ডেটা ও ইনফরমেশান স্টোর -কেন, কীভাবে..

একবার চিন্তা করে দেখুন, প্রতিদিন কী পরিমান ইনফরমেশন বা তথ্যাদি সংরক্ষন করা হয়ে থাকে৷ ক্যালিফোর্নিয়া ইউনিভার্সিটির বার্কলেস স্কুল অব ইনফরমেশন ম্যানেজমেন্ট এন্ড সিস্টেম অনুসন্ধানী দল এক গবেষনা থেকে জানিয়েছে, যে প্রতিবছর ১,৬৯৩,০০০ (ষোল লাখ তিরানব্বই হাজার) টেরাবাইট ইনফরমেশন বা ডাটা তৈরি হয় এবং বিশ্বব্যাপী ম্যাগনেটিক প্রযুক্তির মাধ্যমে এই ডাটা সংরক্ষন করা হয়ে থাকে৷ আশ্চর্যের বিষয় হচ্ছে এই ডাটা বা ইনফরমেশন প্রতিবছর শতকরা ৫৫ ভাগ করে বৃদ্ধি পাচ্ছে৷ অর্থাত্‍ বৃদ্ধির হার অর্ধেকেরও বেশি৷ এই অবস্থার প্রেক্ষিতে বলা যায়, ১ টেরাবাইট বা ১০০০ গিগাবাইট ইনফরমেশন যদি টেক্সট ডকুমেন্টে স্ট্যাক আকারে (অর্থাত্‍ একটির ওপর আরেকটি) রাখা হয় তবে সেই স্ট্যাকের উচ্চতা হবে নিউইয়র্ক সিটির এম্পায়ার স্টেইট বিল্ডিংয়ের ১৬গুন উচ্চতার সমান৷ আর এর সাথে যদি অতিরিক্ত ১,৬৯২,৯৯৯ টেরাবাইট ডাটা যোগ করা হয় তাহলে নিঃসন্দেহে বলা যাবে যে পৃথিবী সংরক্ষন করছে আকাশচুম্বী বিশাল বিশাল সুউচ্চ বহুতল ভবন (আসলে ইনফরমেশনে পরিপূর্ণ !)৷

তথ্য সংরক্ষনের জন্য হার্ডডিস্কের মতো বিকল্প কিছু এখনো কিন্তু বের হয়নি৷ ফ্লাশ ড্রাইভ, সিডি-ডিভিডি ইত্যাদি ডিভাইসগুলো যদিও বা বের হয়েছে, সেগুলোকে কী হার্ডডিস্ক বলা উচিত৷ উচিত নয়৷ কারণ ধারণ ক্ষমতা, স্থায়ীত্ব, গতি, মূল্য ইত্যাদির বিচারে সেগুলো অনেক পিছিয়ে আছে৷ ভবিষ্যতে এই হার্ডডিস্কগুলোর ট্র্যাক ডেনসিটি বা ঘনত্ব হয়ে উঠবে প্রায় ১,০০,০০০ ট্র্যাক/ইঞ্চি৷ এর মানে হচ্ছে প্রতি ইঞ্চি পরিমান জায়গাতে ১০ মিলিয়ন ট্র্যাক৷ ভাবা যায় কী ! এর ফলে হয়তো ডাটা রিডিং এরর বেড়ে যেতে পারে৷ আর তাই এই এরর দূর করতে হার্ডডিস্কের হেডগুলো (রিড) ট্র্যাকগুলোকে পর্যবেক্ষন করবে মাত্র ৮% দুরত্ব রেখে৷ অর্থাত্‍ এক ইঞ্চির ০.৮ মিলিয়ন ভাগ ওপর থেকে৷ কতটা কঠিন হবে তৈরি করতে একবার ভেবে দেখুন তো৷ একটা মাছির কথা চিন্তা করুন৷ ধরুন আপনি মাছিটির যে-কোনো একটি পায়ে পেনসিল দিয়ে একটা পয়েন্ট তৈরি করবেন৷ কিন্তু মজার কথা হলো মাছিটি নিজেইতো প্রস্থে এক ইঞ্চির চার ভাগের এক ভাগ৷ তারপর পা আবার প্রস্থের ৮ ভাগ৷ অবিশ্বাস্য৷

একটি হার্ডডিস্কে এক ইঞ্চি পরিমান কমপক্ষে তিন সহস্রাধিক ওবল (Wobble) রয়েছে৷ এই ওবল হার্ডডিস্কের ট্র্যাকগুলোতে বিভিন্ন উত্‍স থেকে আগত ডাটা লিখে রাখে৷ ডিস্ক যখন প্রতিবার ঘোরে এই ওবল তার কাজ পুনরায় করে৷ ব্যাপারটিকে আবার মাছির সাথে তুলনা করা যাক৷ একটি মাছিকে যদি একটি বৃত্তাকার পথে ছেড়ে দেয়া হয় এবং আপনাকে যদি পেন্সিল দিয়ে মাছির হাটার পথে পয়েন্ট করতে বলা হয় তাহলে আপনার অবস্থাটা কী হবে ভেবে দেখুন৷ আর ওবল, সে চিন্তা না হয় নাই করলেন৷

হার্ডডিস্কও কিন্তু কিছু ছোট ছোট বিরক্ত প্রতিনিয়ত সহ্য করছে৷ এগুলোকে র্যান্ডম ডিস্টার্বনেস বলে৷ বাইরে থেকে ভাইব্রেশন জাতীয় কিছু বা হার্ডডিস্ক ঘোরার সময় যে বাতাস উত্‍পন্ন হয় এগুলো হার্ডডিস্কে সমস্যা তৈরি করে৷ এই সমস্যাগুলোতে আমাদের যদিও কোনো হাত নেই, তারপরও মেনে নেয়া ছাড়া আর কিছুই করার নেই৷ এই দুটি সমস্যা প্রতিবার হার্ডডিস্কের হেডকে ট্র্যাক থেকে প্রায় এক ইঞ্চির ১৫ থেকে ২০ মিলিয়ন ভাগ দূরে সরিয়ে দিচ্ছে৷ অর্থাত্‍ একটি খুবই কম ক্ষমতার ভুমিকম্পকে প্রতিনিয়ত সহ্য করে চলেছে আমাদের মহা মূল্যবান হার্ডডিস্কটি৷

কিছু সময়ের জন্য ভাবুন আপনি একটি বিল্ডার্সের চিফ এক্সিকিউট অফিসার৷ আপনার অফিসের কাজ হচ্ছে বড় বড় এরোপ্ল্যান বা এয়ারক্রাফট তৈরি করা৷ আপনাকে আমি একটি প্রজেক্ট দিব৷ আর সেই প্রজেক্টটি হলো- এমন একটি এয়ারক্রাফট আপনাকে ডিজাইন করতে হবে যা পরর্বতী প্রজন্মের জাম্বোজেট হিসেবে গন্য হবে৷ আপনাকে আমি আমার চাহিদাগুলো জানিয়ে দিচ্ছি৷ বর্তমান সময়ের জাম্বোজেট থেকে সাইজ ছোট হতে হবে কিন্তু যাত্রী বেশি বহন করা যাবে, কম উচ্চতায় অর্থাত্‍ ২৫০ মাইক্রোনস (১০০০ মাইক্রোনস = ১ মিলিমিটার) উচুঁ দিয়ে চালানোর মতো ক্ষমতা থাকতে হবে, গতি থাকতে হবে অবিশাস্য অর্থাত্‍ প্রতি সেকেন্ডে ১০০০ কিলোমিটার বা ৬২১ মাইল, কোনো ধরনের সংযোগ হবে না মাটি এবং এয়ারক্রাফটের সাথে কম উচ্চতায় বা দ্রুত গতিতে চলার সময়, সর্বশেষে মূল্য যেন বৃদ্ধি পেয়ে ৫% এর বেশি না হয়৷ আপনি আমাকে মুহুর্তের মাঝে বলবেন অসম্ভব৷ এটি কখনোই সম্ভব নয়৷

এখন আপনাকে যদি আমার চাহিদাগুলো দিয়ে একটি হার্ডডিস্ক তৈরি করে দিতে বলি তাহলে সেটা আপনি পারবেন৷ কারণ হার্ডডিস্কের স্লাইডার (প্রায় ১ মিলিমিটার লম্বা) কে টেনে বড় করে একটি বোয়িং ৭৪৭ জাম্বোজেটের (প্রায় ১০০ মিটার লম্বা) সমান করলেই ধারন ক্ষমতা বেড়ে যাবে কয়েক কোটি গুন৷ এই বিশাল সাইজের মাঝে সহজেই ডিস্ক থেকে ২৫০ মাইক্রোনস ওপরে হেড রাখা সম্ভব৷ আজকের হার্ডডিস্ক টেকনোলজি এতটাই উন্নত হয়েছে যে, একটি টাইপিকাল হেড ডিস্কের ওপর দিয়ে সুষম গতিতে কমপক্ষে প্রতি সেকেন্ডে ১০ মিটার পথ অতিক্রম করে৷ তবে সেই হার্ডডিস্কটি হতে হবে ৫৪০০ আরপিএম, টাইপিকাল ডিস্ক রেডিয়াস ০.৮ ইঞ্চির৷ বিশ্বের অন্যতম হার্ডডিস্ক নির্মাতা সিগেট কোম্পানীর চিতা এক্স১৫ ড্রাইভগুলো সেখানে প্রতি সেকেন্ডে ৩২ মিলিমিটার পথ যায়৷ এয়ারক্রাফটের মতোই হাইপোথেটিকাল জেট পদ্ধতিতে টাইপিকাল হেড এবং ডিস্কের সুষম গতি বাড়িয়ে ১০০০ কিলোমিটার/সেকেন্ড করা সম্ভব৷ তবে বাস্তবে, একটি এয়ারপ্লেন এবং হার্ডডিস্কের স্লাইডার একই এরোডাইনামিক মেকানিসম বা পদ্ধতি মেনে কাজ করে৷ এই গতি এতটাই দ্রুত যে আমেরিকার সানফ্রান্সিসকো থেকে জাপানের টোকিও-তে ট্রাভেল করতে সময় লাগবে মাত্র ১০ সেকেন্ডের চেয়ে কম সময়৷

Level 0

আমি Amin Mehedi। বিশ্বের সর্ববৃহৎ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির সৌশল নেটওয়ার্ক - টেকটিউনস এ আমি 15 বছর 10 মাস যাবৎ যুক্ত আছি। টেকটিউনস আমি এ পর্যন্ত 39 টি টিউন ও 218 টি টিউমেন্ট করেছি। টেকটিউনসে আমার 0 ফলোয়ার আছে এবং আমি টেকটিউনসে 0 টিউনারকে ফলো করি।


টিউনস


আরও টিউনস


টিউনারের আরও টিউনস


টিউমেন্টস

তথ্যবহুল লেখাটির জন্য অনেক অনেক ধন্যবাদ,মেহেদী ভাই।

জানি না তো । তবে এখন জানলাম

Level 0

ধন্যবাদ শেয়ার করার জন্য

অনেক ধন্যবাদ আপনাকে।

জটিল,জটিল একটি টিউনের জন্য ধন্যবাদ।অনেক কিছু জানতে পারলাম,অনেক তথ্যবহুল একটি টিউন।প্রতিদিনই আমাদের নিত্য নতুন সব তথ্য কম্পিউটারের হার্ডডিস্কে রাখার প্রয়োজন হচ্ছে,কিনআতু হার্ডডিস্কের জায়গা তা ধারণের জন্য অপ্রতুল হয়ে পড়ছে।আর তাই হার্ডডিস্কের মান উন্নয়নের জন্য এত প্রচেষ্টা।

অনেক কিছু বুঝেছি আবার অনেক কিছু বুঝিনি। তবে নিঃসন্দেহে একটি শিক্ষনীয় পোস্ট।