৩৬তম বিসিএস প্রিলিমিনারি পরীক্ষার প্রস্তুতিকৌশল : বাংলাদেশ বিষয়াবলী + আন্তর্জাতিক বিষয়াবলী

প্রথম ধন্যবাদ জানাই ৩০ তম বিসিএসে সম্মিলিত মেধাতালিকায় ১ম স্থান অধিকার প্রাপ্ত সুশান্ত পাল(বিসিএস কাস্টমস)কে যিনি তাঁর মেধা এবং মননশীলতার দ্বারা আগামীতে হতে যাওয়া অন্যতম বাংলাদেশের কাণ্ডারিদের আরও পরিনত হতে শিখিয়েছেন নানান অনুপ্রেরণা মুলক ও আড্ডামুলক কর্মসূচীর ফলপ্রসূ উদ্যোগের বাস্তবায়নের মাধ্যমে।

উনার করা সাম্প্রতিক টিউনটি ছিল আসন্ন ৩৬তম বিসিএস প্রিলিমিনারি পরীক্ষার প্রস্তুতিকৌশল বিষয়ক। আশা করি এটি প্রস্তুতি কৃত ছাত্র/ছাত্রীদের উপকারে আসবে এবং যারা প্রস্তুতি বিষয়ক বিষণ্ণ হীনতায় ভুগছেন তারা এই বাংলাদেশ বিষয়াবলী + আন্তর্জাতিক বিষয়াবলী সম্পর্কে ভাল ধারনা পাবেন বলে আশা করছি।

সুশান্ত পালের ভাষ্যমতে ...
আমি যখন বিসিএস পরীক্ষা দিচ্ছিলাম, তখন সবচাইতে কম পারতাম (প্রায় পারতাম না বললেই চলে) সাধারণ জ্ঞান। জানুয়ারির ৫ তারিখ পরীক্ষা ধরে নিয়ে প্রিলির জন্য হাতে মাত্র ১ মাস থাকলে আমি যা যা করতাম বলে আপাত ভাবনায় মনে হয়, তা তা লিখছি :

1. পুরো পেপার না পড়ে শুধু দরকারি হেডলাইনগুলিই পড়ে নিতাম। এ সময়ে কলাম আর আর্টিকেল পড়ার অতো সময় নেই।

2. বিভিন্ন গাইড থেকে প্রতিদিন অন্তত ৩-৪ সেট মডেল টেস্ট দিতাম।

3. জব সল্যুশন এবং প্রিলির ডাইজেস্ট থেকে বারবার আলোচনাসহ প্রশ্নোত্তরগুলি দেখতাম।

4. কারেন্ট অ্যাফেয়ার্স, কারেন্ট ওয়ার্ল্ড, কারেন্ট নিউজসহ এই ধরণের বিভিন্ন বইয়ের প্রিলির জন্য স্পেশাল সংখ্যাগুলি কিনে পড়ে ফেলতাম।

5. আমার যে বন্ধুরা সাধারণ জ্ঞানে আমার চাইতে ভাল, তাদের সাথে এটা নিয়ে কথা বলা অবশ্যই বন্ধ করে দিতাম।

6. কী কী পারি না, সেটা নিয়ে মাথাখারাপ না করে, অন্যান্য বিষয়গুলি ভাল করে দেখে নিতাম। বিসিএস পরীক্ষা সাধারণ জ্ঞানে পাণ্ডিত্যের খেলা নয়।

7. প্রতিদিন গড়ে ১৫ ঘণ্টা করে পড়াশোনা করলে ৩০ দিনের মধ্যে সাধারণ জ্ঞানের জন্য সময় দেয়া যায় খুব বেশি হলে ৭০ ঘণ্টা। আর এত কম সময়ে রেফারেন্স বই না পড়াটাই বেটার।

8. পড়ার সময় শুধু এটা মাথায় থাকত : যা পড়ছি, তা পরীক্ষার জন্য লাগবে কী লাগবে না। নিশ্চয়ই এখন জ্ঞানার্জনের সময় নয়।

9. যত বেশি বাদ দিয়ে পড়া যায়, ততই ভাল। এতে প্রয়োজনীয় জিনিসগুলি একাধিক পড়া যাবে।

10. ধীরে ধীরে পড়ে কিছু প্রয়োজনীয় জিনিস বাদ দিয়ে পড়ার চাইতে খুব দ্রুত বেশিরভাগ পড়ে নেয়াটা ভাল। এতে আত্মবিশ্বাস বাড়ে।

11. ৪টা রেফারেন্স বই পড়ার চাইতে ৩টা গাইড বইয়ের প্রশ্নোত্তরগুলি পড়ে ফেলাটা অনেকবেশি কাজের।

12. এখন বিসিএস প্রিলির সিলেবাস ধরে সাধারণ জ্ঞান পড়ার সময় নেই। যত বেশি সংখ্যক, তত বেশি প্রশ্নোত্তর প্রশ্নব্যাংক, গাইডবই, ডাইজেস্ট থেকে পড়ে নিতাম।

13. বারবার পড়লেও মনে থাকে না, এরকম অনেক কঠিন কঠিন প্রশ্ন আছে। সেগুলি মনে রাখার চেষ্টা না করে ওই একইসময়ে ৫টা কঠিন প্রশ্নের বদলে ২০টা সহজ প্রশ্ন মাথায় রাখার চেষ্টা করতাম। অহেতুক এবং অনর্থক জেদ পরীক্ষার প্রস্তুতি নষ্ট করে।

14. সাল, তারিখ, সংখ্যা, চুক্তি, নানান তত্ত্ব, সংস্থা, বৈঠক এসব বারবার পড়ে মনে রাখার চেষ্টা করতাম।

15. সাধারণ জ্ঞানের অনেক আগের পরীক্ষার কিছু প্রশ্ন সময়ের সাথে সাথে প্রাঙ্গিকতা হারিয়েছে। সেগুলি বাদ দিতাম।

16. গুগলে ইংরেজিতে কিংবা অভ্রতে বাংলায় টাইপ করে করে অনেক প্রশ্নেরই সঠিক উত্তর সহজে খুঁজে পাওয়া যায়। এতে অনেক সময় বাঁচে।

17. সাম্প্রতিক সময়ের বিভিন্ন ঘটনা, চুক্তি, বিভিন্ন পুরস্কার, নানান আন্তর্জাতিক এনটিটির নাম, সদরদপ্তর, বিভিন্ন স্থানের নাম, আন্তর্জাতিক যুদ্ধ ও চুক্তি ইত্যাদি সম্পর্কে ভালভাবে জেনে নিতে বিভিন্ন পেপারের আন্তর্জাতিক পাতাটিতে নিয়মিত চোখ বুলাতাম।

18. ম্যাপ মুখস্থ করা, ছড়া-গান-কবিতা-গল্প দিয়ে নানান ফালতু তথ্য মনে রাখা, বিশ্বের বিভিন্ন দেশের রাজধানী আর মুদ্রার নাম মুখস্থ করা, জোর করে হলেও সংবিধান কণ্ঠস্থ করা, অর্থনৈতিক সমীক্ষা থেকে রাজ্যের সংখ্যাযুক্ত জিনিসপত্র মাথায় বোঝাই করাসহ বোকা বোকা আত্মতৃপ্তিদায়ক পড়াশোনা করার সময় এখন নয়। “ফুল খেলবার দিন নয় অদ্য!”

19. চমকে যাওয়ার প্রশ্নে চমকে যাওয়ার অভ্যেস থেকে সরে আসতাম। সবাই যা পড়ছে, আমাকেও তা পড়তে হবে---এই ধারণা প্রতিযোগিতামূলক পরীক্ষার প্রস্তুতি নেয়ার ক্ষেত্রে বিশেষ ক্ষতিকর।

20. বাইরে ঘুরে ঘুরে ঘোরাঘুরি ভাল হয়, কিন্তু পড়াশোনা কম হয়। এই ৩০ দিনে বাসায় নিজের মতো করে না পড়ে যত ঘণ্টা বাইরে ঘোরা হবে, নিজের কফিনে ততটা পেরেক মারা হয়ে যাবে। এটা খুব ভালভাবে বুঝতে পারবেন রেজাল্ট বের হওয়ার পর!

আমি বিশ্বাস করি, খেলার রেজাল্ট হয় সবসময়ই খেলাশেষে; খেলার আগেও নয়, মাঝেও নয়। যতক্ষণ পর্যন্ত রেজাল্ট বের না হচ্ছে, ততক্ষণ পর্যন্ত আমি কারোর চাইতেই কোনো অংশে কম নই। প্রস্তুতি ভাল হলেই যেমন পাস করা যায় না, তেমনি প্রস্তুতি খারাপ হলেই ফেল করা যায় না। ভাল প্রস্তুতি নেয়া অপেক্ষা ভাল পরীক্ষা দেয়াটা বেশি গুরুত্বপূর্ণ। এই কয়দিনে আপনি পড়াশোনা করার সময়ে আপনার সর্বোচ্চ পরিশ্রমটা দিয়ে বুঝেশুনে প্রস্তুতি নিলে আপনি প্রিলিতে অবশ্যই পাস করে যাবেন। আগে কী পড়েননি, সেটা নয়; বরং এই ১ মাসে কী পড়বেন, সেটাই আপনার প্রিলিতে পাস কিংবা ফেল নির্ধারণ করে দেবে। সামনের ১ মাসের ইবাদতে আপনার জীবনের হিসেব লেখা হয়ে যাবে! গুড লাক!

- ধন্যবাদ 😎

আমাকে পাবেন যেথায়ঃ Facebook, Google+

Level 2

আমি অমিত সরকার অলক। Officer (HR & Admin), CGICL, AGI, Motijheel, Dhaka। বিশ্বের সর্ববৃহৎ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির সৌশল নেটওয়ার্ক - টেকটিউনস এ আমি 10 বছর 9 মাস যাবৎ যুক্ত আছি। টেকটিউনস আমি এ পর্যন্ত 9 টি টিউন ও 12 টি টিউমেন্ট করেছি। টেকটিউনসে আমার 1 ফলোয়ার আছে এবং আমি টেকটিউনসে 0 টিউনারকে ফলো করি।

Executive Officer, Human Resource & Administration at Financial Division, Anwar Group of Industries. Intern (Former), Group HR at Anwar Group of Industries. Pursued PGDHRM at Bangladesh Institute of Management. Studied MBA in HRM & BBA in Management from BSMRSTU. Previous Degrees obtained from the different educational institutes of Bangladesh. Published...


টিউনস


আরও টিউনস


টিউনারের আরও টিউনস


টিউমেন্টস