রুট ছাড়াই মনের মত করে কাস্টমাইজ করে নিন আপনার এন্ড্রয়েড ডিভাইস রুট হলেও করতে পারেন

বলা হয়ে থাকে এন্ড্রয়েড ফোনের সর্বোচ্চ এবং সেরা ফিচারগুলো ব্যবহার করতে হলে রুট করা অত্যাবশ্যক। রুট ব্যাতীত এন্ড্রয়েড ডিভাইস চালিয়ে মজা নেই, রুট ছড়া এন্ড্রয়েড চালানোর কোন মানে হয় না, রুট ছাড়া এন্ড্রয়েড ডিভাইস কাস্টমাইজ করা যায় না এরকম আরো হাজার কথা হয়ত আপনি শুনেছেন। এসব শোনে হয়ত অনেকবার ভেবেছনও রুট করার কথা।

কিন্তু সাধের নতুন ডিভাইসের ওয়ারেন্টি নষ্ট করে রুট করার সাহস আর কুলায় নি কিংবা ডিভাইসটির ক্ষতির কথা ভেবে অথবা ঝামেলার পদ্ধতি আপনার মাথায় ঢুকে নি বলে (যেমন আমার মাথায় ঢুকে নি😓) আপনি রুট-ফুটে যাননি। তো আপনার মনের মধ্যে গোপন একটা ক্ষোভ রয়ে গেছে যে আপনার ডিভাইসটিকে রুটেড ইউজারদের মত আকর্ষণীয় লুক দিতে পারেননি আর সেই সাথে রুটেড বন্ধুবান্ধবদের খোচা-খামচি তো আছেই।

যদি আপনার অবস্থা এমনি হয়ে থাকে তবে আর নেই চিন্তা। চলে আসুন টেকপাগলা। না তেমন কিছু না। আপনার অবস্থাও যদি তেমন হয়ে থাকে তবে এই টিউনটি আপনারই জন্য। অনেকের ধারণা যে রুট ছাড়া এন্ড্রয়েড ডিভাইস ইচ্ছামত কাস্টমাইজ করা যায় না।

যাদের এই ধারণা আছে তারা সম্পূর্ণ ভুল। হ্যাঁ রুটহীন ডিভাইসে আপনি হয়ত সবরকম কাস্টমাইজেশন করতে পারবেন না কিন্তু তারপরেও ননরুটেড একটি ডিভাইসে যে পরিমাণ কাস্টমাইজেশন করতে পারবেন তা অবাক করে দেওয়ার মত। চলুন ননরুটেড এন্ড্রয়েড ডিভাইস কাস্টমাইজ করার কিছু কলা-কানুন ওরফে নিয়ম-পদ্ধতি শিখে নেই।

হোম স্ক্রীন কাস্টমাইজেশন

এন্ড্রয়েডের জন্য হোম স্ক্রীন খুবই গুরুত্বপূর্ণ। ফোন অন করলে প্রথমেই যে স্ক্রীনটি আসে সেটাই হোমস্ক্রীন। যে কোন এন্ড্রয়েড ডিভাইসে সবচেয়ে বেশি দেখা হয় এই হোম স্ক্রীন (এইটাও কি বলতে হয়😒)। যে কোন এন্ড্রয়েড কাস্টমাইজেশন করার ক্ষেত্রে প্রথমেই এই হোম স্ক্রীন কাস্টমাইজ করার কথা মাথায় আসে।

হোম স্ক্রীন কাস্টমাইজ করার সবচেয়ে সহজ পদ্ধতি হল নতুন কোন একটা লাঞ্চার (Launcher) ইন্সটল করা। লাঞ্চার হল এমন একটি অ্যাপ যা হোম স্ক্রীনের লেআউট ম্যানেজ করে। অর্থাৎ কোন এপ কোথায় থাকবে, নোটিফিকেশন বার কোথায় থাকবে, নোটিফিকেশন বারে কি কি থাকবে, ডিফল্ট অ্যাপগুলো কিভাবে কোথায় থাকবে ইত্যাদি। প্রত্যেকটা লাঞ্চারের আলাদা লেআউট এবং ফাংশনালিটি থাকে। লাঞ্চারের আলাদা আলাদা ধরনও থাকে।

যেমন কোন লাঞ্চার ডিভাইসে স্পিড বাড়ানোর জন্য ডিজাইন করা, আবার কোন লাঞ্চার হয় অনেক ফিচার সমৃদ্ধ আর কোনটা হয় খুবই সাধারণ। প্রত্যেক ব্যক্তির পছন্দ আলাদা তাই কার কোন লাঞ্চার পছন্দ হয় এটা অনুমান করা অসম্ভব। লাঞ্চার ব্যবহার করার ক্ষেত্রে সাজেশন হল কোন একটি লাঞ্চার কমপক্ষে এক সপ্তাহ ব্যবহার করবেন তারপর সেটা ভাল না লাগলে অন্য কোন নতুন লাঞ্চার ইন্সটল করবেন। প্লে স্টোর এ সার্চ  করলে অসংখ্য লাঞ্চার পেয়ে যাবেন।

কয়েকটি জনপ্রিয় লাঞ্চার : ১) Nova Launcher, ২) Buzz Launcher, ৩) Launcher Pro, ৪) Launcher 8

আইকন প্যাক ইন্সটল

আইকন প্যাক এর কাস্টমাইজেশন মূলত হোমস্ক্রীন কাস্টমাইজেশনের মাঝেই পড়ে। হোমস্ক্রীন এবং সেই সাথে মেনু স্ক্রীনে কোন একটি অ্যাপের একই রকম আইকন দেখতে দেখতে আমরা একসময় বিরক্ত হয়ে যাই। কিন্তু তার পরও বাধ্য হয়ে সে একই আইকন বার বার দেখে যেতে হয়। চাইলে এই একঘেয়েমি থেকে মুক্তি পাওয়া সম্ভব।
এন্ড্রয়েডের জন্য থাকা আইকন প্যাক ইন্সটল করে নেওয়ার মাধ্যমেই সেটা সম্ভব। আইকন প্যাক ইন্সটল করলে হোমস্ক্রীন সহ মেনু স্ক্রিনের সকল অ্যাপের আইকন আপডেট হয়ে যাবে। পছন্দমত আইকন প্যাক ইন্সটল করে নিতে পারেন।
কিছু সেরা আইকন প্যাক : ১) Holo Icons, ২) Elegance, ৩) MIUI 5, ৪) DCikonz

লাইভ ওয়ালপ্যাপার ইন্সটল করা

এটিও হোম স্ক্রীন কাস্টমাইজেশনের ভেতরেই পড়ে। লাইভ ওয়ালপ্যাপারের সাথে আমরা প্রায় সবাই এখন পরিচিত। লাইভ ওয়ালপেপার সবসময়ই ডাইনামিক এবং আকর্ষনীয়। বাস্তবিক বা রিয়েলিস্টিক অনুভূতি প্রদানের ক্ষমতা সম্পন্ন এই ওয়ালপেপারগুলো সবসময়ই আনন্দায়ক। লাইভ ওয়ালপেপারগুলোর ব্যাটারি ইউজেসও অনেক কম। পারফর্মেন্সেও কোন প্রভাব ফেলে না। ইন্টারনেট এবং প্লে স্টোর থেকে অসংখ্য লাইভ ওয়ালপেপার ডাউনলোড করে নিতে পারবেন।

উইজেট ইন্সটল করা

উইজেট হল ছোট ছোট প্রয়োজনীয় প্রোগ্রাম। এগুলোর হোমস্ক্রীনে শো করে এবং এগুলোর মাধ্যমে বিভিন্ন তথ্য জানা যায়। যেমন আবহাওয়ার খবরের কোন উইজেট থেকে আবহাওয়ার খবর চব্বিশ ঘন্টা জানা যাবে, ঘড়ি থেকে সময় জানা যাবে, হার্টবিট রেট জানা যাবে এমন অনেক কিছু। প্লে স্টোর থেকে অনেক ধরনের উইজেট ডাউনলোড করে নেওয়া যাবে।

লক স্ক্রীন কাস্টমাইজেশন

হোমস্ক্রীনের পর এন্ড্রয়েড ডিভাইসের কাস্টমাইজ করার মত আরেকটি বিষয় হল লক স্ক্রীন। আপনার ননরুটেড এন্ড্রয়েড ডিভাইসের লক স্ক্রীনও কাস্টমাইজ করে নিতে পারবেন।

কেমন হয় যদি ফোনের লক বারবার খোলা ছাড়াই গুরুত্বপূর্ণ কিছু অ্যাপ আপনি ব্যবহার করতে পারেন?
এ কাজটি করার জন্যই আপনি ব্যবহার করতে পারবেন বিভিন্ন লক স্ক্রীন উইজেট। হোম স্ক্রীন উইজেটের মতই লক স্ক্রীন উইজেট খুবই সহজ ভাবে ব্যবহার করতে পারবেন।

আপনি হয়ত ভাবছেন স্ক্রীন লক থাকাবস্থায় যদি ডিভাইসের ফাংশন ইউস করাই যায় তাহলে লক করার কি গুরুত্ব রইল? লক স্ক্রীন উইজেট কিন্তু শুধুমাত্র এমন কোন এপ বা ফাংশন লক থাকাবস্থায় ব্যবহারের সুযোগ দিবে যেটা আপনি ব্যবহারের জন্য নির্বাচিত করবেন। বাকিসব অ্যাপ এবং ফাংশন লকাবস্থায় নিরাপদ থাকবে।
কিছু সেরা লক স্ক্রীন উইজেট : ১) DashClock, ২) Simple Dialer, ৩) Simple RSS

এছাড়াও হোম স্ক্রীন লাঞ্চারের মত লক স্ক্রীন লাচারও ইউস করতে পারেন। সেটা শুধুই লক স্ক্রীন চেঞ্জ করবে।

ব্যাটারী লাইফ কাস্টমাইজেশন

ব্যাটারী লাইফ সকল চার্জ নির্ভর ডিভাইসের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ। তো যেকোন এন্ড্রয়েড ডিভাইসের জন্য ব্যাটারী সেভ করা ফরজ কাজ। এখন ননরুটেড এন্ড্রয়েড ডিভাইসের জন্য একটা খারাপ খবর এবং একটা ভাল খবর আছে। খারাপ খবরটি হল, এন্ড্রয়েড 4.4 Kitkat থেকে সকল এন্ডয়েড এ ব্যাটারী সেভার এর সেরা অ্যাপগুলো ব্যবহারের জন্য রুট অপরিহার্য। ভাল খবর হল ওয়ি অ্যাপগুলো ছাড়াও আপনি ব্যাটারী সেভ করতে পারবেন।

ভাইব্রেশন বন্ধ করে দিন

যদিও উচ্চশব্দের রিংটোনের চেয়ে ভাইব্রেশন বেশি কার্যকরী কিন্তু ভাইব্রেশন ব্যাটারী বেশি ব্যবহার করে। কোন ডিভাইসকে ভাইব্রেশন করাতে হলে অতিরিক্ত বিদ্যুৎ ব্যবহার করে ভাইব্রেটরকে চালু করতে হয় ফলে ব্যাটারী বেশি ব্যবহার হয়।
ব্যাটারী বাচাতে ভাইব্রেশন বন্ধ রাখুন।

ব্লটওয়্যারগুলো ডিসেবল করে দিন

ব্লটওয়্যার হল এমন অ্যাপ বেশি র‍্যাম এবং সিপিউ ইউস না করলে সেগুলো গুরুত্বপূর্ণ হতে পারত। যেসব অ্যাপ হয়ত গুরুত্বপূর্ণ কিন্তু বেশি র‍্যাম এবং সিপিউ ব্যবহার করছে সেগুলো আনইন্সটল করে দিন এবং বিকল্প খুঁজে বের করুন যা কম র‍্যাম এবং সিপিউ খরচ করে।

সম্ভব হলে এয়ারপ্লেন মোড চালু রাখুন

এয়ারপ্লেন মোডে সকল প্রকার মোবাইল নেটওয়ার্ক সেবা বন্ধ থাকে। ২জি, ৩জি, ৪জি এবং যে কোন রকম ডাটা সংযোগ বন্ধ থাকার ফলে ব্যাটারী কম খরচ হয়।

সিকিউরিটি কাস্টমাইজেশন

এন্ড্রয়েড স্মার্টফোন এবং ট্যাবলেটগুলোর জন্য সিকিউরিটি সবসময়ই একটা বড় চিন্তার বিষয়। বিশেষত যখন ফোন বা ট্যাবলেটে গুরুত্বপূর্ণ তথ্য সংরক্ষিত থাকে তখন। নিরাপত্তার দিকে সবসময় খেয়াল রাখুন।

সবসময় স্ক্রীন লক ব্যবহার করুন

কোন কারণে ফোন বা ট্যাবলেট চুরি হয়ে গেলে পাসওয়ার্ড বা প্যাটার্ণই হল চুরের বিরুদ্ধে প্রথম অস্ত্র। সবস্ময়ই স্ক্রীন লক চালু রাখুন। দরকার হলে লক স্ক্রীন কাস্টমাইজ করে কোন অ্যাপ লক স্ক্রীনে এনে ব্যবহার করুন।

এন্টিভাইরাস ইন্সটল করুন

ম্যালওয়্যার এবং ভাইরাসও এন্ড্রয়েড ডিভাইসের জন্য বড় ধরনের হুমকি। ভাইরাস বা ম্যালওয়্যার গুরুত্বপূর্ণ কোন ডাটা নষ্ট করে দিতে পারে। তাই এখনই এন্টিভাইরাস ইন্সটল করে রাখুন।

এন্টি থেফট অ্যাপ চালু রাখুন

আপনার ডিভাইসে ডিফল্ট এন্টি থেফট অ্যাপ থাকলে তা চালু করে রাখুন ডিফল্ট অ্যাপ না থাকলে কোন একটি ভাল এন্টি থেফট অ্যাপ ইন্সটল করে নিন। কোন কারণে ডিভাইস চুরি হয়ে গেলে এন্টি থেফট অ্যাপের মাধ্যমে ডিভাইসের লোকেশন জানা সম্ভব এবং উদ্ধার করাও সম্ভব।

কমিউনিকেশন কাস্টমাইজ করে

এন্ড্রয়েডে ডিফল্ট যে এসএমএস অ্যাপ ইন্সটল করা থাকে সেটা খুবই সিম্পল এবং কম ফিচার সম্পন্ন। ভাল মানের একটি ফ্রী এসএমএস অ্যাপ ইন্সটল করুন। সেই সাথে ভালো একটি কীবোর্ড ইন্সটল করুন।

আপনার কাস্টমাইজ করা এন্ড্রয়েড ডিভাইস উপভোগ করুন

আপনি যদি এই টিউনের বর্ণনা মত আপনার ডিভাইসটি কাস্টমাইজ করে থাকেন তাহলে আশা করা যায় আপনার ডিভাইসটির লুক একদম পরিবর্তিত হয়ে গেছে। আপনার ডিভাইসটি হয়ে উঠেছে আরো আকর্ষণীয় এবং কম্ফোর্টেবল। এখন যদি কেউ আপনাকে বলে রুট ছাড়া এন্ড্রয়েড মানে ফাও, তাহলে তার কথা শেষ হওয়ার আগেই আপনার ফনটি বের করে একটি মুচকি হাসি দিয়ে ফোনটি সবাইকে দেখিয়ে দিন।

টিউনটি পড়ার জন্য ধন্যবাদ। রুটহীন কাস্টমাইজেশন আপনার ফোনের জন্য কি কাজে এসেছে সেটা টিউমেন্টে জানাতে ভুলবেন না যেন। ধন্যবাদ

Level 2

আমি হাসিবুর ইসলাম নাসিফ। বিশ্বের সর্ববৃহৎ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির সৌশল নেটওয়ার্ক - টেকটিউনস এ আমি 8 বছর 10 মাস যাবৎ যুক্ত আছি। টেকটিউনস আমি এ পর্যন্ত 43 টি টিউন ও 76 টি টিউমেন্ট করেছি। টেকটিউনসে আমার 3 ফলোয়ার আছে এবং আমি টেকটিউনসে 0 টিউনারকে ফলো করি।

বিষাদময় পৃথিবীতে আমি আনন্দ খুঁজে নিই সবকিছু থেকে। আর স্বপ্ন দেখি মহাকাশ ভেদ করে ভালোবাসা ছড়িয়ে দেবার। স্বপ্নচারী আমার স্বপ্নগুলোই বাঁচিয়ে রেখেছে আমাকে। হাত ধরে চলো স্বপ্ন দেখি একসাথে।


টিউনস


আরও টিউনস


টিউনারের আরও টিউনস


টিউমেন্টস