নিজেকে আলাদা দেখাও…

সকল প্রশংসা অবশ্যই আল্লাহ্‌ তা‘আলারই জন্য। আমরা তাঁর প্রশংসা করি, তাঁর নিকট ক্ষমা প্রার্থনা করি এবং তাঁর নিকট-ই সাহায্য চাই। আমরা মনের কুমন্ত্রনা ও মন্দ আমল থেকে আল্লাহর নিকট আশ্রায় চাই। আল্লাহ্‌ তা’আলা যাকে হেদায়েত দান করেন, তাকে কেউ পথভ্রষ্ট করতে পারে না। পক্ষান্তরে যাকে তিনি বিপথগামী করেন তাকে কেউ হেদায়েত দিতে পারে না। আল্লাহ্‌র নিকট কামনা করি এমন ঈমান, যার পশ্চাতে কুফরী নেই; সত্যেও উপর এমন দৃঢ়তা, যার পাছে বিচ্যুতি নেই; আরো কামনা করি উপকারী সে ইলম, যার পর মুর্খতা নেই। আমি সাক্ষ্য দিচ্ছি আল্লাহ্‌ ছাড়া সত্যিকার কোন মা’বুদ নেই এবং আরো সাক্ষ্য দিচ্ছি মুহাম্মাদ সাল−লাল−লাহু আলাইহি ওয়াসাল−লাম তাঁর বান্দা ও রাসুল। আল্লাহ্‌ তা’আলা তাঁর উপর, তাঁর পরিবার-পরিজন ও সাহাবীদেও উপর রহমত ও শান্তি বর্ষণ করুন।
এটি একটি ক্ষুদ্র রচনা। এর আলোচ্য বিষয় ‘ কাফেরদের অনুকরণ।’ আল্লাহ্‌ তা’আলার নিকট কামনা করি, তিনি যেন এর আলোচ্য বিষয় দ্বারা বিপুল সংখ্যক জ্ঞানপিপাসুদের তৃষ্ণা মেটান।
আজকের পৃথিবী নানা মতবাদ, শ্লোগান এবং মানুষের তৈরী বিভিন্ন বিধি-বিধানে ছেয়ে গেছে এই দাবি করে যে, তারা সাম্য ও স্বাধীনতা অর্জন করছে। আসলে তারা তাদেরকে মুক্ত করেছে আল্লাহ্ ও তাঁর দ্বীন (জীবন ব্যাবস্থা) থেকে; কিন্তু তা আর কত দিনের জন্য? আর কত দিন তারা এভাবে চলবে? আল্লাহ্্র শপথ, অবশ্যই তারা মৃত্য বরণ করবে এবং বিচারের দিন তাদেরকে আল্লাহ্‌র মুখোমুখি হতে হবে। দুনিয়াতে ও আখেরাতে একমাত্র মুক্তি, একমাত্র শান্তি হল ‘লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ্’-এর প্রতিষ্ঠা।
তাওহীদের বাস্তবায়নই সমাজের পরিবর্তন আনতে পারে যেমনটি হয়েছিল পূর্ববতী নবীদের সময়, আরও হয়েছিল নবী মুহাম্মাদ (সাঃ) এবং তার সাহাবাদের সময়ে। এই ছোট বাক্যটি সকল বন্ধন ভেঙ্গে ফেলেছিল, ছিন্ন করেছিল সকল সম্পর্ক; কিন্তু তারা ব্যতিত যারা কেবলমাত্র ঈমানের দাবীতে, আল্লাহ্ ও তাঁর রাসূলের ভালবাসার কারণে ভ্রাতৃত্বের বন্ধনে আবদ্ধ ।
আমরা বলি,‘আমরা মুসলিম’।আমরা বলি,‘আমরা ইসলাম ভালবাসি’; আমাদের অবশ্যই বোঝা দরকার আমরা যা বলি তা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ বক্তব্য। যখন আমরা বলি যে ‘আমরা মুসলিম’ তখন আমরা অবশ্যই জিজ্ঞাসিত হব যে ‘মুসলিম হিসাবে আমরা কিভাবে কাজ করেছি?
কেউ বলতে পারে না যে, সে মুসলিম যতক্ষন না সে শত্রুটা ঘোষনা করে তাদের বিরদ্ধে যারা ইসলাম ঘৃণা করে, যারা ইসলামের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করে , যারা আল্লাহ্ (সুবঃ) এবং নবী (সাঃ)-কে ঘৃণা করে আর ঘৃণা করে মুসলিমদের।
এটি আমার কথা নয়। এটি কোন ইমাম, শায়খ কিংবা জ্ঞানীর কথা নয়। এটি পৃথিবীর কোন ব্যক্তির কথাও নয়। এটি সর্বশক্তিমান আল্লাহ্‌রও কথা।
যারা আল্লাহ্‌ ও আখিরাতের প্রতি ঈমান রাখে তাদেরকে আপনি এমন লোকের সাথে বন্ধুত্ব করতে দেখবেন না; যারা আল্লাহ্‌র ও তাঁর রাসূলের বিরোধিতা করে । যদিও তারা তাদের পিতা অথবা তাদের পুত্র অথবা তাদের ভ্রাতা অথবা তাদের জ্ঞাতি গোষ্ঠি হোক না কেন। [সূরা মুজাদিলা (৫৮ঃ২২)]
আল্লাহ্ (সুবঃ) আমাদের বলছেন যে, যারা আল্লাহ্ ও তাঁর রাসূল(সঃ)-কে ভালবাসে তাদের মাঝে আমরা এমন কাউকে পাবনা যারা দয়া, সহানুভূতি,ভালবাসা,ক্ষমা প্রদর্শন করে এমন কাউকে যারা আল্লাহ্ ও তাঁর রাসূলকে অস্বীকার করে যদিও সে তার বাবা, সন্তান ,ভাই অথবা ঘনিষ্ট আত্মীয়ও হয়।
অথচ আমরা আজকে প্রত্যক্ষ করছি যে, সারা পৃথিবীতে এর বিপরীতে কাজ হচ্ছে। মুসলিমরা আজ কাফেরদের সাথে বসবাস করতে এত আারাম ও স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করে যে তারা সে সকল বৈশিষ্ট সম্পর্কে আর মোটেই সচেতন নেই যা মুসলিম ও কাফেরদের মাঝে পার্থক্য তৈরী করে।
আল্লাহ্‌র শপথ! তথাকথিত সভ্য সমাজে? বসবাসরত মুসলিমরদের বিশ্বাস এত দুর্বল হয়ে পড়েছে যে, তারা এমন আচরণে অভ্যস্ত হয়ে পরেছে যা একজন বিশ্বাসী মুসলিমের আচরণের সম্পূর্ণ বিপরীত এবং তার প্রতি বিদ্বেষমূলক । এটি মুসলিমদের জন্য ভয়াবহ একটি দূর্যোগ। কাফেরদের সাদৃশ্যতা অবলম্বন, তাদের আচরণে ও রীতি-নীতির অনুকরণ ইসলামের শিক্ষার লঙ্ঘন ।
আল্লাহ্ (সুবঃ) তা‘আলা আমাদের কাফেরদের কর্মপন্থার অনুসরণ, অনুকরণ ও সাদৃশ্য করতে কঠোরভাবে সতর্ক করেছেন। মোহাম্মদ (সাঃ) এটিকে কেয়ামতের একটি ছোট চিহ্ন বলে চিহ্নিত করেছেন।
আবু হুরায়রা (রাঃ) বর্ননা করেছেন , নবী (সাঃ) বলেছেন ,“ততদিন কেয়ামত আসবে না যতদিন আমার উম্মত পূর্ববর্তী জাতির কাজগুলো করবে এবং তাদের অনুসরণ করবে বিঘত বিঘত করে, গজ গজ করে (ইঞ্চি ইঞ্চি করে)।”  তাকে বলা হল, “হে আল্লাহ্‌র নবী (সাঃ)! আপনি কি পারসীয় ও রোমানদের কথা বলছেন?”  নবী (সাঃ) বললেন, ” তারা ছাড়া আর কেইবা হতে পারে?” (বুখারী)
আবু সাঈদ আল খুদরী বর্ণনা করেছেন, নবী (সাঃ) বলেছেন , “তোমরা ঐ সব জাতিকে বিঘত বিঘত করে , গজ গজ করে  (ইঞ্চি ইঞ্চি করে) এত বেশি  অনুকরণ করবে যে তারা যদি গুইসাপের গর্তেও ঢোকে তোমরা তবুও তাদের অনুসরণ করবে।” আমরা বললাম, ”হে আল্লাহ্ নবী (সাঃ)! আপনি কি ইহুদি ও খ্রীষ্টানদের কথা বলছেন?” তিনি বললেন , ”তারা ব্যতিত আর কারা ?” (বুখারী)
প্রিয় নবী (সাঃ) এর কথা “তোমরা ঐ সব জাতিকে বিঘত বিঘত করে , গজ গজ করে (ইঞ্চি ইঞ্চি করে) এত বেশি অনুকরণ করবে যে তারা যদি গুইসাপের গর্তেও ঢোকে তোমরা তবুও তাদের অনুসরণ করবে।”  মুসলিমদের উপর ইহুদি ও খ্রিষ্টানদের প্রবল প্রভাব নির্দেশ করে।
একারণেই প্রত্যেক সালাতের প্রত্যেক রাকাতে আমরা একটি অতি গুরুত্ব পূর্ণ দোয়া করি ;
“গাইরিল মাগদুবি আলাইহিম”
আদি বিন হাতিম (রাঃ) বলেন, আমি নবী (সাঃ) কে আল্লাহ্র এই আয়াত “গাইরিল মাগদুবি আলাইহিম” সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করলাম। তিনি উত্তরে বললেন,“এরা হল ইহুদী” আর “ওলাদ্দো আল্লীন,” তিনি উত্তরে বললেন,“এরা হল খ্রীষ্টান আর তারা হল পথভ্রষ্ট।”  ( তিরমিজি , আবু দাউদ)
আমরা প্রত্যেক সালাতে একথা বলছি অথচ এই আয়াতের সাথে সাংঘর্ষিকরূপে কাফেরদের অনুকরণ, অনুসরণ ও ইহুদী খ্রীষ্টানদের জীবন প্রনালী অনুযায়ী জীবন যাপন করছি।
কাফেরদের অনুকরণ করা থেকে বিরত থাকা এবং তাদের থেকে দূরে থাকার আল্লাহ্‌র এই আদেশের কারণ খুবই পরিস্কার। কারণ যদি আমরা তাদেরকে বাহ্যিক ভাবে অনুসরণ ও অনুকরণ করি তাহলে সময়ের সাথে সাথে আমরা আভ্যন্তরীণ ব্যাপারেও তাদের অনুসরণ ও অনুকরণ করা শুরু করব। যার ফলে আমরা তাদের নীতি-নৈতিকতা, কার্যাবলী এবং তাদেও জীবন ব্যবস্থা অনুসরণ করব । আল্লাহ্র শপথ!  তা অবশ্যই আমাদের চরম ধ্বংসের দিকে নিয়ে যাবে । পরিণামে আমরা তাদের কুফর ও শিরকের অনুসরণ করব।
আল্লাহ্ (সুবঃ) এ সম্পর্কে আমাদের পরিস্কারভাবে সতর্ক করে দিয়েছেন । আমাদের সে সকল সতর্ক বাণীর দিকে মনোযোগী হওয়া উচিত।
“হে মুমিণগণ! তোমরা ইহুদী ও খ্রীষ্টানদেরকে বন্ধু হিসাবে গ্রহণ করো না। তারা একে অপরের বন্ধু। তোমাদের মধ্যে যে তাদের সাথে বন্ধুত্ব করবে, সে তাদেরই অন্তর্ভুক্ত। নিশ্চয় আল্লাহ্ জালেমদেরকে পথ প্রদর্শন করেন না।” [সূরা মায়িদা (৫ঃ৫১)]
“মু’মিনগন যেন অন্য মু'মিনকে ছেড়ে কোন কাফেরকে বন্ধুরূপে গ্রহণ না করে। যারা এরূপ করবে আল্লাহ্র সাথে তাদের কোন সম্পর্ক থাকবে না ...। ”  [সূরা আল ইমরান (৩ঃ২৮)]

এবং আমাদের সামনে রয়েছে নবীদের পিতা আল্লাহ্‌র খলিল ইব্রাহিম (আঃ) এর সর্বোত্তম উদাহরণ ঃ
“তোমাদের জন্যে ইবরাহীম ও তাঁর সঙ্গীগণের মধ্যে চমৎকার আদর্শ রয়েছে। তারা তাদের সম্প্রদায়কে বলেছিল: তোমাদের সাথে এবং তোমরা আল্লাহর পরিবর্তে যার এবাদত কর, তার সাথে আমাদের কোন সম্পর্ক নেই। আমরা তোমাদের মানি না। তোমরা এক আল্লাহ্র প্রতি বিশ্বাস স্থাপন না করলে তোমাদের মধ্যে ও আমাদের মধ্যে চিরশত্রুতা থাকবে... ।” [সূরা মুমতাহিনা (৬০ঃ৪)]

সূতরাং আমরা এই আয়াত থেকে শিখলাম যে, যাকে আল্লাহ্ উৎকৃষ্ট উদাহরণ হিসেবে উল্লেখ করেছেন তা হল, আমরা কাফেরদের সাথে বন্ধুত্ব, তাদের অনুকরণ, অনুসরণ ও তাদেরকে ভালবাসতে পারব না । আসুন আমরা ইসলামের শিক্ষা অনুসরণ করি! আসুন আমরা বাহ্যিক ও অভ্যন্তরীণ উভয়ভাবেই মুসলিম হই! আমাদের খাওয়া, হাটা , ঘুম, কথা-বার্তা, পোষাক, মৃত্যু সবই হোক মুসলিমের মত। আল্লাহর রহমতে আমরা মুসলিম । আলহামদুলিল্লাহ্ , আমরা কাফের নই। সুতরাং আসুন আমরা তাদেরকে অনুকরণ করা থেকে বিরত হই!
আমাদের এটি চিন্তা করা শোভা পায় না যে আমরা কাফেরদের থেকে নীচু কিংবা তারা আমাদের থেকে সম্মানিত। আল্লাহ্ (সুবঃ) আমাদেরকে সম্মানিত করেছেন আর তাদেরকে অভিশাপ দিয়েছেন । অভিশপ্ত কাফেরদের অনুকরণ করে, বা দুনিয়ার কিছু দিয়ে সম্মান খোঁজা আমাদের উচিত নয় ।
যারা মুসলমানদের বর্জন করে কাফেরদেরকে নিজেদের বন্ধু বানিয়ে নেয়। তারা কি তাদের কাছে সম্মান প্রত্যাশা করে? অথচ "যাবতীয় সম্মান শুধুমাত্র আল্লাহ্‌রই জন্য।” [সূরা নিসা (৪ঃ১৩৯)]
“....... সম্মান ও প্রতিপত্তি তো একমাত্র আল্লাহ্, তাঁর রাসূলের ও মুমিনদের জন্য; কিন্তু মুনাফিকরা তা জানে না ।” [সূরা মুনাফিকুন (৬৩ঃ৮)]
ِ
“তোমরাই হলে সর্বোত্তম উম্মত, মানবজাতির কল্যানের জন্যেই তোমাদের উদ্ভব ঘটানো হয়েছে। তোমরা সৎকাজের নির্দেশ দান করবে ও অন্যায় কাজে বাধা দেবে এবং আল্লাহর প্রতি ঈমান আনবে .. .. .. ।” [সূরা আল ইমরান (৩ঃ১১০)]

“....... তারা চতুষ্পদ জন্তুর মত; বরং তাদের চেয়েও নিকৃষ্টতর। তারাই হল গাফেল, শৈথিল্যপরায়ণ।” [সূরা আ’রাফ (৭ঃ১৭৯)]

“... তারা তো চতুষ্পদ জন্তুর মত; বরং আরও পথভ্রষ্ট।” [সূরা ফুরক্বান (২৫ঃ৪৪)]

“নিশ্চয় যারা আহলে কিতাবদের মধ্যে থেকে কুফরী করেছে এবং মুশরিকরা অনন্তকাল জাহান্নামে থাকবে । এরাই সৃষ্টির মধ্যে নিকৃষ্টতম।" [সূরা বাইয়্যিনাহ (৯৮ঃ৬)]

যদিও আল্লাহ্ সুবহানাহু ওয়া তা’আলা বলেছেন, মুসলিমরা হল সর্বশ্রেষ্ঠ জাতি আর অবিশ্বাসীরা হল সৃষ্টির নিকৃষ্টতম জাতি, তারপরেও কিছু কিছু মুসলিম পরগাছার মত কাফেরদের নিয়মনীতির অনুসরণ করছে । এটি কি একটি বৈপরীত্বমূলক বিষয় নয়?  আমরা কি তাদের দলভুক্ত হতে চাই যাদের আল্লাহ্ সর্বশ্রেষ্ঠ জাতি বলেছেন নাকি তাদের দলভুক্ত হতে চাই আল্লাহ্ যাদেরকে নিকৃষ্টতম সৃষ্টি এমনকি চতুস্পদ জন্তুর চেয়েও নিকৃষ্ট বলেছেন?
অনেক মুসলিমই আজ শত্রুদের ফাঁদে পা দিয়েছে। তাদের মাঝে কেউ কেউ আবার তাদের কুফরীকেও গ্রহণ করেছে। কত নামধারী মুসলিম আছে যারা মানবরচিত আইন মেনে নিচ্ছে ও এর মাধ্যমে বিচার ফয়সালা চাচ্ছে, অথচ আল্লাহর আইন বাস্তবায়নের কোন ইচ্ছাই প্রকাশ করছে না?
কত মুসলিম কাফেরদের পোশাক, তাদের আচর-আচরণ নকল করছে? অনেক পুরুষই সোনার মালা, কানে দুল আর ব্রেসলেট ব্যবহার করছে অথচ গর্বের সাথে বলছে যে তারা মুসলিম? (মুসলিম পুরূষদের জন্য সোনার কিছু পরিধান করা হারাম)।মুহাম্মাদ সাল−লাল−লাহু আলাইহি ওয়াসাল−লাম-এর আদেশের বিরুদ্ধে যাচ্ছে আর দাঁড়ি কামিয়ে ফেলেছে। আবার এই মানুষগুলোই পশ্চিমা খেলোয়াড় ও তারকাদের নতুন নতুন ফ্যাশন আর চুলের স্টাইল নকল করছে। তারা পৃথিবীর সর্বশ্রেষ্ঠ মানুষের “সুন্নাহ” ছেড়ে দিয়ে নিকৃষ্ট জাতির অনুসরণ করছে। তারা মুখে বলে আমরা রাসূল (সাঃ)-কে ভালবাসি, অথচ তাদের কাজ প্রমাণ করে, যে তারা কাফেরদের আরো অনেক বেশি ভালবাসে।
কত মহিলা হিজাব ত্যাগ করে নিজেদের প্রদর্শন করছে? তারা আঁটোশাঁটো ও খোলামেলা পোশাক পড়তে পছন্দ করে। কত মুসলিম নারী রয়েছে যারা বাহিরে যাবার সময় মেকাপ করছে ও সুগন্ধি ব্যবহার করছে? মূলতঃ এরা কাফেরদের অনুসরণ ছাড়া আর কিছুই করছে না । তারা নৈতিকতা বিবর্জিত অবিশ্বাসী নারীদের সর্বাত্মকভাবে অনুকরণ করছে ।
কত মুসলিম আছে যারা কথাবার্তায় কাফেরদের অনুকরণ করছে? আপনারা দেখবেন যে তারা পরস্পরের সাথে দেখা হলে জান্নাতের ভাষা “আসসালামু আলাইকুম” এর পরিবর্তে Yo! man ,wazzup (what`s up)? যখন তারা কোন কঠিন সময়ের মুখোমুখি হয় তখন কিছু নামধারী মুসলিম অদ্ভুত সব শপথ করে যদিও আল্লাহ্ আমাদের অন্য কিছু বলার শিক্ষা দিয়েছেন। যেমন,“সুবহানাল্লাহ”  বা “ইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন” অথবা “ক্বদ্দারাল্লাহু ওয়া মা শাআ‘ ফাআল” ।
যখন কোন আনন্দজনক ঘটনা ঘটে ও সফলতা প্রাপ্তি ঘটে তখন অনেক তথাকথিত মুসলিম আল্লাহ্‌র প্রশংসা সূচক “আল্লাহু আকবর” অথবা “আলহামদুলিল্লাহ”  না বলে বলে Yessss! অথবা “আমিই এটি করেছি”। কত মুসলিম হাঁচির পরে “আলহামদুলিল্লাহ” বলতে ভুলে যায়। যদিও বা তাদের মনে পড়ে তবুও তারা তা বলতে লজ্জা পায় কিন্তু কাফেরদের অনুকরণে “এক্সকিউজ মি বা Sorry”  বলতে দ্বিধা করে না।
কত মুসলিম আছে যারা কাফেরদের অনুসরণ করে তাদের আনন্দ-উৎসবে অংশ গ্রহণ করে আর তাদের ঐতিহ্য ও সংস্কৃতি পালন করে। এসবের মধ্যে রয়েছে বড় দিন(X-mas Day), ভ্যালেন্টাইন ডে,April Fool, নববর্ষ , হ্যাপী নিউ ইয়ার ,জন্মদিন ,বাবা দিবস, মা দিবস, বন্ধু দিবস ইত্যাদি।
কত মুসলিম আছে যারা কাফেরদের অনুকরণে কবরের চারপাশে সাজ-সজ্জা করছে এবং কবর পাকা করছে? জাবির (রাঃ) বলেন, “আল্লাহ্‌র রাসুল (সাঃ) কবর পাকা করতে, বসার স্থান হিসেবে ব্যবহার করতে এবং কবরের উপর দালান বানাতে নিষেধ করেছেন।” (মুসলিম)
কত নামধারী মুসলিম রয়েছে যারা আল্লাহ্‌র আইন বাদ দিয়ে মানুষের তৈরী আইন দ্বারা মুসলিম দেশগুলোকে শাসন করছে?
“তবে কি তাহারা জাহেলী যুগের বিধান কামনা করে ? দৃঢ় বিশ্বাসী লোকদের জন্য আল্লাহ্‌র চাইতে বিধান প্রদানে আর কে উত্তম ।” [সূরা মায়েদা (৫ঃ৫০)]

ইসলাম পূর্ণাঙ্গ, এবং আমরা আমাদের পূর্ণাঙ্গ জীবন ব্যবস্থা পেয়েছি ইসলাম থেকে যা আল্লাহ্ আমাদের জন্য পরিপুর্ণ করেও দিয়েছেন। আমরা এর শিক্ষাতে কিছুই যোগ দিতে পারব না বা এর থেকে কিছুই বাদ দিতে পারব না। রাসূল (সাঃ) বলেছেন, “যা তোমাদেরকে জান্নাতের দিকে নিয়ে যাবে বা যা তোমাদেরকে জাহান্নামের দিকে তার সবকিছুই আমি তোমাদেরকে স্পষ্ট কওে দিয়েছি।” (মুসনাদ আহমাদ)
রাসূল (সাঃ) অনেক হাদীসে কাফেরদের অনুকরণ করতে নিষেধ করেছেন। তিনি বলেন, “যে কোন জাতিকে অনুকর করে সে তাদের অর্ন্তগত।” (আবু দাউদ, মুসনাদ আহমাদ)
ইসলামের একটি গুরুত্বপূর্ণ মূলনীতি হল কাফেরদের থেকে পৃথক থাকা। আল্লাহ্ কর্তৃক অভিশপ্তদের পথ অনুসরণ করা ইসলামের অংশ হতে পারে না। ক্বুরআন ও সুন্নাহ্ এর আলোকে যে কেউ এটি অনুধাবন করতে পারে।
বাইতুল মাকদিস থেকে কিবলা পরিবর্তন করে মক্কার দিকে করা হয়েছিল কেননা ইহুদীরা বাইতুল মাকদিস এর দিকে ফিরে ইবাদত করে।
ইবন উমর (রাঃ) বলেছেন, নবী (সাঃ) বলেছেন, “তোমরা মুশরিকদের থেকে ভিন্ন থাক এবং তোমাদের দাঁড়িকে ছেড়ে দাও এবং গোফ ছোট রাখো।” (বুখারী)
আবু হুরাইরা (রাঃ) বর্ণনা করেন, নবী (সাঃ) বলেছেন, “ইহুদী খ্রিষ্টানরা তাদের চুল রং করে না । তাই তোমরা তাদের থেকে ভিন্ন থাক।”  (বুখারী, মুসলিম)
ইবনে আব্বাস (রাঃ) বর্ণনা করেছেন, “আশুরার দিনে রোজা রাখো এবং এর একদিন আগে অথবা একদিন পরে রোজা রাখার মাধ্যমে ইহুদীদের থেকে ভিন্ন থাক । (আহমদ)
সূর্যোদয়ের সময় এবং সূর্যাস্তের সময় ইবাদত না করা কেননা এই সময় অমুসলিমরা উপাসনা করে থাকে।
কাফেরদের অনুকরণ দুই প্রকার হতে পারে । হারাম জিনিসের অনুসরণ আর হালাল জিনিসের অনুকরণ।
প্রথম প্রকার হল এমন অনুকরণ যা হারাম ঃ- এর অর্থ হল জেনে শুনে কাফেরদের ধমের্র এমন সতন্ত্র বৈশিষ্ট অনুসরণ করা যা আমাদের ধর্মে নেই । এটি করা হারাম এবং বড় গুনাহ্। কিছু কিছু ক্ষেত্রে এগুলো করার মাধ্যমে একজন মুসলিম, কাফের হয়ে যেতে পারে । যদিও তা করে কাফেরদের সাথে একমত হওয়ায়, তাদের খেয়াল খুশি অনুযায়ী অথবা এমন ভিত্তিহীন যুক্তি দ্বারা যার কারণে সে বিশ্বাস করে যে এটি করলে তার দুনিয়ায় ও আখেরাতে উপকার হবে। যদি প্রশ্ন করা হয়, কেউ যদি অজ্ঞতাবশতঃ এটি করে যেমন বড়দিন পালন করে, সে কি গুনাহগার হবে? এটির উত্তর হল, সে গুনাহগার হবে না কেননা সে জানতনা। তবে তাকে এ ব্যাপারে জানাতে হবে, তবুও যদি সে এটি পুনরায় করে তবে সে গুনাহগার হবে।
দ্বিতীয় প্রকার হল এমন অনুকরণ যার অনুমতি আছেঃ- এর অর্থ হল এমন জিনিস করা যা প্রকৃত পক্ষে কাফেরদের থেকে নেওয়া হয়নি যদিও তাদের কেউ কেউ এটি করে । এটির অর্থ তাদের অনুসরণ করা নয় কিন্তু এটি করলে সে কাফেরদের থেকে ভিন্ন থাকার উপকারিতা থেকে বঞ্চিত হবে।
নিম্নলিখিত শর্তপূরণ সাপেক্ষে দুনিয়াবী বিষয়ে ইহুদী, খ্রিষ্টান বা অন্যান্য ধর্মাবলম্বীদের অনুকরণ করা বা তাদের সদৃশ হওয়া অনুমোদনযোগ্য।
  • তাদের পরিচয় বহন করে এরূপ কোন প্রকার আচার-অনুষ্ঠান বা উপাসনা অনুকরণ করা যাবে না।
  • তাদের ধর্মের কোন অংশ পালন করা যাবে না ।
  • এমন কাজ করা যাবেনা যা সম্পর্কে ইসলামে বিধান রয়েছে। যদি এ সম্পর্কে ইসলামে কোন বিধান পাওয়া যায়, যা এই কাজ অনুমোদন করে বা করে না; তাহলে আমাদের অবশ্যই ইসলামের বিধানের অনুসরণ করতে হবে।
  • এমন কোন কাজ করা যাবে না যা শারিয়াহ্ এর বিপরীতে যায় ।
  • তাদের কোন উৎসব পালন করা যাবে না
  • প্রয়োজনের অতিরিক্ত সাদৃশ্য অবলম্বন করা যাবে না।
এ প্রবন্ধ থেকে যদি ভাল কিছু হয় তাহলে তা আল্লাহ্র পক্ষ থেকে আর যদি কোন ভুল হয় তবে তা প্রবন্ধকার ও শয়তানের পক্ষ থেকে। আল্লাহ তাআ‘লা আমাদের উপকারী জ্ঞান দান করুন এবং ঐ জ্ঞানের উপর আমল করার তৌফিক দান করুন। আল্লাহ্ তাঁর নির্দেশ মত দলীল অনুসারে আমাদেরকে তাঁর দ্বীন পালনের তৌফিক দান করুন । আমিন!
( তথ্যঃ ইন্টারনটে, আল-কুর’আন ও আল-হাদীস)

Level 2

আমি মোকাররাম০০৯। বিশ্বের সর্ববৃহৎ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির সৌশল নেটওয়ার্ক - টেকটিউনস এ আমি 13 বছর 8 মাস যাবৎ যুক্ত আছি। টেকটিউনস আমি এ পর্যন্ত 9 টি টিউন ও 11 টি টিউমেন্ট করেছি। টেকটিউনসে আমার 1 ফলোয়ার আছে এবং আমি টেকটিউনসে 0 টিউনারকে ফলো করি।

শুরু হয় কিন্তু শেষ হয় না...এইতো জীবন!


টিউনস


আরও টিউনস


টিউনারের আরও টিউনস


টিউমেন্টস