আসুন নিজেই বানাই চমৎকার বনসাই [পর্ব-০৯] :: চারা রোপণ ও বনসাই এর প্রাথমিক পরিচর্যা।

بِسْمِ اللَّهِ الرَّحْمَٰنِ الرَّحِيمِ

আসসালামু আলাইকুম

কেমন আছেন সবাই? আমি আল্লাহর রহমতে ভালো আছি।

ভেবেছিলাম এই ধারাবাহিক টিউনটা পরীক্ষার পর কন্টিনিউ করব।  কিন্তু যেতেতু কিছুটা সময় ফ্রিথাকি তাই ভাবলাম একটু এগিয়ে নিলে মন্দ হয় না। তাই সময় পেলে পরীক্ষার মাঝেও মাঝে মাঝে লিখব ইনসাল্লা। এমনিতেই আজকের টিউনটা একটু বড় হবে তাই বেশি কথা না বলে মূল কথায় আসি।

যেহেতু অনেকদিন পর নতুন পর্ব লিখছি তাই নিচে আগের পর্বের লিংক গুলো দিলাম। যাতে নতুনরা বুঝতে ও দেখতে পারেন।

আসুন নিজেই বানাই চমৎকার বনসাই [পর্ব-০১] :: বনসাই পরিচিতি

আসুন নিজেই বানাই চমৎকার বনসাই [পর্ব-০২] :: বনসাই এর প্রকারভেদ চমৎকার সব ছবি সহ

আসুন নিজেই বানাই চমৎকার বনসাই [পর্ব-০৩] :: বনসাই এর জন্য উপযুক্ত গাছ নির্বাচন

আসুন নিজেই বানাই চমৎকার বনসাই [পর্ব-০৪] :: টব সংগ্রহ ও টবের মাটি তৈরি

আসুন নিজেই বানাই চমৎকার বনসাই [পর্ব-০৫] :: বনসাই ট্রেনিং এর জন্য উদ্ভিদ উৎপাদন প্রক্রিয়া

আসুন নিজেই বানাই চমৎকার বনসাই [পর্ব-০৬] :: যেভাবে কাটিং হতে নতুন উদ্ভিদ তৈরি করবেন

আসুন নিজেই বানাই চমৎকার বনসাই [পর্ব-০৭] :: গ্রাফটিং এর মাধ্যমে বনসাই চারা উৎপাদন।

আসুন নিজেই বানাই চমৎকার বনসাই [পর্ব-০৮] :: প্রাকৃতিক উদ্ভিদ দ্বারা বনসাই তৈরি ও চারা উত্তলন প্রক্রিয়া।

আজ এই ধারাবাহীকের ৯ম পর্বে বনসাই এর চারা রোপন ও প্রাথমিক পরিচর্যা নিয়ে আলোচনা করব  তাহলে চলুন শুরু করা যাক...

চারা রোপন ও পরিচর্যা 

গত পর্বে চারা সংগ্রহের কথা বলেছিলাম  ও চারাকে দ্রুত পাত্রে লাগাতে বলেছিলাম। সাধারনত প্রথমবার পাত্রে চারা লাগানোর সময় মূলের বলের চেয়ে বেশি চওড়া পাত্রে চারা লাগানো ভালো। লক্ষ রাখবেন চারাটি যেন বেশি বাতাস ও বেসি সূর্যের আলোহতে দূরে থাকে। বর্তমানে বাংলাদেশে খুব গরম ও রোদ তাই চারাতে যথাসম্ভব কম রোদ যুক্ত স্থানে রাখার চেষ্টা করবেন। নয়তো চারা মরে যেতে পারে। চারাতে এমন ভাবে পানি দিবেন যাতে টবের মাটি ভেজা থাকে কিন্তু অতিরিক্ত পানিতে কাদার মত না হয়ে যায়। বর্তমানে খুব গরম তাই প্রতিদিন কয়েক বার বোতল স্প্রে দিয়ে পাতা গুলো ভিজিয়ে দেবেন।তবে গরম কমে গেলে পাতায় পানি দেবার দরকার নাই।

চারায় সাধারনত কয়েকমাসের মধ্যেই মূল গজাবে তখন চারা সূর্যের আলোতে রাখা যাবে। মূল গজানোর পর চারায় সার তরল করে প্রয়োগ করতে হবে (এ বিষয়ে একটা বিস্তারিত টিউন হবে ইনসাল্লাহ) 

চলুন দেখি বছরের কোন মাসে বনসাই এর কি পরিচর্যা করতে হবে।

জানুয়ারীঃ

এ সময় বনসাইকে পূর্ণ সুর্যের আলোতে রাখতে হবে।যেহেতু শীতকালে সুর্যের তেজ কম,সেহেতু বনসাইতে পানি দেবার বিষয়ে যত্নবান হবেন। এই মৌসুমে বনসাই একটু কম পানি পছন্দ করে, টবের মাটি ভেজা থাকলে পানি দেবেন না। কেবল চিরহরিৎ প্রজাতির গাছগুলোতে তরল সার দিন।যে সব গাছের পাতা ঝরে গেছে,তাতে কোনরকম সার না দেওয়াই ভাল।

ফ্রেব্রুয়ারিঃ

এ সময় বনসাইকে সূর্যালোকে রাখুন। পানি দেবার ব্যাপারে সতর্ক হোন।এই মাসের শেষের দিকে অনেক গাছে কচি পাতা বেরোনোর সময়। গাছে শোষক পোকা কিংবা ছত্রাকের আক্রমন থাকলে কচি ডগাগুলি বিকশিত হওয়ার আগেই নষ্ট হয়ে যাবে।কাজেই ফ্রেব্রুয়ারির ২য় সপ্তাহেই একবার কীট ও ছত্রাক নাশক ওষুধ স্প্রে করুণ। কোনো টবের মাটি বদলে দেবার দরকার হলে এই মাসের ২য় পক্ষে করুন।যেসব গাছে নতুন অংকুরগুলি মুখ খুলেছে,যেসব গাছে নিয়ম আনুযায়ী সার দিতে শুরু করুন।

মার্চঃ

এ মাসে রোদের তেজ বাড়ে। পানি দেবার পরিমান বাড়াতে থাকুন। মিনিয়েচার বনসাইগুলি সম্পর্কে সতর্ক হোন। বনসাইকে নতুন সার মাটিতে বসাবার কাজ এই মাসে পুরোদমে চলবে। ডাল পালা ছাড়তে শুরু করেছে এমন গাছগুলিকে হালকাভাবে ছাঁটুন। আর একবার কীট ও ছত্রাক নাশক প্রয়োগ করুণ।গাছকে নিয়মিত ভাবে ধুয়ে দেবার কাজ এ মাস থেকেই শুরু করুন।

এপ্রিলঃ

এপ্রিল মাসে রোদ্রের তেজ প্রখর হয়। বনসাইগুলি যাতে ক্ষতিগ্রস্থ না হয় তার জন্য ব্যবস্থা নিন। সকালে ও বিকালে গাছে পানি দিন। নিয়মিত বিকালের দিকে গাছগুলিকে ধুয়ে দিন।মিনিয়েচার বনসাই গুলোকে ভেজা বালির উপর রাখুন। সম্ভব হলে একবেলা রোদ্দুর পায় এমন জায়গায় সরিয়ে নিন। প্রচন্ড গ্রীষ্মে টবের মাটিকে ঠান্ডা রাখতে মস, খড়ের কুচি অথবা কচুরিপানা কুচি টবের উপর চাপান দিন। গাছের ডাল পালার বৃদ্ধি অনুসারে হাল্কা ছাঁটাছাঁটির কাজ চালিয়ে যান।সার প্রয়োগ অব্যাহত রাখুন।

মে ও জুনঃ

বেশি রোদ সইতে পারে না তেমন বনসাই গুলোকে প্রথমে অর্ধেক সময় রোদ পাবে এমন জায়গায় রাখুন। নিয়মিত সকালে ও বিকেলের দিকে গাছ গুলোকে পানি দিন। এ মাসে মাঝে মাঝে বিকেলের দিকে কালবৈশাখির ঝড় হয়, তাই গাছের যাতে কোনো ক্ষতি না হয় সে দিকে লক্ষ রাখুন। বোগেনভিলিয়ার ফুল শেষ হয়ে গিয়ে থাকলে ডালগুলি ভাল করে ছেঁটে দিন।প্রতি টবের মাটির উপর ৫-৬টি কেক-সার ফেলে দিন।প্রচন্ড গ্রীষ্মে টবের মাটিকে ঠান্ডা রাখতে চাপান দিন।প্রয়োজনবোধে শুধু কচি ডগা খুঁটে দেয়া ছাড়া এ মাসে গাছকে বেশি ছাঁটাছাঁটি না করাই ভালো।স্প্রে,সার ও তরল সারের প্রয়োগ চলতে থাকবে রুটিন অনুযায়ী।

জুলাইঃ

এসময় নিয়মিত বৃষ্টি হবে আর তাই ডালপালা দ্রুত বাড়বে,এ সময় প্রয়োজন মত পানি দিন আর সার প্রয়োগ বন্ধ করুন। বাড়তি ডাল গুলো কেটে ফেলুন আর যে ডাল গুলো রাখবেন সেগুলির ডগা ছেঁটে দিন।গাছের পাতা গুলো ছেঁটে দিন তবে পাতার বোটা গুলো যেনো গাছের সাথে থাকে

আগস্টঃ

এই মাসে গাছে পানি দেবার ব্যাপারে সতর্ক হোন। এ সময় তরল সার দেয়া উচিত নয়। বড় পাতা ওয়ালা গাছের পাতা প্রথম পর্যায়ে ছেঁটে দেবার পর যদি নতুন পাতা গুলি পরিণত হয়ে থাকে তাহলে ২য় পর্যায়ে পুনরায় সমস্ত পাতা ছেঁটে দিন এবং ডাল গুলিও ছেঁটে দিন।এই মৌসুমে বিভিন্ন কারণে টবের মাটিতে পোকামাকড় ও শিকড়ে ছত্রাকের প্রাদুর্ভাব হয়।তাই প্রত্যেক টবে যথাযথ মাত্রায় ঔষধ প্রয়োগ করুণ এবং ছত্রাক নাশক ঔষধ পানিতে গুলে টবের মাটিতে প্রয়োগ করুণ। চারাগাছকে বড় টবে তুলুন।

সেপ্টেম্বরঃ

এখন শেষ বর্ষা,বৃষ্টি অনিয়মত। গাছে পানি দেবার ব্যাপারে সতর্ক হোন। বর্ষার রেশ যদি ভালো মত থাকে তো তৃতীয় পর্যায়ে (সেপ্টেম্বরের প্রথম পক্ষে)ডগা,বাড়তি ডাল পালা ও পাতা ছেঁটে ফেলুন। সেপ্টেম্বরের ২য় পক্ষ থেকে টবের মাটি বদলে দেবার কাজটি করুন। যে সব টবে নতুন সার মাটি দেয়া হয়নি, সে সব টবে তরল ও স্প্রে -সার প্রয়োগ করুন।

অক্টোবর ও নভেম্বরঃ

টবের মাটি বদলে দেবার কাজ প্রথম পক্ষের মধ্যে শেষ করুন। কেবল ভঙ্গিমা রক্ষার স্বার্থে যেটুকু ছাঁটাছাঁটি প্রয়োজন করুন। স্প্রে সার-কেক ও পুরোদমে প্রয়োগ করতে থাকুন। গাছে কীট ও ছত্রাক নাশক স্প্রে করুন। ১০ দিন পর ২য় বার স্প্রে করুন। শীতে যে সব গাছে ফুল ফুটবে, সে সব গাছে নাইট্রোজেন প্রধান সারের প্রয়োগ কমিয়ে দিন। ফসফেট ও পটাশের প্রয়োগ বাড়ান। রুটিন অনুসারে তিন রকমের সার প্রয়োগ করুন।

ডিসেম্বরঃ

যে সকল গাছের পাতা মরে যায় সে সমস্ত গাছগুলিতে সমস্ত রকম সারের প্রয়োগ বন্ধ করুন। চিরহরিৎ ও যেসব গাছে শীতকালে পাতা ঝরে না, সেই সব গাছে মাসে দু’বার তরল সার দিন। ফুটন্ত গাছেও সার প্রয়োগ বন্ধ রাখুন।

প্রাথমিক ছাটাই করনঃ

অনেকেই হয়ত ভাবছেন ছাটাইকরন কিভাবে করবেন। লক্ষ করুন, চারা যত বড় অবস্থায় লাগাবেন তার মূল ও নতুন পাতা বা শাখা গজাতে তত বেশি সময় লাগবে। নতুন পাতা গজালে বুঝতে পাবেন এতে নতুন মূল ও গজেছে। আপনার চারাটি কয়েক মাস পর যখন নতুন পরিবেশের সাথে খাপখবে তখন আপরি চারাটি দ্বিতীয় পাত্রে স্হানান্তর করতে পারেন। তবে লক্ষ রাখবেন দ্বিতীয় পাত্রটির গভিরতা যেন প্রথম পাত্রের চেয়ে কম হয়।

কারনঃ

বনসাই এর মূল বিষয়টাই হল বামন উদ্ভিদ। যেহেতু স্বাবাভিক চারাকে বামন অবস্থায় রাখতে হবে তাই এর মূল ছাটাই করন জরুরি।  এ কারনেই দ্বিতীয় পাত্র প্রথমটির থেকে ছোট হবে।

বনসাই এর মূল বিষয়টাই হল ছাটাই করন।  এটা বেশ কয়েকবারে করতে হবে। আপাতত প্রাথমিক ছাটাইকরন নিয়ে আলোচনা হোক। মূল ও শাখা ছাটাই এর জন্য নিচের যন্ত্র গুলো থাকলে ভালো।  না থাকলে কেচি ও ধারালো সার্জিক্যাল ব্লেড ব্যবহার করবেন।

বনসাই এর জন্য ব্যবহৃত কাটার

প্রথমেই গাছটি প্রথম পাত্র হতে তুলে এর থেকে এর সব মূল গুলো যতটুকু লম্বা তার অর্ধেক কেটে বাদ দিতে হবে। মূলে জট থাকলে তা কাঠির সাহায্যে সাবধানে ছাড়িয়ে নিতে হবে। তারপর মূল কাটা হয়ে গেলে মূলের বলয়আকার অংশ ভিতরের দিকে মূরিয়ে দেবার চেষ্টা করুন ও ওভাবেই দ্বিতীয় পাত্রে চারা লাগান।

মূল কাটার ফলে গাছের খাদ্য গ্রহন কমে যাবে তাই এই বিষয়টা স্টাবল করার জন্য আপনার কাঙ্খিত ডিজাইনের বাহিরের অপ্রয়োজনীয় কিছু শাখা প্রশাখা ছাটাই করে দিবেন।

এর পরে পরবর্তি বছরে গাছটি সুস্থ অবস্থায় থাকলে আপনি এটিকে দ্বিতীয় বার মূল ও শাখা ছাটাই করে মূল বনসাই পাত্রে লাগাতে পারবেন। এ বিষয়টা নিয়ে পরে আলোচনা হবে ইনসাআল্লাহ।

কারও বুঝতে সমস্যা হলে অবশ্যই আমাকে জানাবেন। ভালো থাকুন।

বিদ্রঃ বনসাই নিয়ে একটা ফেসবুক গ্রুপ করতে চাচ্ছি যেখানে আপনাদের বনসাই বিষয়ে অভিঞ্জতা, সমস্যা, মতামত, রোগবালাই সহ অন্যান্ন বিষয় নিয়ে সহজে আলোচনা করা যাবে। আপনারা আগ্রহী হলে আমাকে জানাবেন প্লিজ।

আর হ্য অবশ্যই কপিপেস্ট বর্জন করুন

ফেসবুকে আমাকে পাবেন এখানে

Level 0

আমি শাকিল আহম্মেদ শিমুল। বিশ্বের সর্ববৃহৎ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির সৌশল নেটওয়ার্ক - টেকটিউনস এ আমি 11 বছর 10 মাস যাবৎ যুক্ত আছি। টেকটিউনস আমি এ পর্যন্ত 46 টি টিউন ও 122 টি টিউমেন্ট করেছি। টেকটিউনসে আমার 1 ফলোয়ার আছে এবং আমি টেকটিউনসে 0 টিউনারকে ফলো করি।

আমি শাকিল আহম্মেদ শিমুল। আমি খুব সহজ এবং তার চেয়েও বেশী সাধারন একজন মানুষ ।..তবে মনের ভুলে মাঝে মাঝে কিছু অসাধারন কাজ অবস্য করে ফেলি। তবে তা কি ভাবে করি নিজেই জানিনা। নতুন প্রযুক্তির প্রতি আমার প্রবল আকর্ষন নবাগত যে কোন প্রযুক্তিই ভালোলাগে তাই সারা জীবন কাটাতে চাই প্রযুক্তির সাথে।...


টিউনস


আরও টিউনস


টিউনারের আরও টিউনস


টিউমেন্টস