অনলাইনে ই-পাসপোর্ট কিভাবে করবেন? কি কি লাগবে?

টিউন বিভাগ ইন্টারনেট
প্রকাশিত
জোসস করেছেন

ই-পাসপোর্ট কি?

যেভাবে অনলাইনে পাসপোর্ট বানাবেন:

বিশ্বের ১১৮টি দেশে চালু রয়েছে ই-পাসপোর্ট (e-passport) বা ইলেকট্রনিক পাসপোর্ট। ওই দেশগুলোর সঙ্গে তাল মিলিয়ে বাংলাদেশও প্রবেশ করতে যাচ্ছে ই-পাসপোর্ট যুগে। ২০১৬ সালে মেশিন রিডেবল পাসপোর্টের (এমআরপি) পাশাপাশি ইলেকট্রনিক পাসপোর্ট (ই-পাসপোর্ট) চালুর সিদ্ধান্ত নেয় বাংলাদেশ সরকার। একই সময় পাসপোর্টের মেয়াদ বাড়ানোর সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। সিদ্ধান্ত অনুযায়ী যে দিন থেকে ই-পাসপোর্ট চালু হবে সেদিন থেকে এমআরপি পাসপোর্ট রিনিউ করতে গেলে ই-পাসপোর্ট করতে হবে। জার্মানির প্রযুক্তি নিয়ে জিটুজির মাধ্যমে বাংলাদেশে ই-পাসপোর্ট করা হবে। বাংলাদেশী পাসপোর্ট বাংলাদেশের নাগরিকদের জন্য বিদেশে ভ্রমণের কাজে ব্যবহৃত দলিল। জন্মসূত্রে বা অভিবাসনসূত্রে বাংলাদেশের নাগরিকদেরকে এটি বাংলাদেশ সরকার প্রদান করে থাকে।

বৈধভাবে পৃথিবীর যে কোন দেশে যেতে হলে সংশ্লিস্ট ব্যক্তির একটি পাসপোর্ট প্রয়োজন। এটি রাষ্ট্রের নাগরিক হিসেবে স্বীকৃতিরও বড় দলিল। জাতীয় পরিচয়পত্র বাংলাদেশের নাগরিক হিসেবে অন্যতম জোরালো প্রমাণপত্র কিন্তু দেশের গন্ডি পেরোলেই এ পরিচয়পত্র প্রায় অচল। সেখানে কেবল পাসপোর্টই ব্যক্তির হয়ে স্বাক্ষ্য দিতে পারে এবং প্রমাণ করতে পারে তিনি বাংলাদেশের নাগরিক। তাই শুধু বিদেশ যাওয়া নয়, মর্যাদাপূর্ণ স্বীকৃতির জন্যও প্রত্যেক নাগরিকেরই পাসপোর্ট থাকা উচিত। আজ আপনাদের সাথে শেয়ার করবো অনলাইনে পাসপোর্ট করার নতুন নিয়ম।

ই-পাসপোর্টের সুবিধা

নিরাপত্তা চিহ্ন হিসেবে ই-পাসপোর্টে থাকবে চোখের মণির ছবি ও আঙুলের ছাপ। আর এর পাতায় থাকা চিপসে সংরক্ষিত থাকবে পাসপোর্টধারীর সব তথ্য। এই সিকিউরিটি ব্যবস্থার কারণে পরিচয় গোপন করা বা জালিয়াতি সম্ভব হবে না।
ইমিগ্রেশন চেকপোস্ট পেরিয়ে যাওয়া ই-পাসপোর্টধারী ব্যক্তি লাইনে না দাঁড়িয়েই স্বয়ংক্রিয়ভাবে ইমিগ্রেশন শেষ করতে পারবেন।
ই-পাসপোর্টের জন্য বিমান, স্থল ও নৌবন্দরে ই-গেট স্থাপন করা হবে।

ই-পাসপোর্টের মেয়াদ

বর্তমানে সাধারণ পাসপোর্টের জন্য ফি জমা দিতে হয় তিন হাজার ৪৫০ টাকা এবং জরুরি পাসপোর্টের জন্য দিতে হয় ছয় হাজার ৯০০ টাকা। মেয়াদ পাঁচ বছর। ই-পাসপোর্টের মেয়াদ বয়সভেদে পাঁচ ও দশ বছর করার বিষয়টি চূড়ান্ত করা হয়েছে। জানা গেছে, ১৮ বছরের নিচে ও ৫৫ বছরের বেশি বয়সীদের পাঁচ বছর মেয়াদি পাসপোর্ট এবং ১৯ থেকে ৫৫ বছর বয়সীদের জন্য ১০ বছর মেয়াদি পাসপোর্ট দেওয়া হবে।

ই-পাসপোর্টের করতে টাকার পরিমান

বর্তমানে সাধারণ ও জরুরি পাসপোর্ট করতে যথাক্রমে তিন হাজার ও ছয় হাজার টাকা ফি দিতে হয়। এবার পাঁচ ও দশ বছর মেয়াদি পাসপোর্ট নিতে যথাক্রমে সাড়ে ৫ হাজার ও ১১ হাজার টাকা ফি লাগবে। এর সঙ্গে ভ্যাট যুক্ত হলে সাধারণ পাসপোর্ট করতে ৬ হাজার ৩২৫ টাকা এবং জরুরি পাসপোর্টে ১২ হাজার ৬৫০ টাকা খরচ হবে।

কোথায় থেকে করবেন ই-পাসপোর্ট

দেশে ৭১টি পাসপোর্ট অফিস রয়েছে। প্রতিদিন এসব অফিসে প্রায় ২০ হাজার নতুন পাসপোর্ট ও নবায়নের আবেদন জমা পড়ে। এর মধ্যে ঢাকার আগারগাঁও, যাত্রাবাড়ী, উত্তরা ও কেরানীগঞ্জ পাসপোর্ট অফিসে জমা পড়ে গড়ে চার হাজার আবেদন। বাংলাদেশের পাসপোর্টে ইসরাইল ব্যতীত পৃথিবীর আর সব দেশে ভ্রমণের অনুমতি রয়েছে। ইমিগ্রেশন ও পাসপোর্ট অধিদপ্তর নিয়ন্ত্রণাধীন প্রতিটি বিভাগীয়/আঞ্চলিক পাসপোর্ট অফিসে মুক্তিযোদ্ধা, বৃদ্ধ নাগরিক, অসুস্থ ব্যক্তি ও প্রতিবন্ধী নাগরিকদের জন্য আলাদা কাউন্টারে আবেদন করার ব্যবস্থা আছে।

১। ঢাকার আগারগাঁও পাসপোর্ট অফিস : ঢাকা শহরের সবুজবাগ, মতিঝিল পল্টন থেকে শুরু করে আশুলিয়া সাভার, ধামরাই মোট ২৮টি থানার লোক এখান থেকে পাসপোর্ট করতে পারবে।
২। ঢাকা জেলা প্রশাসকের কার্যালয় : ঢাকা মহানগরের ও জেলার বাকি ১০ টি থানায় বসবাসকারীরা এখন থেকে পাসপোর্ট করতে পারবেন।
৩। দেশের আঞ্চলিক পাসপোর্ট অফিসগুলো থেকে পাসপোর্ট বানাতে পারবেন।
৪। এছাড়া প্রতিটি জেলায় জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ে পাসপোর্টে আলাদা শাখা থেকে পাসপোর্ট বানাতে পারেন।
৫। প্রতিটি জেলার জিপিও থেকে পাসপোর্ট বানাতে পারেন।
৬। বাংলাদেশের পাসপোর্ট অফিস বা বিদেশে বাংলাদেশী দূতাবাস হতে পাসপোর্ট দেয়া হয়ে থাকে।

অনলাইনে ই-পাসপোর্ট ফরম পূরণের সঠিক নিয়মাবলী

পাসপোর্ট (Passport) ছাড়া আপনি কি নিজকে বাংলাদেশী নাগরিক ভাবতে পারেন। নিজের পাসপোর্ট (Passport) থাকা জরুরী। বর্তমানে অনলাইনে পাসপোট (Passport) ফরম জমা দিতে লম্বা লাইনে দাঁড়াতে হয় না। দালালের খপ্পড় বা পাসপোর্ট (Passport) অফিসের কারো কোন সমস্যার ছাড়াই একদম সরাসরি গিয়ে ছবি তুলে ও ফিঙ্গারিং করা যায়। এতে অনাহুত খরচের ঝামেলা নেই।
যারা অনলাইনে নতুন ই-পাসপোর্ট করতে যাচ্ছেন, তাদের জন্য ব্যাপারটাকে আরো সহজ করে তোলার জন্য এই টিউন। আপনিও খুব সহজেই পারবেন। কারণ অনলাইনে পাসপোর্ট (Passport) পাওয়া অনেক অনেক সহজ। পাসপোর্ট (Passport) হাতে পাওয়াসহ সব মিলিয়ে আপনাকে মাত্র তিনদিন যেতে হবে। আসেন, একদম প্রথম থেকে জানি কিভাবে অনলাইনে ই-পাসপোর্ট (Passport) ফর্ম পূরণ করবেন এবং নিয়মকানুনগুলো।

১ম ধাপ : ব্যাংকে টাকা জমা
পাসপোর্ট করার ক্ষেত্রে প্রথম যে ধাপ তা হচ্ছে সরকার নির্ধারিত ফি ব্যাংকে টাকা জমা দেয়া। এটি আপনাকে ব্যাংকে গিয়ে জমা দিয়ে আসতে হবে কারণ অনলাইনে আবেদন ফর্মে ঐ ব্যাংকের রিসিট নম্বর এবং জমার তারিখ সংযুক্ত করতে হবে। বাংলাদেশের পাসপোর্ট অফিস কর্তৃক নির্ধারিত ব্যাংকের শাখাতে আপনি পাসপোর্টের ফি জমা দিতে পারবেন।

সোনালী ব্যাংকের পাশাপাশি আরও ৫টি ব্যাংকে টাকা জমা দিতে পারবেন।
ওয়ান ব্যাংক
ট্রাস্ট ব্যাংক
ব্যাংক এশিয়া
প্রিমিয়ার ব্যাংক
ঢাকা ব্যাংক।
এসব ব্যাংকে অনলাইনে ক্রেডিট কার্ড ও মোবাইলের মাধ্যমেও পাসপোর্টের ফি পরিশোধ করা যাবে।

পাসপোর্ট ফিস সংক্রান্ত তথ্যাবলী
রেগুলার ফি ৩০০০/- টাকা [৩০০০.০০ + ১৫% ভ্যাট = ৩৪৫০.০০ টাকা] ১ মাসের মধ্যে পাসপোর্ট (Bangladeshi Passport) পেতে হলে। আর ইমারজেন্সি ফি ৬০০০/- টাকা [৬০০০.০০ + ১৫% ভ্যাট = ৬৯০০.০০ টাকা] ১০ দিনের মধ্যে পাসপোর্ট (Passport) পেতে হলে।

২য় ধাপ : অনলাইন পাসপোর্ট ফরমপূরণ
অনলাইনে ফরম পূরণ ই-পাসপোর্টের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ধাপ। অনলাইনের ফরম পূরণ করতে নির্দেশনা ভালোভাবে দেখুন, সতর্কতার সাথে পূরণ করুন। অনলাইনে ফরম পূরণের জন্য প্রথমে http://www.dip.gov.bd/ ইমিগ্রেশন ও পাসপোর্ট অধিদপ্তর এর ওয়েবসাইটে যেতে হবে।
তারপর ‘I have read the above information and the relevant guidance notes’ টিক চিহ্ন দিয়ে ‘continue to online enrollment’ এ ক্লিক করতে হবে।

আপনার নাম ও ব্যক্তিগত তথ্যাদি- যেমন : আপনার নাম, পিতা-মাতার নাম। এই নামগুলো যেন শিক্ষাগত সার্টিফিকেট কিংবা জাতীয় পরিচয়পত্রের মতো একই হয়। কোনো তথ্য ভুল হলে পাসপোর্টে হতে সমস্যা হবে।
মেইল অ্যাড্রেস ও মোবাইল নম্বার দেয়ার ক্ষেত্রে অবশ্যই যেটি ব্যবহৃত হচ্ছে সেটি দেয়া উচিত।
টাকা জমা দেয়ার তারিখ এবং রিসিট নম্বর দিতে হবে।
পাসপোর্ট টাইপ সিলেক্ট করতে হবে ‘ordinary’।
যে অংশগুলো লাল স্টার মার্ক দেয়া রয়েছে, সেগুলো অবশ্যই পূরণ করতে হবে।

Delivery Type অংশে ৩০ দিনের জন্য হলে Regular এবং ১৫ দিনের জন্য হলে Express সিলেক্ট করতে হবে।
সম্পূর্ণ ফরমটি পূরণ হলে পুনরায় এটি চেক করতে হবে, সব তথ্য টিক আছে কি না, তা যাচাই করে পরবর্তী ধাপে যেতে হবে। সফলভাবে সাবমিট করা হলে পূরণ করা ফরমের ডাউনলোড করার লিঙ্ক পাবেন। ফর্মটি ডাউনলোড করে নিন। পিডিএফ কপি যে ই-মেইল অ্যাড্রেস দিয়ে ফরম পূরণ করা হয়েছে, সেখানে চলে আসবে।

অনলাইনে একাউন্ট খোলার পরপরই আপনাকে ইউজার আইডি এবং পাসওয়ার্ড জানিয়ে দেবে। সেটা সংরক্ষণ করুন। এইধাপ এইখানেই শেষ।

৩য় ধাপ : আবেদন ফর্মের প্রিন্ট এবং সত্যায়ন

পূরণকৃত ফর্মের পিডিএফ কপির ২ কপি কালার প্রিন্ট করতে হবে। যেসব জায়গা হাতে পূরণ করতে হবে সেগুলো করে ফেলুন। এতে আবেদনকারীর স্বাক্ষর করার স্থানে সই করতে হবে।
এবার জাতীয় পরিচয়পত্রের ফটোকপি এবং নিজের ৫৫ × ৪৫ মিলিমিটার আকারের রঙিন ছবি (পাসপোর্ট সাইজ ছবি) একটি করে উভয় ফর্মে আঠা দিয়ে লাগানোর পর দুটো ই-পাসপের্টের আবেদন ফর্মই সত্যায়িত করতে হবে। পরিচিত কোনো প্রথম শ্রেণির কর্মকর্তার কাছ থেকে সত্যায়িত করে নিতে হবে। পরিচিত কাউকে দিয়ে সত্যায়ন করালে ভাল। কারণ ওই কর্মকর্তার নাম, যোগাযোগ ও ফোন নম্বর এবং জাতীয় পরিচয় পত্রের নম্বর ফরমে লিখতে হয়। ছবিটি এমনভাবে সত্যায়িত করতে হবে যেন সত্যায়নকারীর স্বাক্ষর এবং সীলমোহর এর অর্ধেক অংশ ছবির উপর আর বাকি অর্ধেক অংশ ফরমের কাগজে থাকে। সত্যায়ন শেষে পুরো ফর্মটি রিচেক করুন।

৪র্থ ধাপ : পুরো ফরম রি-চেক

সত্যায়িত ছবি এবং ব্যাংকের রিসিট আঠা দিয়ে ফরমের সঙ্গে যুক্ত করতে হবে।
জাতীয় পরিচয়পত্রের সত্যায়িত কপিটিও প্রিন্ট করা ফরমটির সঙ্গে যুক্ত করে দিতে হবে।
শিক্ষার্থী হিসেবে আবেদন করলে অবশ্যই স্টুডেন্ট আইডি কার্ডের ফটোকপি সত্যয়িত করে ফরমের সঙ্গে যুক্ত করতে দিতে হবে। এসব ধাপ শেষ করলে ফর্মটি জমা দেয়ার জন্য প্রস্তুত।

৫ম ধাপ : ফরম জমা এবং ছবি তোলা

অনলাইনে ফর্ম পূরণের ১৫ দিনের মধ্যে ফর্মের প্রিন্ট কপি, সত্যায়িত ছবি, জাতীয় পরিচয়পত্র অথবা জন্ম নিবন্ধন সনদের সত্যায়িত ফটোকপি (সাথে অবশ্যই অরিজিনাল কপি সথে নিবেন, দেখতে চাইবে) এবং স্টুডেন্ট হিসেবে আবেদন করলে আইডি কার্ডের ফটোকপি পাসপোর্ট অফিসে নিয়ে যেতে হবে। পাসপোর্ট অফিসে যাওয়ার সময় বা ছবি তোলার সময় সাদা পোশাক, সাদা টুপি এবং চোখে চশমা পরা যাবে না।
সকালের দিকে পাসপোর্ট অফিসে গেলে ভালো হয়। তখন লাইনে ভিড় কম থাকে সরাসরি মেইন গেইট দিয়ে মূল অফিসে ঢুকতে হবে।
আপনার ফর্ম সাথে নিয়ে সেখানে দায়িত্বরত সেনা সদস্যকে বলুন কোথা যেতে হবে। তিনি আপনাকে দেখিয়ে দিবে কোথায় ফর্ম সহ আপনাকে যেতে হবে।

আবেদনপত্রটির ভেরিফিকেশন যাচাই ও জমা দেওয়ার আগে দায়িত্বরত কর্মকর্তা আবেদনপত্রে সিলসহ স্বাক্ষর করবেন। এরপর আবেদনপত্রটি নির্দিষ্ট স্থানে জমা দিতে হবে। পাসপোর্ট অফিসেই বেশ কয়েকটি বুথ আছে, সেখানেই জমা দিতে হবে।
আবেদনপত্রটি জমা দেয়ার সময় পাসপোর্ট অফিসের দায়িত্বরত ব্যক্তি আপনার তথ্যগুলো কম্পিউটারে এন্ট্রি করে রাখবেন। এরপর তিনি আপনাকে একটি টোকেন দেবেন। সে টোকেনসহ আবেদনপত্রটি নিয়ে ছবি তোলার জন্য আরেকজন কর্মকর্তার কাছে যেতে হবে। জাতীয় পরিচয়পত্রের জন্য যেভাবে ছবি তোলা হয়েছিলো, এখানেও একইভাবে নির্দিষ্ট মাপের ছবি তোলা হবে। এছাড়াও দুই হাতের আঙুলের ছাপও দিতে হবে ইলেকট্রনিক মেশিনে। এরপর নেয়া হবে ইলেকট্রনিক স্বাক্ষর। তবে, ইলেকট্রনিক স্বাক্ষর আবেদনপত্রের স্বাক্ষরের সাথে যেনো মিল থাকে সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে।

এরপর নির্দিষ্ট রুমে গিয়ে সিরিয়াল আসলে ছবি তোলার জন্য ডাক পড়বে। ছবি, স্বাক্ষর ও আঙ্গুলের ছাপ প্রদানের পুর্বে একটি রশিদ প্রদান করা হয় যাতে পাসপোর্ট এ প্রদর্শিত সকল তথ্য দেওয়া থাকে। উক্ত রশিদে আপনার তথ্য সঠিক আছে কিনা যাচাই করে নিন এবং কোন তথ্য ভুল থাকলে সংশ্লিস্ট অপারেটরকে জানিয়ে তাৎক্ষণিক সংশোধন করে নিতে পারবেন। উল্লেখ্য যে, পাসপোর্ট আবেদনকারীর ছবি, স্বাক্ষর ও আঙ্গুলের ছাপ প্রদানের পর মূল ডেলিভারী রশিদ প্রদান করা হয় এবং এরপর সংশোধনের আর কোন সুযোগ থাকে না। ছবি তোলার ও ফিঙ্গারপ্রিন্ট এর কাজ শেষ হলে পাসপোর্ট রিসিভের একটা রিসিট দেয়া হবে। সেটা যত্ন করে রাখুন।

সাধারণত ফরম জমা নেয়া হয় প্রতিদিন সকাল নয়টা থেকে দুপুর ১:৩০ মিনিট পর্যন্ত। আর পাসপোর্ট বিতরণ করা হয় সকাল ৯টা থেকে বিকেল ৫টা পর্যন্ত। সরকারি ছুটির দিন (শুক্র ও শনিবার) বাদ দিয়ে সপ্তাহের বাকি পাঁচ দিন খোলা থাকে।

৬ষ্ঠ ধাপ : পুলিশ ভেরিফিকেশান ও পাসপোর্ট গ্রহণ
যদি আপনার স্থায়ী আর বর্তমান ঠিকানা আলাদা হয়, তবে দুই জায়গাতেই পুলিশ ভেরিফিকেশান হয়ে থাকে। ভেরিফিকেশনের সময় আপনার জাতীয় পরিচয় পত্রের ফটোকপি ও বিদ্যুৎ বিল/ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান কর্তৃক প্রদত্ত সার্টিফিকেট প্রয়োজন হবে। পুলিশ ভেরিফিকেশান সাপেক্ষে, রিসিট পাওয়ার একমাস বা ১৫দিনের মধ্যেই আপনি পাসপোর্ট পাবেন। ভেরিফিকেশান শেষ হলে আপনার মোবাইলে এস এম এস আসবে। যেদিন এস এম এস আসবে তারপরেই আপনি পাসপোর্ট সংগ্রহ করতে পারবেন। ব্যস, এইবার ই-পাসপোর্ট হাতে নেয়ার পালা।

পাসপোর্টে আপনার তথ্য সঠিক আছে কিনা যাচাই করে নিন এবং কোন তথ্য ভুল থাকলে সংশ্লিস্ট অপারেটরকে জানিয়ে তাৎক্ষণিক পাসপোর্ট সংশোধন করে নিতে পারবেন।
ভুল হয়ে গেলে, ই-পাসপোর্ট, পাসপোর্ট (এমআরপি) রি-ইস্যু/তথ্য পরিবর্তন/পাসপোর্ট সংশোধন এর নিয়মাবলী ও আবেদন ফরম, পাসপোর্ট নবায়ন এর জন্য এই ফরমটি পূরণ করে বর্তমান পাসপোর্ট এর ফটোকপি ও ব্যাংকে টাকা জমার রশিদ সংযুক্ত করতে হবে এবং মূল পাসপোর্টটি অবশ্যই সঙ্গে নিয়ে আসতে হবে।
পাসপোর্ট নবায়ন করতে হলে, নির্দিষ্ট আবেদনপত্র পূরণ করে ব্যাংকে নির্ধারিত ফি জমা দিয়ে রশিদটি ওই আবেদনপত্রের সঙ্গে আঠা দিয়ে লাগিয়ে পাসপোর্ট সহ জমা দিতে হবে।

আবেদনের সঙ্গে যে সমস্ত কাগজপত্র সংযুক্ত করতে হবে-

চেয়ারম্যান/ ওয়ার্ড কমিশনার প্রদত্ত সনদ/ ভোটার আইডি কার্ড/ জাতীয় পরিচয়পত্র/ জন্ম সনদপত্র অথবা বিদ্যুৎ, গ্যাস/ পানির বিল/ বাড়ির দলিলের ফটোকপি ইত্যাদি।
বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে কর্মরত কর্মকর্তা-কর্মচারীর ক্ষেত্রে সংশ্লিস্ট প্রতিষ্ঠান প্রদত্ত প্রত্যয়নপত্র/পরিচয়পত্র দাখিল করতে হবে।
ছাত্র/ছাত্রীদের ক্ষেত্রে সংশ্লিস্ট প্রতিষ্ঠান প্রদত্ত প্রত্যয়ন পত্র/ পরিচয়পত্র দাখিল করতে হবে।
পাসপোর্ট করার সময় লক্ষ্যণীয়

পাসপোর্ট করার সময় যেসব বিষয় জানা দরকার—

১। সরকারি, আধাসরকারি, স্বায়ত্তশাষিত ও রাষ্ট্রায়ত্ত সংস্থার স্থায়ী কর্মকর্তা/কর্মচারী, অবসরপ্রাপ্ত সরকারি চাকুরীজীবি, সরকারি চাকুরীজীবিগণের নির্ভরশীল স্বামী/স্ত্রী এবং তাদের ১৫ (পনের) বৎসরের কম বয়সের সন্তান, ৫ (পাঁচ)/১০ (দশ) বৎসরের অতিক্রান্ত, সমর্পণকৃত (সারেন্ডারড)দের জন্য একটি ফরম ও অন্যান্যদের ক্ষেত্রে নতুন পাসপোর্টের জন্য ২ (দুই) কপি পূরণকৃত পাসপোর্ট ফরম দাখিল করতে হবে।

২। অপ্রাপ্তবয়স্ক(১৫ বছরের কম) আবেদনকারীর ক্ষেত্রে আবেদনকারীর পিতা ও মাতার একটি করে রঙিন ছবি (৩০ x ২৫ মিঃমিঃ) আঠা দিয়ে লাগানোর পর সত্যায়ন করতে হবে।

৩। জাতীয় পরিচয়পত্র অথবা জন্ম নিবন্ধন সনদ এবং প্রযোজ্য ক্ষেত্রে প্রাসঙ্গিক টেকনক্যাল সনদসমূহের (যেমন ডাক্তার, ইঞ্জিনিয়ার, ড্রাইভার ইত্যাদি) সত্যায়িত ফটোকপি।

৪। যে সকল ব্যক্তিগণ পাসপোর্টের আবেদনপত্র ও ছবি প্রত্যায়ন ও সত্যায়ন করতে পারবেন – সংসদ সদস্য, সিটি কর্পোরেশনের মেয়র, ডেপুটি মেয়র ও কাউন্সিলরগণ, গেজেটেড কর্মকর্তা, পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক, উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ও ভাইস চেয়ারম্যান, পৌরসভার মেয়র ও পৌর কাউন্সিলরগণ, বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক, বেসরকারি কলেজের অধ্যক্ষ, বেসরকারি উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক, জাতীয় দৈনিক পত্রিকার সম্পাদক, নোটারী পাবলিক ও আধাসরকারি/স্বায়ত্তশাসিত/রাষ্ট্রায়ত্ত সংস্থার জাতীয় বেতন স্কেলের ৭ম ও তদুর্ধ্ব গ্রেডের গ্রেডের কর্মকর্তাগণ।

৫। সরকারি, আধাসরকারি, স্বায়ত্তশাষিত ও রাষ্ট্রায়ত্ত সংস্থার স্থায়ী কর্মকর্তা/কর্মচারী ও তাদের স্বামী/স্ত্রী এবং সরকারি চাকুরীজীবিগণের ১৫ (পনের) বৎসরের কম বয়সের সন্তান সাধারণ ফি জমা করে জরুরী সুবিধা পাবেন।

৬। প্রযোজ্য ক্ষেত্রে প্রাসঙ্গিক জিও (GO)/এনওসি(NOC) দাখিল করতে হবে।

৭। অবসরপ্রাপ্ত সরকারি চাকুরীজীবি ও তাদের নির্ভরশীল স্বামী/স্ত্রী সাধারণ ফি প্রদান করে জরুরী সুবিধা পাবেন। এক্ষেত্রে অবসর গ্রহণের সনদ দাখিল করতে হবে।

৮। পাসপোর্ট সমর্পণকৃতদের (সারেন্ডারড) আবেদনপত্রের সাথে অবশ্যই পূর্বের পাসপোর্ট নিয়ে আসতে হবে।

৯। কূটনৈতিক পাসপোর্ট লাভের যোগ্য আবেদনকারীগণকে পূরণকৃত ফরম ও সংযুক্তিসমূহ পররাষ্ট্র মন্ত্রনালয়ে জমা দিতে হবে।

১০। শিক্ষাগত বা চাকুরীসূত্রে প্রাপ্ত পদবীসমূহ (যেমন ডাক্তার, ইঞ্জিনিয়ার, ডক্টর, পিএইচডি ইত্যাদি) নামের অংশ হিসেবে পরিগণিত হবে না। ফরমের ক্রমিক নং ৩ পূরনের ক্ষেত্রে, একাধিক অংশ থাকলে প্রতি অংশের মাঝখানে ১টি ঘর শূন্য রেখে পূরণ করতে হবে।

১১। আবেদনকারীর পিতা, মাতা, স্বামী/স্ত্রী মৃত হলেও তার/তাদের নামের পূর্বে ‘মৃত/মরহুম/Late’ লেখা যাবে না।

১২। নাম সংশোধনের ক্ষেত্রে এসএসসি বা সমমানের পরীক্ষার সনদ অথবা প্রথম শ্রেণীর ম্যাজিস্ট্রেট আদালতের হলফনামা লাগবে।

১৩। পেশা পরিবর্তন এর ক্ষেত্রে পরিবর্তিত পেশার সপক্ষে সনদ আবশ্যক হবে।

১৪। স্থায়ী ঠিকানা পরিবর্তনের ক্ষেত্রে ভোটার তালিকা বা ভোটার পরিচয়পত্র অথবা পরিবর্তিত ঠিকানা সম্পর্কে যে কোন নির্ভরযোগ্য প্রমাণ আবশ্যক হবে।

১৫। সন্তানের নাম সংযোজনের ক্ষেত্রে ওই সন্তানের জন্ম সনদ আবেদনপত্রের সঙ্গে দাখিল করতে হবে।
পাসপোর্ট নবায়ন করতে হলে:
নির্দিষ্ট আবেদনপত্র পূরণ করে ব্যাংকে নির্ধারিত ফি জমা দিয়ে রশিদটি ওই আবেদনপত্রের সঙ্গে আঠা দিয়ে লাগিয়ে পাসপোর্টসহ জমা দিতে হবে।
তথ্য: সরকারি কর্মকর্তা/কর্মচারীদের পুলিশ ভেরিফিকেশন লাগে না। এই পাসপোর্টের রং সবুজ হয় না, নীল রংয়ের হয় এবং উপরে অফিসিয়াল পাসপোর্ট লেখা থাকে।

ই-পাসপোর্ট পেতে ওয়ানস্টপ সার্ভিস

ওয়ানস্টপ সার্ভিস পাওয়ার জন্য আপনাকে সাধারণ পাসপোর্টের মতোই ফরম সংগ্রহ করা জমাসহ সব আনুষ্ঠানিকতা শেষ করতে হবে। এক্ষেত্রে ফি’র পরিমাণ ৬৪ পাতার জন্য ৬০০০ টাকা ৪৮ পাতার জন্য ৫০০০ টাকা। পাসপোর্ট পেতে সময় লাগবে ২-৩ ঘণ্টা। যে কোনো ধরনের ভুল-সংশোধন করতে ফি লাগবে ৫০০ টাকা। নবায়ন করলে ফি লাগে ২৫০০ টাকা। উল্লেখ্য ওয়ানস্টপ সার্ভিস প্রদান করে পুলিশ ভেরিফিকেশনে পাঠানো হয়। যদি বিরূপ প্রতিবেদন পাওয়া যায় তাহলে পাসপোর্ট বাতিল।

অনলাইনে নতুন ই-পাসপোর্ট আবেদন করতে http://www.passport.gov.bd/
হাতে লেখা পাসপোর্ট আবেদন ফরম ডাউনলোড করতে http://www.passport.gov.bd/Reports/MRP_Application_Form%5BHard%20Copy%5D.pdf
পাসপোর্ট চেক করার লিঙ্ক http://www.immi.gov.bd/passport_verify.php

আশা করি, পাসপোর্ট কি, অনলাইনে পাসপোর্ট করার নিয়মাবলী, নতুন ই-পাসপোর্ট বানাতে কী কী কাগজপত্র লাগে, ই-পাসপের্ট করার খরচ সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে পেরেছেন। আরোও কোন প্রশ্ন থাকলে টিউমেন্টে জানান।

এই টিউনটি প্রথমে এখানে প্রকাশিত হয়েছিল

Level 0

আমি সুমন আহমেদ। বিশ্বের সর্ববৃহৎ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির সৌশল নেটওয়ার্ক - টেকটিউনস এ আমি 5 বছর 2 মাস যাবৎ যুক্ত আছি। টেকটিউনস আমি এ পর্যন্ত 2 টি টিউন ও 0 টি টিউমেন্ট করেছি। টেকটিউনসে আমার 1 ফলোয়ার আছে এবং আমি টেকটিউনসে 0 টিউনারকে ফলো করি।


টিউনস


আরও টিউনস


টিউনারের আরও টিউনস