাদে বস্টনের (শব্দ অপ্রকাশিত) পরিমন্ডলে ম্যানিং এর গতাগত ছিল। এক বছর পর সঙ্গীর সাথে ছাড়াছাড়ি হয়ে গেলেও ততদিনে বস্টন বিশ্ববিদ্যালয় এবং MIT এর অনেকের সাথে তার পরিচয় হয়ে ওঠে।

ছবিঃ গ্রে হ্যাট হ্যাকার এইড্রিয়ান লামো

গ্লোব ম্যাগাজিন সম্প্রতি, ম্যানিং এর সাথে জড়িত ও MIT থেকে সদ্য স্নাতক লাভ করা একজন ছাত্রের সাক্ষাৎকার গ্রহণে সক্ষম হয়। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এই সাবেক ছাত্র জানান, ম্যানিং এর সাথে কম্পিউটার-নিরাপত্তা বিষয়ে তার অন্তত ১০টি মত মেইল চালাচালি হয়। কিন্তু ফাঁসের ঘটনার সাথে সরাসরি জড়িত থাকার কথা অস্বীকার করেন তিনি। উল্লেখ্য যে এই স্নাতক, লামোর উল্লিখিত দুজন হ্যাকার থেকে ভিন্ন।

বলাই বাহুল্য, MIT এ বিষয়ে কোন রকম সম্পৃক্ততা অস্বীকার করেছে এবং তাদের আনুষ্ঠানিক প্রতিক্রিয়া ছিল, "এই মুহুর্তে এ ব্যাপারে কোন মন্তব্য করতে পারছিনা। তবে ব্যাপারটা খতিয়ে দেখা হচ্ছে।" কারো কারো মতে সামান্য কিছু ইমেইল চালাচালির ঘটনাকে বেশী রঙচড়ানো হচ্ছে --- ইত্যাদি। MIT টেক ম্যাগাজিন এর অগাস্ট ৪ সংখ্যার ৮ম পাতার ৫ম কলামের ৫ম অনুচ্ছেদে দেখা যায়, সেনা তদন্তকারীরা সম্প্রতি বস্টন এলাকার এক বেসামরিক নাগরিককে বিপুল অর্থ দেয়ার প্রস্তাব দেয় যেন সে তাদের হয়ে বস্টনের Wikileaks চক্রে চরবৃত্তি করে। অর্থাৎ, তদন্তকারীরা বস্টনে ম্যানিং এর ঘনিষ্ঠদের কাজে লাগিয়ে উইকিলিক্‌স চক্রে ভেদ করার প্রয়াস চালিয়েছিল।

যা হোক, লেখার এই পর্যায়ে উইকিলিক্‌স্‌ এর ভিডিও অধ্যায়টি আলোচিত হবে। বলাই বাহুল্য, এটি রয়টার্স সাংবাদিক হত্যার সেই বিখ্যাত ভিডিওটি। কিন্তু তার আগে লামোর সাথে এই ভিডিও নিয়ে ম্যানিং এর কিছু কথোপকথন তুলে দিচ্ছি। যথারীতি, এই কথোপকথন Wired এর ওই প্রতিবেদন থেকে অনুদিত। কথোপকথনের বাঁকা অক্ষরে লেখা অংশগুলো আমার লেখা ... পাঠকদের বোঝার সুবিধার্থে ব্যাখ্যা হিসেবে দিয়েছি।

ম্যানিং: আমি ব্যাপারটা নিয়ে আরো ঘাঁটাঘাঁটি করি। যেমন ওই ভিডিওটা খুব ঠান্ডা মাথায় দেখি। প্রথম দেখায় তেমন কিছু মনে হয় না, ... একদল লোককে হেলিকপ্টার থেকে গুলি করা হচ্ছে...-- এই যা। কিন্তু কিছু ব্যাপারে আমার দারুণ খটকা লাগে... যেমন ভ্যান এর ব্যাপারটা (এটি শিশুভর্তি একটি ভ্যান ছিল যা ঘটনাক্রমে ওই এলাকায় ঢুকে পড়ে। গুলির পর সাংবাদিক ও তার সহযোগী মাটিতে লুটিয়ে পড়লে ভ্যানটি সাহায্যার্থে এগিয়ে আসে। পরে শিশুপূর্ণ ভ্যান গাড়িটিকেও আক্রমণ করা হয়)

তাছাড়া ওই ভিডিও ফাইলটা JAG অফিসারের ফোল্ডারে রাখা কেন তা নিয়েও সন্দেহ হয়। (JAG অফিসার হলেন সেনাবাহিনীর অভ্যন্তরে অপরাধ, মামলা ও আইনগত ব্যাপারগুলো দেখাশোনা করেন এমন কর্মকর্তা। সাংবাদিক হত্যা এবং শিশুভর্তি ভ্যানে গুলি বর্ষণ সেনা আইন অনুযায়ী বৈধ ছিল কিনা তা তদন্তের জন্য ফাইলটি JAG অফিসারের ফোল্ডারে রাখা ছিল। এই ফোল্ডারেই ম্যানিং ভিডিও ফাইলটি খুঁজে পান।)

তাই ব্যাপারটা আরো খতিয়ে দেখলাম। এক পর্যায়ে, আমি এর তারিখ ও GPS স্থানাঙ্ক খুঁজে বের করি।(সাদা কালো ভিডিও দেখে তা ইরাক না আফগানিস্থান বোঝা কষ্টকর। কিন্তু হেলিকপ্টার থেকে ধারণকৃত এসব ভিডিওতে তারিখ এবং GPS Coordinate বা স্থানাঙ্ক নির্দেশিত থাকে। এখান থেকেই ম্যানিং ধরতে পারেন জায়গাটা বাগদাদে ২০০৭ সালের)

এরপর আমি গুগলে গিয়ে ওই তারিখ আর জায়গা লিখে সার্চ দিলাম। তখনই এটা খুঁজে পাই > http://www.nytimes.com/2007/07/13/world/middleeast/13iraq.html । বুঝলাম কাহিনী কি। এর মাসখানেক পরই ভিডিওটা উইকিলিক্‌স কে চালান করে দেই। (উল্লিখিত লিঙ্কটি নিউইয়র্ক টাইমসে ঐ দিনে সাংবাদিক মারা যাবার খবর। গুগল সার্চের পর ওই লিঙ্কটি খুঁজে পান ম্যানিং)

উইকিলিক্‌সঃ ভিডিও অধ্যায়

ইউরোপ।

ম্যানিং এর পাঠানো ভিডিও পৌঁছে গেছে আসান্‌জের হাতে।

ছিমছাম একটি ক্যাফেতে মিলিত হন আসান্‌জ এবং সাংবাদিক র‌্যাফনসন।

আসান্‌জ তার ল্যাপ্টপ খোলেন। তিনি র‌্যাফন্সনকে বলেন, "এই জিনিসটা দেখতেই হবে তোমাকে"। ল্যাপটপের ভিডিওতে দেখা যায় রয়টার্স ফটোসাংবাদিক নামির-নূর-আল-দ্বীন ও তার সহযোগী সাঈদকে গুলি করা হচ্ছে হেলিকপ্টার থেকে। ভিডিওটি দেখেই র‌্যাফন্সন ধরতে পারেন যে এটি বিরাট আলোড়ন ফেলার মত কিছু। কালক্রমে প্রকাশ পায় ভিডিওটি যা আমরা সকলেই কম বেশী দেখেছি এতদিনে।

শুধু ভিডিও নয় আসান্‌জের হাতে তখন যুদ্ধ বিষয়ক অনেক তথ্য-উপাত্ত ।

এসব থেকে একটা ব্যাপার পরিষ্কার হয়ে ওঠে ---- অকারণে হত্যা।

অনালোচিত অপর দুটি ভিডিও ও এসাঞ্জ এর  বিশ্লেষণঃ

নামির-নূর-আল-দ্বীন এর ভিডিওটি সর্বাধিক আলোচিত হলেও অন্যান্য ভিডিও গুলো থেকেও যুদ্ধের ভয়াবহতা সম্পর্কে অনুরূপ ধারণা পাওয়া যায়। কপ্টারে আরোহী সেনাদের দৃষ্টিতে ভূমিস্থ মানব-জীবনের তুচ্ছতার ব্যাপারটা স্পষ্ট হয়ে ওঠে এই ভিডিও গুলোতে। এ সম্পর্কে আসান্‌জের বিশ্লেষণে যাওয়ার পূর্বে অনালোচিত দুটি বিশেষ ঘটনা উল্লেখ করছি।

উপরের ভিডিওটি( আপাতত শুধু ছবি ) -তে দেখা যায় একটি ভবন গুড়িয়ে দেয়ার জন্য একটি কপ্টার নিকটবর্তী এলাকায় ঘুরপাক খাচ্ছে। ভবনটিতে প্রতিপক্ষের তিনজন আছে বলে খবর পাওয়া যায় এবং অতঃপর ভবনটি গুড়িয়ে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। আঘাতহানার ঠিক পূর্ব মুহুর্তে বীক্ষণসীমার (focus) ভিতর ভবনের বাইরে একজন সাধারণ পথচারীর আবির্ভাব ঘটে। পথচারীটিকে পার হওয়ার জন্য কোন সময় না দিয়ে তাকে সহই ভবনটি গুড়িয়ে দেয়া হয়। পারাপারের জন্য ৩০ সেকেন্ডের অবকাশও পায়নি এক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিটি।

দ্বিতীয় ভিডিওটি (উপরের ছবি) একঝাঁক কপ্টারের গোলাগুলির ভিতর পড়া একজন গাড়িচালকের। অবস্থা বেগতিক দেখে, চালক গাড়ি রাস্তায় থামিয়ে, দরজা খুলে বের হয়। এরপর উপরদিকে তাকিয়ে আত্মসমর্পণের ভঙ্গিতে দুহাত তুলে কপ্টারগুলোর উদ্দেশ্যে গুলি থামানোর জন্য অনুরোধ করে। সব কিছু উপেক্ষা করে, সেকেন্ডের ব্যবধানেই গাড়িটি এবং পাশে দন্ডায়মান চালককে গুড়িয়ে দেয় সেনারা।

আসান্‌জ এর বিশ্লেষণ:

সর্বালোচিত রয়টার্স সাংবাদিক হত্যার ভিডিওটিতে সাহায্যের জন্য আবেদন করতে থাকা আহত ব্যক্তি সম্পর্কে (SVT কে দেয়া এক সাক্ষাৎকারে) আসান্‌জ বলেন, "যদি ধরেও নিই, ইরাকে যুদ্ধে যাওয়া যৌক্তিক ছিল, যদি ধরি ঐ এলাকায়, ঐ সময়ে সেনাদের অবস্থান নেয়া আবশ্যক ছিল, তারপরও চিৎকার করতে থাকা ওই আহত ব্যক্তিকে হত্যা করার কোন প্রয়োজন ছিল না যুক্তরাষ্ট্রের"। তবুও অপ্রয়োজনে কেন হত্যা করা তার বিশ্লেষণে আসান্‌জ দুটি কারণের কথা বলেন,

১) কারণ এটা হর্ষোদ্দীপক (because it's fun to kill ).

......দিনের পর দিন রুক্ষ সেনাজীবনে থাকতে থাকতে হত্যার ব্যাপারটা ......ছেলেখেলা হয়ে যায়

২) কারণ "কে কতগুলো বিনাশ করলো" এ নিয়ে ওরা পরে দর্প করে।

......( because they brag about it later )

.......দিনান্তে ভোজ-সমাবেশে টেবিল চাপড়ে বলা যায়, "হে! জানো আজকে অতগুলো... "। আরো একটি হত্যা মানে সৈনিকের বীরগাঁথায় আরো একটি পালক।

ICELAND এর সংসদ সদস্যা বিরগিটা, সাংবাদিক র‌্যাফন্সন এবং আসান্‌জ এরা সবাই ভিডিওগুলো নিয়ে অনেক বিশ্লেষণের পর এগুলো বিশ্বব্যাপি প্রকাশের সিদ্ধান্তে উপনীত হন। বিরগিটার ভাষায়, অন্তত অতীতের যুদ্ধাপরাধের সাক্ষী করে রাখা যায় যদি আজকের পৃথিবীকে, তবে পরের যুদ্ধটি হয়ত বন্ধ হবে।

ভিডিও প্রকাশের পর থেকেই বিশ্বব্যাপি মানুষ উইকিলিক্‌স কে চিনতে থাকে। ইউরোপের সীমিত গন্ডি পেরিয়ে, আন্তর্জাতিক মাত্রা পায় তারা। আরো রাশি রাশি শ্রেণীবদ্ধ নথি জমা হতে থাকে উইকিলিক্‌স এর কাছে। রাতারাতি খ্যাতি আর জমা পড়া রাশি রাশি নথির চাপে আরো দ্রুত আরো অনেক সত্য প্রকাশের পরিকল্পনা নেয় লিক্‌স্‌। কিন্তু জনসম্পদ মাত্রারিতিক্ত রকম সীমিত। সমস্ত শক্তি জড়ো করেও সব নথি প্রক্রিয়াকরণ সম্ভব নয়। তবুও উইকিলিক্‌স সর্ব শক্তি ব্যয়ের সিদ্ধান্ত নেয়।

চাপ সামলাতে লন্ডনে অবস্থিত একটি তদন্তভিত্তিক-সাংবাদিকতা ব্যুরোর(TBIJ) শরণাপন্ন হয় তারা। ২৫ জন সাংবাদিকের একটি দল জড়ো করে দিন রাত কাজ শুরু হয়। এরা বিশাল এই নথি-সংকলন প্রক্রিয়াকরণ শুরু করে। প্রতিবন্ধকতা আসে নানান দিক দিয়ে। ব্যুরোর প্রধান সম্পাদককে এই নিয়ে কাজ বন্ধ করার জন্য কে বা কারা ফোনে হুমকি দেয়। হুমকিতে সম্পাদকের সন্তানদের ক্ষতি করার কথা বলা হয়। প্রতিক্রিয়ায় সম্পাদক বলেন, "সবই বুঝলাম। কিন্তু এর মধ্যে ছেলেমেয়ের মত ব্যাপার টেনে আনার দরকার ছিল কি?"

উইকিলিক্‌স এর ভাঙন, OpenLeaks এর জন্ম

এবং একনায়ক এসাঞ্জ

smallএসাঞ্জ এর  বিরুদ্ধে আনা {শব্দ অপ্রকাশিত }অভিযোগগুলো সংগঠনটির ভেতর অসন্তোষ ও মিশ্র প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করে। নানান আভ্যন্তরীণ বিতর্কের সূচনা হয়। সংগঠনটি কিভাবে পরিচালিত হবে, কার্যক্রম কিভাবে আগানো উচিত ও ভবিষ্যৎ দিক নির্দেশনা কি তা নিয়ে বিবাদের সৃষ্টি হয়। এবং একপর্যায়ে কর্মীরা এসব আভ্যন্তরীণ বিবাদ নিয়ে গণমাধ্যমে কথা বলা শুরু করে। এতে বেশ ক্ষুণ্ণ হন এসাঞ্জ । কে এসব নিয়ে প্রথম গণমাধ্যমে কথা বলা শুরু করে তা বের করতে নানান জেরা শুরু করেন তিনি। ব্যাপারটার লৌহাস** (irony ) হল এই যে, তথ্যপাচার বা ফাঁসের ধারণার উপর যে উইকিলিক্‌স তৈরী, সেই উইকিলিক্‌সের ভেতরের কথা আবার কে ফাঁস করলো তা নিয়ে উঠে পড়ে লাগেন আসান্‌জ।

আসান্‌জের বিরুদ্ধে আনা অভিযোগের সূত্র ধরে এত দিনে গড়া সংগঠনটি এভাবে বিভেজায়িত হয়ে পড়বে, এটা বিশ্বাস করা কঠিন। নেপথ্যের কাহিনী হল এসাঞ্জ  ব্যাপারে সংগঠনের একটি অংশের সহকর্মীদের অসন্তোষ বহুদিন ধরেই দানা বাঁধছিল। এই অংশের মতামত অনুযায়ী, আসান্‌জের কার্যনীতি বরাবরই একনায়কসুলভ। তাদের মতে, স্বভাবগতভাবে মতান্ধ*(opinionated) হওয়াতে তিনি যেভাবে চান, সংগঠনটির পরিচালনা সেভাবেই হতে হবে। সহকর্মীদের ভিন্ন মতের ব্যাপারে আসান্‌জের শ্রদ্ধার অভাব ছিল বলে দাবী তাদের। প্রথমদিকে দর্শনগত সাদৃশ্যের কারণে এসব ছোট ব্যাপার হয়ত তেমন সমস্যা করেনি। কিন্তু এখন উইকিলিক্‌স এর ব্যপ্তি অনেক বড় হওয়াতে এই মতপার্থক্য গুলো প্রকট হয়ে ওঠে।

এই বিরোধী অংশের মূলে ছিলে জার্মান হ্যাকার ডমশাইট আর ইতিহাসবিদ হার্বার্ট। ডমশাইট চেয়েছিলেন, যুদ্ধের নথি প্রকাশের কাজ খুব ধীরে ও পরিকল্পিত ভাবে করতে। কারণ তিনি জানতেন সংগঠনটিতে মানব-সম্পদের বিশেষ অভাব রয়েছে। তার মতে, সব সম্পদ শুষে নিয়ে এভাবে হুড়োতাড়া করে একের পর এক যুদ্ধ-নথি প্রকাশের পদক্ষেপ নেবার আগে আরো ভাবা উচিত ছিল। এতে সাময়িক খ্যাতি বা পরিচিতি হয়তো পেয়েছে তারা কিন্তু মাশুল হিসেবে যৌন অভিযোগ, যাযাবরের মত পালিয়ে বেরানো এগুলো যোগ হয়েছে। একজন ব্যক্তিকে নিয়ে এত হৈ-হুল্লোড় ও তোলপাড় সংগঠনটির উপর বিরূপ প্রভাব ফেলেছে বলে ডমশাইটের ধারণা।

তার মতে, " সমষ্টিকে ভাঙ্গা কঠিন, কিন্তু একজন ব্যক্তিকে ভেঙ্গে ফেলা সহজ...."

যা হোক, হার্বার্টের সাথে তর্কাতর্কির মধ্য দিয়ে চূড়ান্ত ভাঙ্গন হয় উইকিলিক্‌স এর। অন্যতম সদস্য ডম-শাইট ও হার্বার্ট সহ অনেকে বেরিয়ে আসেন উইকিলিক্‌স থেকে। শুরু করেন OpenLeaks প্রকল্পের। মতাদর্শগত দিক দিয়ে উইকিলিক্‌সের এর খুব কাছাকাছি হলেও OpenLeaks চেষ্টা করে একজন সর্বময় নিয়ন্তার প্রভাব থেকে মুক্ত থেকে সবার সমন্বয়ে আরো ব্যপ্ত হয়ে কাজ করতে। পাঠক আপনি যেহেতু এই লাইনটি পড়ছেন সুতরাং ধারণা করছি পুরো লেখাটি পড়ে এ বিন্দুতে এসেছেন। দীর্ঘ লেখাটি পড়বার জন্য অনেক ধন্যবাদ। আমি আমার লেখার একদম শেষভাগে চলে এসেছি। উইকিলিক্‌সের এর পরের কাহিনী আমাদের সবারই জানা। এসাঞ্জ এর  আত্মুসমর্পণ, জামিনে তার মুক্তি ইত্যাদি সবই চোখের সামনে ঘটতে দেখছেন বিগত কয়েকদিনে। কিন্তু আজকের এই বিশালায়তন উইকিলিক্‌স এর যাত্রা কিভাবে শুরু হয়েছিল, তাদের দর্শন কি ছিল, সংগঠন হিসেবে তারা কিভাবে কার্য পরিচালনা করে, পাচারের নেপথ্যে কারা থাকেন এবং এই ব্যবস্থায় তথ্যের প্রবাহগুলো কি কি ইত্যাদি সম্পর্কে ধারণা দিতে পেরেছি বোধ করি ।
এখানে আসতে  পারেন > http://www.facebook.com/cy133r
আমি > http://www.facebook.com/II.45LAN.II
আল্লাহ হাফেয
টিউন সূত্র ঃ আমারব্লগ , সচলায়তন , মুক্তমনা , hack-forum.net,unix forum, about.com, ask.com

Level 2

আমি আলব্যাট আইন্সটাইন। বিশ্বের সর্ববৃহৎ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির সৌশল নেটওয়ার্ক - টেকটিউনস এ আমি 10 বছর 9 মাস যাবৎ যুক্ত আছি। টেকটিউনস আমি এ পর্যন্ত 22 টি টিউন ও 18 টি টিউমেন্ট করেছি। টেকটিউনসে আমার 1 ফলোয়ার আছে এবং আমি টেকটিউনসে 0 টিউনারকে ফলো করি।


টিউনস


আরও টিউনস


টিউনারের আরও টিউনস


টিউমেন্টস

Level 0

Nice .

অনেক অনেক সুন্দর টিউন। পরিশ্রম করেছেন বোঝায় যায়। অনেক তথ্য জানা গেলো। চমৎকার টিউনটির জন্য অনেক ধন্যবাদ।

ভালো লাগল। ধন্যবাদ।

প্রিয়তে রেখেদিলাম।

OMG!! কত বড় লিখেছেন !!!!

Welcome Everybody

Level 2

ওরে ব্বাপস্।

Level 0

MIT এর গুপন তত্ত্ব ফাঁস কারি । এবং MIT এর আত্মহত্যা নাটকের মাধ্যমে খুন হওয়া “এরন” এর বিস্তারিত কাহিনী আমি জানি এবং তার সাথে যোগাযোগ করার সৌভাগ্য ও হয়েছিল আমার ।
আপনার টিউন পড়ে আমারও ইচ্ছা হচ্ছে ঐ তত্ত্ব নিয়ে টিউন করার, টিউন টা অনেক বড় হবে এবং অনেক সময় লাগবে করতে কিন্তু আগামী ২ মাস আমার হাতে মুটেও সময় নাই ।

এর মধ্যে কেউ টিউন না করলে আমি ইনশাল্লাহ টিউন করবো…

Level 0

খুব সুন্দর একটি টিউন করেছেন।তবে ধন্যবাদ বলে ছোট করার ইচ্ছা নেই।আশাকরি ভবিষৎ এ এইরকম আরও চমৎকার কিছু পাব।

Level 2

খুবই চমৎকার লেখা।
পশ্চিমা বিশ্বর গুপ্ত সংগঠন এবং এদের ধ্বংসাত্বক, মানবতা বহির্ভূত কার্য্যকলাপকে জনসাধারণের সামনে উন্মোচনকারীরা খুব বেশিদিন বেচে থাকতে পারে না। গণতন্ত্র, বাক স্বাধীনতা, ব্যক্তি স্বাধীনতা ইত্যাদি নিয়ে পশ্চিমা বিশ্বের বেশ একটা এলিট ভাব আছে। কিন্তু তাদের ভালো মানুষীর অন্তরালে যে শয়তান ক্রমাগত কুকর্ম করে যাচ্ছে তার হাজারটা প্রমান আছে, সমস্যা হলো সেই চেহারা প্রকাশ হয়ে পরলেই তাদের ভালো মানুষ্যত্বর উপরে দাগ লেগে যায়। খর্ব হয় তৃতীয় বিশ্বের উপর তাদের প্রভুত্ব।