আসুন নিজেই বানাই চমৎকার বনসাই [পর্ব-১০] :: বনসাই এর মূল পরিচর্যা, পানি, সার প্রয়োগ ও পতঙ্গ নিয়ন্ত্রন সম্পর্কে বিস্তারিত।

بِسْمِ اللَّهِ الرَّحْمَٰنِ الرَّحِيمِ

আসসালামু আলাইকুম

সবাইকে পবিত্র মাহে রমজানের শুভেচ্ছা।

কেমন আছেন সবাই? আমি আল্লাহর রহমতে ভালো আছি।

ভেবেছিলাম এই ধারাবাহিক টিউনটা পরীক্ষার পর কন্টিনিউ করব। সেকারনেই আবারও আপনাদের মাঝে ফিরে আসা। আল্লাহর রহমতে লিখিত পরীক্ষা বেশ ভালো হয়েছে প্রাকটিক্যাল দেরি আছে কিছুদিন। বকিটা ফলাফলের সময় বোঝা যাবে। সবার কাছে প্রথমেই দুআ চাইবো যাতে রেজাল্ট ভালো হয়।

যেহেতু অনেকদিন পর নতুন পর্ব লিখছি তাই নিচে আগের পর্বের লিংক গুলো দিলাম। যাতে নতুনরা বুঝতে ও দেখতে পারেন।

আসুন নিজেই বানাই চমৎকার বনসাই [পর্ব-০১] :: বনসাই পরিচিতি

আসুন নিজেই বানাই চমৎকার বনসাই [পর্ব-০২] :: বনসাই এর প্রকারভেদ চমৎকার সব ছবি সহ

আসুন নিজেই বানাই চমৎকার বনসাই [পর্ব-০৩] :: বনসাই এর জন্য উপযুক্ত গাছ নির্বাচন

আসুন নিজেই বানাই চমৎকার বনসাই [পর্ব-০৪] :: টব সংগ্রহ ও টবের মাটি তৈরি

আসুন নিজেই বানাই চমৎকার বনসাই [পর্ব-০৫] :: বনসাই ট্রেনিং এর জন্য উদ্ভিদ উৎপাদন প্রক্রিয়া

আসুন নিজেই বানাই চমৎকার বনসাই [পর্ব-০৬] :: যেভাবে কাটিং হতে নতুন উদ্ভিদ তৈরি করবেন

আসুন নিজেই বানাই চমৎকার বনসাই [পর্ব-০৭] :: গ্রাফটিং এর মাধ্যমে বনসাই চারা উৎপাদন।

আসুন নিজেই বানাই চমৎকার বনসাই [পর্ব-০৮] :: প্রাকৃতিক উদ্ভিদ দ্বারা বনসাই তৈরি ও চারা উত্তলন প্রক্রিয়া।

আসুন নিজেই বানাই চমৎকার বনসাই [পর্ব-০৯] :: চারা রোপণ ও বনসাই এর প্রাথমিক পরিচর্যা।

আজ এই ধারাবাহীকের ১০ম পর্বে বনসাই এর চারা রোপন এর পর বনসাই এর মূল পরিচর্যা, পানি, সার প্রয়োগ ও পতঙ্গ নিয়ন্ত্রন সম্পর্কে বিস্তারিত ভাবে  আলোচনা করব  তাহলে চলুন শুরু করা যাক...

বনসাই এর মূল যত্নকে আমরা মুলত চারটি ভাগে ভাগ করে থাকি। মূলত সকল উদ্ভিদের ক্ষেত্রেই এই চারটি বিষয় গুরুত্বপূর্ন। তবুও যেহেতু বনসাইকে নিয়ন্ত্রিত উপায়ে লালন করা হয় তাই এক্ষেত্রে বিষয়গুলোর প্রতি একটু বেশি নজর দিতে হয়। বিষয় গুলো হল-

  • বনসাই রাখার উপযুক্ত স্থান নির্বাচন।
  • পানি প্রয়োগ।
  • সার প্রয়োগ।
  • ক্ষতিকর কিটপতঙ্গ ও রোগ নিয়ন্ত্রন।

এছারাও বিভিন্ন প্রতিকূল পরিবেশে অবস্থা বুঝে ব্যবস্থা নিতে হবে।

 

বনসাই রাখার উপযুক্ত স্থান নির্বাচন।

সাধারন ভাবেই আমরা সবাই বনসাই উদ্ভিদকে ঘরে রাখতে পছন্দ করি তবে একটা কথা মনেরাখা জরুরি তাহল “বন্যরা বনে সুন্দর শিশুরা মায়ের কোলে”। সত্যিকার অর্থে বনসাই এর ক্ষেত্রেও কথাটা প্রযোজ্য বনসাই উদ্ভিদ সাধারনত বাহিরের খোলামেলা পরিবেশেই ভালো গঠন সম্পন্ন ও সুস্থ সবল হয়ে থাকে। তবে বনসাই যেহেুতু সৌখিন উদ্ভিদ তাই আমরা একে ঘরে রাখাটাই বেশি পছন্দ করি সেকারনেই নিচে ঘরে রাখা বনসাই এর জত্নের কিছু বিষয় তুলে ধরলাম। এ বিষয়গুলোর দিকে লক্ষরাখলে আশাকরি ঘরের বনসাই ও সুন্দর আর সতেজ থাকবে।

  • বনসাই যাতে প্রচুর তাপ, এসির প্রবল ঠান্ডা বাতাস ও স্যাতস্যাতে পরিবেশ হতে দূরে থাকে সেদিকে খেয়াল রাখবেন।
  • লক্ষ রাখবেন বনসাই যেন সর্বাধিক আলো পায় তবে অতিরিক্ত তাপে ক্ষতি না হয়।
  • মেঘলা আবহাওয়াতে বনসাই যেন বাহিরের প্রাকৃতিক ঠান্ডা বাতাস পায় আবার রোদের আলো ও এমন স্থানে বনসই রাখা ভালো। সেটা হতে পারে আপনার জানালার ধারে বা বেলকুনিতে।
  • প্রচন্ড গরমের বিকেলে বনসাই যাতে প্রখর রোদরে আলো না যায় সেজন্য জানালাতে বা বেলকুনিতে কাপরের পর্দাদিয়ে বনসাই এর জন্য ছায়াযুক্ত স্থান তৈরি করুন।
  • রোদের আলো দেয়ালে প্রতিফলিত হয়ে বনসাইতে উত্তপ্ত করতে পারে তাই যে দেয়াল আলো প্রতিফলিত করতে পারে এমন দেয়ালের কাছে বনসাই রাখবেন না।
  • সব সময় মৃদু বাতাস চলাচল করে এমন জায়গাতে বনসাই রাখার চেষ্টা করবেন। মৃদু বাতাস বনসাই এর জন্য খুব উপযোগী।
  • বাড়ির কোন পালিত পশু প্রানী যাতে বনসাই এর ক্ষতি না করতে পারে সেদিকে খেয়াল রাখুন।

 

পানি সেচ  বনসাই এর পাত্র সাধারনত ছোট হয় আর এতে মাটিও কম থাকে তাই কম পাটির পনি ধরে রাখার ক্ষমতাও কম হয়। তাই বনসাইেএ পানি দেবার সময় বিষেষ ভাবে সতর্ক থাকবেন ও নিয়মিত পানি সেচ দেবেন। পনি সেচের জন্য কিছু নির্দেশনা নিচে দেয়া হল।

  • টবের মাটি যাতে কোন ভাবেই শুকিয়ে না যায় সেদিকে খেয়াল রেখে পানি সেচ দেবেন।
  • বর্তমানে খুব গরম, এমন আবহাওয়াতে দিনে দুইবার পানি দেবেন। সকালে াাপনি ঘুম থেকে উঠে একবার আর পড়ন্ত বিকালে একবার।
  • আবহাওয়া ঠান্ডা থাকলে বিকালে একবার পানি দিলেই হবে।
  • যেসব গাছের পাতা ঝড়ে যায় তাতের ক্ষেত্রে পানি বেশি লাগে। এ বিষয়টা বিশেষ ভাবে মাথায় রাখবেন।
  • মাটি তে পানির পরিমান খুব বেশি রাখবেন না এত মাটিতে অক্সিজেন এর অভাবে গাছ মারা যাবে। সবসময় পরিমানমত পনি সেচ দেবেন।
  • পনি দেবার জন্য ঝাঝড়ি ও পাতায় পানি দেবার জন্য বোতল স্প্রে ব্যবহার করতে পারেন।
  • মাঝে মাঝে পুরো গাছ পানিতে ভিজিয়ে দেবেন। এতে গাছে লেগে থাকা ময়রা দূর হবে।

 

সার প্রয়োগ: বনসাই এর বৃদ্ধি যেহেতু কম রাখা হয় তাই অনেকেই মনেকরেন এতে সার দেবার দরকার নেই। ভাবনা টা সম্পুর্ন সত্য নয় আবার মিথ্যা ও নয়। বনসাই পাত্রে মাটি কম থাকায় কম মাটিতে গাছের প্রয়োজনীয় পুষ্টিও কম থাকে সাই সুস্থ বনসাই পেতে হলে এতে নিয়ম মেনে সার দিতে হবে।

  • বনসাই এ সাধারন ভাবে তরল সার ব্যবহার করে ভালো ফল পাওয়া যায়।
  • তরল সার অতিরিক্ত পাতলা করে প্রয়োগ করবেন। অর্থাত ২ ভাগ পানি ১ ভাগ সার।
  • ফেব্রুয়ারি হতে মে মাস পর্যন্ত তরল সার ব্যবহার করতে পারেন।
  • অন্যন্ন সময় ফসফেট পটাস ও সামান্য পরিমান ইউরিয়া পানিতে মিশিয়ে মাসে একবার দিতে পারেন।
  • সার দেবার আগে অবশ্যই পানি সেচ দেবেন।
  • একদম সকালবেলা বা সন্ধায় সার প্রয়োগ করবেন।

পতঙ্গ নিয়ন্ত্রন:

বনসাইতে বিভিন্ন ধরনের পোকামাকর ও জীবানুর আক্রমন হওয়া স্বাভাবিক ব্যপার এক্ষেত্রে নিচের ব্যবস্থাগুলো নিতে পারেন।

  • বড় আকারের পোকা যাদের দেখা যায় তাদের হাত ধরে মেরে ফেলাই ভালো।
  • ছোট্ট পোকা, মাকরসা, মাইট, ইত্যাদি মারার জন্য প্রাথমিত ভাবে পনিতে ডিটল, স্যাভলন, বা লাইফবয় লিকুইড মিসিয়ে স্প্রে করতে পারেন। এতে এসব জীবানু ও পোকা মরে যাবে।
  • যদি এসবে কাজ না হয় তাহলে আপনি বাজারে যেসব পেস্টসিাইড পাওয়া যায় তা ব্যবহার করতে পারেন। তবে প্রথমে প্রাথমিক উপায় অবলম্বন করুন তারপর কাজ না হলে পেস্টিসাইড ব্যবহার করবেন।
  • কি ধরনের পোকার জন্য কি পেস্টিসাইড দরকার তা অভিঞ্জ দোকানী কে বলে নিতে পারেন। তবুও কনফিউশন থাকলে আমাকে ফেসবুকে মোসেজ করতে পারেন।
  • পেস্টিসাইড ব্যবহারে অবশ্যই সতর্ক থাকবেন। ও স্প্রে করার সময় সারা গাছেই সমান ভাবে স্প্রে করবেন।

 

আজ আর নয়। ভালো থাকবেন্ আর অতি দ্রুতই পরের পর্ব আসবে ইনসা-আল্লাহ। সে পর্যন্ত সবাই ভালো থাকবেন। সুস্থ থাকবেন। আর হ্য যারা মুসলিম ভাই বোন আছেন তারা অবশ্যই রোজা রাখবেন।

আর হ্য অবশ্যই কপিপেস্ট বর্জন করুন

ফেসবুকে আমাকে পাবেন এখানে

Level 0

আমি শাকিল আহম্মেদ শিমুল। বিশ্বের সর্ববৃহৎ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির সৌশল নেটওয়ার্ক - টেকটিউনস এ আমি 11 বছর 9 মাস যাবৎ যুক্ত আছি। টেকটিউনস আমি এ পর্যন্ত 46 টি টিউন ও 122 টি টিউমেন্ট করেছি। টেকটিউনসে আমার 1 ফলোয়ার আছে এবং আমি টেকটিউনসে 0 টিউনারকে ফলো করি।

আমি শাকিল আহম্মেদ শিমুল। আমি খুব সহজ এবং তার চেয়েও বেশী সাধারন একজন মানুষ ।..তবে মনের ভুলে মাঝে মাঝে কিছু অসাধারন কাজ অবস্য করে ফেলি। তবে তা কি ভাবে করি নিজেই জানিনা। নতুন প্রযুক্তির প্রতি আমার প্রবল আকর্ষন নবাগত যে কোন প্রযুক্তিই ভালোলাগে তাই সারা জীবন কাটাতে চাই প্রযুক্তির সাথে।...


টিউনস


আরও টিউনস


টিউনারের আরও টিউনস


টিউমেন্টস