ওপেন সোর্স সফটওয়্যার ও কোম্পানি গুলো যেভাবে টাকা আয় করে

টিউন বিভাগ ওপেন সোর্স
প্রকাশিত
জোসস করেছেন

ওপেন সোর্স সফটওয়্যার সম্পর্কে তথ্য প্রযুক্তির বাজারে অনেকগুলো মিথ চালু রয়েছে। তাদের মধ্যে একটি অন্যতম মিথ হচ্ছে, ওপেন সোর্স এবং প্রোফিট দুটি দুই মেরুর বিষয়! ওপেন সোর্স সফটওয়্যারগুলো সাধারণত বিনামুল্যে বাজারে ছাড়া হয়। তাহলে ওপেন সোর্স সফটওয়্যার থেকে কিভাবে ডেভেলপারসরা আয় করে থাকেন? হ্যাঁ! আমি আজকের টিউনে আপনাদের কে সেটা বুঝাতেই চলে এসেছি।

ব্যাপারটা অনেকটা এরকম, সামাজিক ব্যবস্যা প্রতিষ্ঠানের কথাই ধরুন, তারা সমাজের সেবামূলক কাজও করছে আবার “ব্যবসা”ও করছে! ঠিক সেরকমই ভাবেই ওপেন সোর্স সফটওয়্যার ডেভেলপারসরাও তাদের ওপেন সোর্স সফটওয়্যারগুলোকে মুনাফা আয় করে নিচ্ছেন। তবে ওপেন সোর্স সফটওয়্যার থেকে মুনাফা উঠানো খুব সেন্সিটিভ একটি বিষয়। কারণ অন্যান্য সফটওয়্যারগুলোর মতো এই ওএসএস সফটওয়্যারগুলোকে পন্য হিসেবে দেখা চলবে না, এদেরকে প্ল্যাটফর্ম হিসেবে নিতে হবে, আর প্ল্যাটফর্ম একবার রানিং হলে সেখান থেকে আয় করা অসম্ভব কিছু না।

সবথেকে বড় ওপেন সোর্স সফটওয়্যারগুলোর মধ্যে অন্যতম হচ্ছে মজিলা ফায়ারফক্স ওয়েব ব্রাউজার। প্রায় এক যুগের বেশি সময় ধরে মজিলা ফায়ারফক্স আমার ব্যবহার করে আসছি। এখন মজিলা ফায়ারফক্স কিন্তু ফ্রি সফটওয়্যার! তাহলে এর নির্মাতারা যদি মুনাফা আয় করতে না পারতো তাহলে বহু আগেই মজিলা ফায়ারফক্স বন্ধ হয়ে যেত! কিন্তু দুদিন পর পর আমরা মজিলা ফায়ারফক্সের নতুন নতুন আপডেট পেয়ে যাচ্ছি! এর থেকে বড় উদাহরণ আর হতে পারে না।

তবে চলুন দেখে নেই কিভাবে ওপেন সোর্স সফটওয়্যারগুলো থেকে নির্মাতারা আয় করে থাকেন:

সার্ভিস এবং সাপোর্টের মাধম্যে:

ওপেন সোর্স সফটওয়্যার থেকে আয়ের প্রধান এবং সবচেয়ে কমন পদ্ধতি হচ্ছে সফটওয়্যারের সাথে সার্ভিস এবং সাপোর্ট এর ব্যবস্থা করা। ওপেন সোর্স সফটওয়্যার মানে আপনি সফটওয়্যারটির সোর্স কোডও ফ্রি তে বিলিয়ে দিচ্ছেন। তবে এরপরেও আপনি কিছু প্রকার ইউজার পাবেন যারা আপনার সফটওয়্যারকে নিজেদের মতো করে কাস্টমাইজেশন করে ব্যবহার করতে চায় কিন্তু নিজের মতো কাস্টমাইজেশন করার জ্ঞান, সময় অথবা আগ্রহ নেই। তখন এই সকল ইউজারদের কাছ থেকে টাকার বিনিময়ে আপনি তাদের কাস্টমাইজেশনের কাজ করে দিয়ে ইনকাম করতে পারেন। অনেক ক্ষেত্রে বড় বড় প্রতিষ্ঠানের কাস্টমাইজেশনের কাজও পেয়ে যেতে পারেন আপনি, তখন চোখে মুখে শুধু টাকা আর টাকা দেখবেন! হাহাহা।

আপনার সফটওয়্যারের A to Z আপনার জানা রয়েছে। অনেক বড় বড় কোম্পানির কাছে যদি আপনার সফটওয়্যারটি দিয়ে দিতে পারেন তখন সফটওয়্যারের মেইনটেন্স এর কাজের জন্য আপনি টাকা ইনকাম করতে পারেন। কারণ বড় বড় কোম্পানির কাছে টাকার থেকে সময় খুব মূল্যবান জিনিস। কারণ তারা জানে যে আপনার সফটওয়্যারের মেইনটেন্স আপনিই কম সময়ে সঠিক ভাবে করতে পারবেন। তাই বলা যায়, ওএসএস সফটওয়্যার মেইনটেন্স বা রক্ষনাবেক্ষন থেকেও নির্মাতারা ইনকাম করে থাকেন। সার্ভার বেইডস সফটওয়্যারগুলো এটার একটি উদাহরণ হিসেবে ধরা যায়।

অথবা, ওএসএস সফটওয়্যারটি যদি কোনো বিষয়ে শিক্ষার কাজে ব্যবহার করা হয়ে থাকে তাহলে অনেক সময় কোম্পানিগুলো সরাসরি সফটওয়্যার নির্মাতাকে উক্ত বিষয়ের উপর শিক্ষাদানের জন্য চাকরিতে নিয়ে নেয়। অথবা আপনার সফটওয়্যারটি যদি জনপ্রিয়তা অর্জন করতে পারে তাহলেও আপনি বিভিন্ন ওর্য়াকশপের ব্যবস্থা করে সরাসরি উক্ত বিষয়ের উপর লোকজনদেরকে শিক্ষাদানের মাধ্যমে ইনকাম করতে পারবেন।

ইন্সট্রাকশন বিক্রির মাধ্যমে:

অনেক ইউজার রয়েছেন যারা নিজেদেরকে পর্দার আড়ালে রেখে নিজেদেরকে বিশ্বের সামনে উপস্থাপন করতে চান। তারা ওপেন সোর্স সফটওয়্যারগুলোকে নিজেরাই নিজেদের মতো করে কাস্টমাইজেশন করে নিতে পছন্দ করেন। তবে এরা অনেকেই নিজেদের পছন্দমত সফটওয়্যার কাস্টমাইজেশন করতে পারেন না। তখন সফটওয়্যারের নির্মাতা হিসেবে আপনি তাদের কাছে সফটওয়্যারটি কিভাবে নিজের মতো করে এডিট করতে পারবে, সেই পদ্ধতিগুলো বিক্রি করতে পারেন। এবং তারা এর জন্য আপনাকে টাকাও পে করবে।

বড় বড় কোম্পানিগুলোর নিজস্ব সফটওয়্যার নির্মাতা থাকে। কিন্তু অনেক সময় তারাও কিভাবে আপনার ওএসএস সফটওয়্যার এডিট করবে তা বুঝতে পারেন না। তখন আপনি তাদের কাছে টাকার বিনিময়ে এডিটিং প্রসেসগুলো দিয়ে দিতে পারেন। অথবা আপনার সফটওয়্যারটি যদি বড়সড় কোডিং সাইজের হয়ে থাকে তাহলে আপনি টিউটোরিয়ালের মাধ্যমেও টাকা ইনকাম করতে পারবেন। কমপ্লেক্স ফ্রেমওর্য়াক জাতীয় বিভিন্ন সফটওয়্যার যেমন গেম ইঞ্জিন এডিট করা কিন্তু খুবই সুক্ষ এবং কস্টসাধ্য ব্যাপার। এক্ষেত্রে পেইড টিউটোরিয়ালের মাধ্যমে অনেক নির্মাতারা ইনকাম করছেন।

প্রিমিয়াম প্লাগইনস বিক্রির মাধ্যমে:

ওপেন সোর্স লাইসেন্স মোতাবেক কোনো সফটওয়্যার ব্যবহারে যদি ইউজারকে টাকাপয়সা খরচ করতে হয় তাহলে উক্ত সফটওয়্যারকে ওপেন সোর্স সফটওয়্যার হিসেবে আখ্যায়িত করা যাবে না। তবে আজকাল অনেক সফটওয়্যার নিমার্তারা কৌশলে এই বিষয়টিকে এড়িয়ে গিয়ে পেইড এবং ফ্রি একসাথে মিশ্রণ করে সফটওয়্যার নির্মাণ করছেন এবং তা থেকে ইনকাম কামিয়ে নিচ্ছেন। যেমন আজকাল  আমরা বিভিন্ন সফটওয়্যারের ফ্রি এবং প্রিমিয়ার সংস্করণ দেখতে পাই, যেখানে ফ্রি সংস্করনের চাইতে প্রিমিয়ার সংস্করণে বেশি ফিচার দেওয়া থাকে এবং এখানেই নির্মাতাদের কৌশলের মাধ্যমে তারা ইনকাম করে নিচ্ছেন।

ওয়াডপ্রেস এর কথাই ধরুন, ওয়াডপ্রেস দুনিয়ার একটি অন্যতম সফল ও জনপ্রিয় ওয়েব সিস্টেম। ওয়াডপ্রেস ফ্রিতে যেকেউ ব্যবহার এবং মডিফাই করতে পারবে। তবে ওয়াডপ্রেস এর প্রিমিয়ার প্লাগইন নির্মান করে অনেক ক্ষুদ্র ও একক নির্মাতারা তাদের জীবিকা নিবার্হ করে আসছেন। আবার গুগল প্লে স্টোরের কথাই বিবেচনা করুন। প্রতিটি পেইড অ্যাপসের বিক্রি থেকে গুগল কিছু শতকরা হারে টাকা কামিয়ে নিচ্ছে অ্যাপস নির্মাতাদের কাছ থেকে।  এই ভাবে বলা যাচ্ছে, আপনি আপনার ওপেন সোর্স সফটওয়্যারটি ফ্রিতে বাজারে ছাড়তে পারবেন এবং নিজের তৈরি বিভিন্ন এডভান্স ফিচারসমৃদ্ধ এক্সটেনশনগুলো বিক্রি করতে পারবেন। তবে এখানে সফটওয়্যারটির জনপ্রিয়তা পাবা বা না পাবার উপর এই বিষয়টি নির্ভর করবে।

কর্পোরেট স্পনসরশীপের মাধ্যমে:

ওপেন সোর্স সফটওয়্যার থেকে টাকা ইনকামে এই পদ্ধতি বেশ কস্টসাধ্য কিন্তু এই পদ্ধতিতেই সবথেকে বেশি টাকা ইনকাম করা যায়। আপনার ওপেন সোর্স সফটওয়্যারটি যদি কোনো কোম্পানি কাজের সাথে মিলে যায় এবং তারা যদি আপনার সফটওয়্যারটি পছন্দ করে থাকে তাহলে কোম্পানি আপনার কাছ থেকে সফটওয়্যারটি কর্পোরেট ব্যবহারের জন্য মালিকানাসত্ব কিনে নিবে।

আর কর্পোরেট কাজে কোনো সফটওয়্যার খুব চড়া মুল্যে বিক্রি হয়ে থাকে। অনেক ক্ষেত্রে মালিকানাসত্ব কেনার পরেও সফটওয়্যারটি ব্যবহারে কোনো সমস্যা দেখা দিলে তারা আপনাকেই মেইনটেন্স করার জন্য ডাকবে এবং এখান থেকেও আপনি ইনকাম করে নিতে পারেন। আপনার সফটওয়্যারটি যদি জনসেবা, সমাজসেবা মূলক কাজের জন্য নির্মান করা হয়ে থাকে তাহলে অনেক ক্ষেত্রে এইসব সফটওয়্যারের জন্য ইউজাররা ডোনেশন দিয়ে থাকেন। ডোনেশনের মাধ্যমেও ওএসএস সফটওয়্যার থেকে আয় সম্ভব।

আজকের টিউনের শেষে আমি এটা বলতে চাই যে তথ্য প্রযুক্তির এই যুগের সাথে ওপেন সোর্স সফটওয়্যারগুলো বিভিন্ন ভাবে জড়িয়ে আছে। আর এই সমস্ত ওপেন সোর্স সফটওয়্যারগুলোর থেকে নির্মাতারা বিভিন্ন কৌশল অবলম্বন করে ইনকামের পথ পরিস্কার করে নিচ্ছেন। আজকের টিউনে উল্লেখিত পদ্ধতি ছাড়াও আরো বিভিন্ন পদ্ধতি রয়েছে ওপেন সোর্স সফটওয়্যার থেকে ইনকাম করার। যেমন, বিভিন্ন জনপ্রিয় অ্যাপসগুলোতে বিজ্ঞাপণের মাধ্যমেও নির্মাতারা ইনকাম করে থাকেন। আপনি যদি অন্যান্য কোনো পদ্ধতি জেনে থাকেন তাহলে টিউমেন্টে জানাতে ভুলবেন না যেন। আজ এ পর্যন্

টিউনটি পড়ার জন্য ধন্যবাদ।

Level 10

আমি ফাহাদ হোসেন। Supreme Top Tuner, Techtunes, Dhaka। বিশ্বের সর্ববৃহৎ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির সৌশল নেটওয়ার্ক - টেকটিউনস এ আমি 12 বছর 2 মাস যাবৎ যুক্ত আছি। টেকটিউনস আমি এ পর্যন্ত 661 টি টিউন ও 428 টি টিউমেন্ট করেছি। টেকটিউনসে আমার 149 ফলোয়ার আছে এবং আমি টেকটিউনসে 0 টিউনারকে ফলো করি।

যার কেউ নাই তার কম্পিউটার আছে!


টিউনস


আরও টিউনস


টিউনারের আরও টিউনস


টিউমেন্টস

আপনাকে ধন্যবাদ, আমাদের জন্য অনেক কষ্ট করে অনেক সুন্দর সুন্দর টিউন করছেন। অনেক কিছু জানতে পারলাম ওপেন সোর্স সফটওয়ারের আয় বিষয়ে।