বায়োমেট্রিক সিম রেজিস্ট্রেশনঃ নিয়ন আলোয় বিদেশীর থাবা (পর্ব ১)

আমাদের দেশে পাসপোর্ট বা ড্রাইভিং লাইসেন্স, কিংবা জাতীয় পরিচয়পত্রের কথাতেও যদি আসি এখানে ব্যবহার করা হচ্ছে বায়োমেট্রিক পদ্ধতি, এখানে সরকারী সরাসরি হস্তক্ষেপ আছে ও ব্যাবস্তাপনা পদ্ধতি আছে, বর্তমানে হালের নতুনে সৃজনে আমরাএগিয়ে এসেছি বায়োমেট্রিক পদ্ধতিতে সিম রেজিস্ট্রেশনে।বিশ্ব এর দ্বিতীয় দেশ হিসেবে আমরা এই কাজ পরিচাল;অনা করছি, প্রথম দেশ হচ্ছে পাকিস্তান, এখন সিম এর  ব্যাবস্তাপনায় এই পদ্ধতি কেন ? এর মুল কারন হচ্ছে সাইবার ক্রাইম যেমন সিম ক্লোনিং বা কল স্পুফিং এর মত ঘটনাগুলো কে নিয়ন্ত্রন করা ও অপরাধি সহজে সনাক্ত করা।

এক্ষেত্রে আমরা হয়ত একটি বিষয় সম্পূর্ণ এড়িয়ে গেলাম, ক্ষমতার বিকেন্দ্রীকরণের হাওয়াতে মোবাইল ফোন অপারেটরের  হাতে চলে এসেছে আঙুলের ছাপ সংগ্রহ করার কিন্তু  এখানে কতটুকুই বা আছে সরকারী হস্তক্ষেপ বা এর জন্য কি কোন নিতিমালা আছে ?

মোবাইল ফোন অপারেটর একটি প্রতিষ্ঠান বাদে বাকি সবগুলো বিদেশি, তাই তারা আমাদের এই তথ্যই কতটুকু নিরাপত্তা দেবে।।, আর এই তথ্য তৃতীয় পক্ষের কাছে যাবেনা বা কোন গোয়েন্দা সংস্থা এই তথ্য নিয়ে নতুন কোন ধূম্রজাল তৈরি করবেনা এর নিশ্চয়তা কতটুকুই বা অপারেটর রা দিচ্ছে, হয়তো এটা চলে যেটেও পারে কোন মাফিয়া বা বিদেশী চক্রের কাছে। হয়তোবা এটা হতে পারে বড় কোন নকশার ছোট কোন অংশ, যদি পাকিস্তানের কথায় আসি, তাদের দেশে  এই পদ্ধতি প্রথম চালু করা হয়েছিল। কতটুকু তথ্য কার কাছে ছিল আপনি কি জানেন। এই রিপোর্ট এর মুল উদ্দেশ্য হচ্ছে, বায়োমেট্রিক পদ্ধতিতে সিম রেজিস্ট্রেশনে আমাদের বেক্তিগত তথ্য কর্পোরেট প্রতিষ্ঠান গুলোর কাছে কতটুকু নিরাপদ বা আদৌ নিরাপদ কিনা তার বিশ্লেষণ করার জন্য।

 

বায়োমেট্রিক পদ্ধতি কি ?

 

প্রচলিত ভাষায় যদি বলতে চাই তাহলে এই পদ্ধতি হচ্ছে এমন একটি পদ্ধতি যার সাহায্যে Biological Data  যেমন আঙুলের ছাপ, রেটিনা প্রিন্ট, হ্যান্ড / ফিট জিওমেট্রি, ছবি ইত্যাদি  সংগ্রহ করে কোন ডেটাবেইজে জমা রাখা।

এই পদ্ধতি ব্যবহার করে সত্যায়িত করে দেখা যায় আসল ব্যবহারকারীর তথ্য নাকি তা নকল। সাধারণত বৃহৎ সিস্টেম ম্যানেজ করার জন্য বা ডেটাবেইজের কাজে এই পদ্ধটির ব্যবহার করে তথ্য সুবিন্যস্ত করা যায়।

বায়োমেট্রিক অনেক ভাবেই পরিচালনা করা যায়। ডিএন এ, চোখ, ফেইস রিকগনিশন, সিগনেচার রিকগনিশন এমনকি Electorial Biometric এ বেক্তিত্ত এর উপর নির্ভর  করেও তথ্য সুনির্দিষ্ট ভাবে যাচাই করা যায়।  এই পদ্ধতির অনেক সুবিধা আছে, আঙুলের ছাপ প্রত্যেক বেক্তির আলাদা, বা যদি ধরি রেটিনা স্ক্যান এর দিকে, চোখ এর রেটিনার রড ও কোন কোষের বিন্যাস এর কারনে আইরিশ বা সামনের  চোখের পর্দার পেছনের কালো অংশটি সবার এক নয়, তাই বলা যায় এটি অনেকটাই নিরাপদ।

আবার যদি কি স্ট্রোক বা পাসওয়ার্ড রিকগনিশন এর প্রশ্নে  আসি প্রত্যেক বেক্তি  নির্দিষ্ট উপায় এ পাসওয়ার্ড বা কি স্ট্রোক টাইপ করেন, সেদিক দিয়েএকে অনেকটাই নিরাপদ বলে ধরে নেয়া যায়। লক্ষণীয় বিষয় বায়োমেট্রিক পদ্ধতিতে একটি নির্দিষ্ট এলগরিদম ব্যবহার কয়ার হয়, এই একই এলগরিদম ব্যবহার করে যে ফিঙ্গার প্রিন্ট বা রেটিনা স্ক্যান এর নকল তৈরি করা যাবেনা তার গ্যারান্টি কতটুকু ? বা যদি ধরি ডেটাবেজের

কথা ডেটাবেইজ ক্রাশ করলে বা করাপ্ট হলে বা যদি হ্যাক ই হয়ে যায় তাহলে এই তথ্য কতটুকুই বা নিরাপদ থাকবে বায়োমেট্রিক পদ্ধতিতে, তা কি চিন্তার বিষয় নয় ? আবার সমস্যা আছে সিনট্যাক্স ত্রুটি বা ডেটাবেইজ মিসকনফিগারেশনের কারনে ১০০০০ লোকের মধ্যে ১০ জনের তথ্য ভুল আসতে পারে, আর এটিয় হয়তো হতে পারে তার জীবনের জন্য অন্যতম হুমকি ? বা যদি আসি প্রযুক্তিগত দিকে ধরলাম যে সফটওয়্যার এর সাহায্যে এটা করা হবে, সেই প্রতিষ্ঠান কোন দুরভিসন্ধি হাসিলের উদ্দেশে ব্যাকডোর তৈরি করে সরকারের হাতে দিল আর তথ্য সব চলে আসল সেই প্রতিষ্ঠানের কাছে।

তাই বায়োমেট্রিক পদ্ধতি যে পুরো নিরাপদ বা পুরো অনিরাপদ এই নিয়ে আসলে মীমাংসাতে আসা  অনেকটাই বোকামি।

 

সিম রেজিস্ট্রেশনে বায়োমেট্রিক পদ্ধতি  :

 

এই পদ্ধতিতে যে বায়মেট্রিক পদ্ধতি ব্যবহার করা হয়েছে তা হল হালের ফিঙ্গারপ্রিন্ট পদ্ধতি, এটি যদিও নতুন নয়, পাসপোর্ট এ / জাতীয় আইডিতে কিংবা বিমানবন্দরেও এটি ব্যবহার করা হচ্ছে  এটি সিম রেজিস্ট্রেশনে ব্যবহার করার মুল কারন হচ্ছে অপরাধ দমন ও সহজে অপরাধী শনাক্ত করার কাজে। বাংলাদেশ এই পদ্ধতি ব্যবহারে দ্বিতীয় অবস্থানে আছে,

প্রথমে আছে পাকিস্তান , আগস্ট ২০১৪ সালে  Ministry of Interior উপজাতীয়, ও সন্ত্রাসী দের গতিবিধি নিয়ন্ত্রন এর জন্য এটি প্রস্তাব করে এবং প্রায় ১০০ মিলিয়ন গ্রাহক এর জন্য পদ্ধতি তৈরির পরে ২০১৫ সালের জানুয়ারি থেকে এটি কার্যকর করা হয়।

মূলত পাকিস্তানের অপারেটর প্রতিষ্ঠান নিয়ন্ত্রন করা হয় চায়না, কাতার, স্কটল্যান্ড থেকে বেশ কিছু প্রতিষ্ঠানের উপর আছে যুক্তরাস্ট্রের আংশিক মালিকানা, আপনারা  অবশ্যই জানেন এডওয়ার্ড স্নোডেন বা জুলিয়ান আসাঞ্জ এর গল্প, যুক্তরাষ্ট্র নিরাপত্তা প্রশ্নে  দেশের  সকল তথ্য, উপাত্ত ...একাউন্ট / ফোন / মেইলিং লিস্ট থেকে শুরু বেক্তিগত সকল তথ্য ধারন করে, যুক্তরাষ্ট্রে বেক্তি স্বাধীনতা সুধুইও তাদের সংবিধান এ, অথচ তারা নিয়ন্ত্রন করতে চায় জনগনের জীবন মান ও গতিবিধি - যার সংকেত ও প্রমান উভয় ই দিয়েছেন স্নোডেন। জুলিয়ান যেটা করেছেন তিনি দেখিয়েছেন যে যুক্তরাস্ট্র যুদ্ধের নামে মধ্যপ্রাচ্য ও ইউরেশিয়ায় যে দাপট রাখতে চেষ্টা করে তার চাক্ষুষ প্রমান।

যুদ্ধে আসলেই কাকে কিভাবে হত্যা করা হয় তার প্রকৃত অবস্থা। সুধু যুক্তরাষ্ট্র না, ইউরোপীয় ইউনিয়ন যুক্তরাজ্য বা ইসরায়েল এর কথায় যদি আসি, তারা চায় বিশ্ব এর একাংশের উওপ্র তাদের নিয়ন্ত্রন রাখতে, যখন তারাঅসফল  হয় তখন প্রয়োগ করা হয় নতুন ধনতান্ত্রিক পুঁজিবাদী পদ্ধতি। নতুন জাতীয় সমস্যার উদ্ভাবন হয়,তা সমাধানে এগিয়ে আসে বিদেশের অমুক প্রতিষ্ঠান, তারা থিকাদারি নিয়ে সরকারের চোখে সাদা কাপড় পরিয়ে সকল তথ্য পাচার করে পশ্চিমা বিশ্বের কাছে।আচ্ছা পাকিস্তানের কথাতেই যদি আসি, ওসামা বিন লাদের যে পাকিস্তানেই একটি বাড়িতে ছিল তা পাকিস্তান সরকার এর আগে যুক্তরাস্ট্র সরকার এর কাছে কিভাবে গেল ? আর লাদেন হত্যা পরিকল্পনা পাকিস্তান সরকার কে ছাড়াই সুচারুভাবে সম্পন্ন করল আমেরিকান সেনাবাহিনি। বা যদি আসি মধ্যপ্রাচ্যতে তেলের বাজারে গড়পড়তা হলে সেই গড়পড়তার মুনাফা যে ওয়ালস্ত্রিট এ যায় সেটাই বা কতজনের জানা ?

আর এসকল ছাড়াও হালের ঘন ঘন অমুক সন্ত্রাসী / জঙ্গি বাহিনি ইসলামের নামে অকারনে মানুষ হত্যা করছে সেগুলো তে যারা আছে সবাই কি মুসলিম ? নাকি ইহুদী / খিস্টান সবাই আছে ? আর তাদের অর্থের উৎসই বা কোথায় ?এসব বললে অনেক কিছু বলা হয়ে যায়। আমাদের মুল আলোচোনার বিষয় হল বাংলাদেশ এ বায়োমেট্রিক পদ্ধতি কতটকু নিরাপদ।

চলবে ...

রাশেদ হাসান
তথ্য নিরাপত্তা বিশ্লেষক  , CyberTrendz Incorporated

Level 2

আমি আলব্যাট আইন্সটাইন। বিশ্বের সর্ববৃহৎ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির সৌশল নেটওয়ার্ক - টেকটিউনস এ আমি 10 বছর 9 মাস যাবৎ যুক্ত আছি। টেকটিউনস আমি এ পর্যন্ত 22 টি টিউন ও 18 টি টিউমেন্ট করেছি। টেকটিউনসে আমার 1 ফলোয়ার আছে এবং আমি টেকটিউনসে 0 টিউনারকে ফলো করি।


টিউনস


আরও টিউনস


টিউনারের আরও টিউনস


টিউমেন্টস

ভাই আমি এখনো সিম রেজিষ্ট্রেশন করিনি. সত্যি কী সীম রেজিষ্ট্রেশন না করলে বন্ধ করে দিবে। একটু জানাবেন

আমি বলব , এই পদ্ধতি এখন ও অনেক বেশি অনিরাপদ , আপনি চিন্তা করুন … আপনি করেন নি আপান্র সিম বন্ধ করলে , এমন আরও হাজার সিম বন্ধ করা লাগবে , তাতে বাণিজ্যিক ক্ষতি কার হবে আপনার না কোম্পানিগুলোর … !!

জুলিয়ান আসাঞ্জ রা ঠিকই পথ বের করে নিবে।

সুন্দর লিখেছেন…. পড়ে ভাল লাগল

ধন্যবাদ।

বায়োমেট্রিক নিরাপদ না অনিরাপদ তা জানি না।তবে কেউ যদি বাংলাদেশীদের হ্যাক করতে চায় তাহলে ফিংগার প্রিন্ট ছাড়াই করতে পারবে। কারন টেকনলজীতে আমরা এখনো ১০০ বছর পেছনে আছি।আমেরিকা চাইলে আপনি সারাদিন ঘরে বসে কি করেন সেটার প্রতি মিনিটের আপডেট নিতে পারবে।মজার বিষয় হচ্ছে যখন ঐ টেকনলজি তাদের কাছে গুরুত্বহীন হয়ে পরবে তখন সেটি আমাদের দেশে নতুন টেকনলজী হিসেবে পরিচিতি পাবে। ভোটার আইডি করার সময় তো ফিংগার প্রিন্ট দিয়েছেন সেটা যে টাকার মত হ্যাক হয়ে দেশের বাইরে এতদিনে চলে যাইনি সেটার গ্যারান্টি কিভাবে দেবেন??অযথা কনফিউসড্ করা থেকে বিরত থাকুন।

যেদেশের কেন্দ্রিয় ব্যাংকের টাকা উধাও হয় সেদেশে এই পদ্ধতি যে কতটুকু অনিরাপদ তা এমনিতেই বুঝা যায়।

সরকারের ভেতরের অনেক লোক ই এই পদ্ধতি নিয়ে সন্দিহান । মানি আমেরিকা চাইলে অনেক কিছুই করতে পারে । এখানে প্রস্ন অন্য জায়গায় , সিম নিবন্ধনে ফিঙ্গারপ্রিন্ট সরাসরি সরকার নিচ্ছে না , নিচ্ছে মোবাইল অপারেটর … সামনের পর্ব গুলো তেই বিষয় গুলো পরিষ্কার হবে । আপনি কি জানেন এফ বি আই বাংলাদেশ এর কেন্দ্রীয় ডেটাবেইজ এর নিয়ন্ত্রন চেয়েছিল , সরকার তা দেয়নি … সরকার যখন তথ্য নেবে অন্য দেশ কে দেয়ার আগে তারা ১০০ বার ভাববে , প্রাউভেট কোম্পানি টাকার বিনিময়ে তা বিক্রি করে দেবে , আপনি যদি কোন অপারেটর কোম্পানির কর্মকর্তা হন তাহলে কিছু বলার নেই ..আপনি তাদের পক্ষেই কথা বলবেন . @ আবু সাঈদ

    আমি কোন অপারেটর কোম্পানির কর্মকর্তা নই।আপনি বলেছেন প্রাইভেট কোম্পানি টাকার বিনিময়ে ফিংগার প্রিন্ট ডেটা বিক্রি করে দিবে যদি এটাই আপনার টেনশন হয়ে থাকে তাহলে সরকারের কাছ থেকেই তথ্য পাচার হওয়ার সম্ভবনা ১০০%।বর্তমান ঘটনাগুলো তাই প্রমান করে।আর মনে রাখবেন আমরা কিন্ত আমাদের ফিংগার প্রিন্ট অগনতান্ত্রীক সরকারের হাতে তুলে দিয়ে ছিলাম।সেটা যে উনার সাথে আমেরিকায় পাচার হয়ে যায়নি তার গ্যারান্টি কে দেবে।আমেরিকা স্বার্থ ছাড়া কাউকে রাজনৈতিক আশ্রয় দেয় না। সব দিক থেকে আপনাকে একটি কথাই বলতে পারি আমরা পুরোপুরি অসহায় সরকারের পক্ষ থেকে এবং আন্তর্জাতিক মহল থেকে।আমরা এখন কাঠের পুতুল।

অনেক দিন পর টিটি তে পরার মত একটা টিউন পেলাম।

আমাদের সমস্যা হল, আমরা সরকার এর থেকে খুব তাড়াতাড়ি আস্থা হারিয়ে ফেলি !! সরকার চাইছে, আমাদের দেশটা যেন আফগানিস্তান বা পাকিস্তান এর মত না হয়ে যায়।আমাদের দেশে যে সরকার ই থাকুক না কেন, যতই তারা দুর্নীতিবাজ হোক না কেন, তাদের মধ্যে অবশ্যই দেশপ্রেম আছেই ।তারা কখনই চাইবে না , কোন কারনে বিদেশীদের জন্য আমাদের দেশেটা জঙ্গি রাষ্ট্রে পরিনত হোক । আমার মনে হয় , এই সম্পর্কে সরকার খুব তাড়াতাড়িই একটা নীতিমালা প্রনয়ন করবে । আর সরকার এতটাও বোকা নয় , তাদের নিশ্চয় কিছু না কিছু পরিকল্পনা আছেই । আস্থা রাখুন 🙂

আমিও এখনও করিনি