ব্লু হোয়েল সম্পর্কে আপনার যা কিছু জানা দরকার!

এ সপ্তাহের টক অব দ্যা টাউন, “ব্লু হোয়েল”! ব্লু হোয়েল নিয়ে উদ্দ্বগ, উত্তেজনা এবং কৌতূহল এর শেষ নেই! কী-বোর্ড যোদ্ধাদের ফেসবুকীয় দায়বদ্ধতা তাদের বাধ্য করেছে এই ইস্যুটি নিয়ে বিরামহীন সার্কাস্টিক, সিরিয়াস এবং প্যানিকড স্ট্যাটাস দিতে! কিন্তু তবুও, ক’জনই বা জানি ব্লু হোয়েল সম্পর্কে! চলুন জেনে নিই ব্লু হোয়েল সম্পর্কে;)

ব্লু হোয়েল বা নীলতিমি এখন পর্যন্ত পৃথিবীতে বসবাস করা সবচেয়ে বড় প্রানী...এমনকি পৃথিবীতে বসবাস করা সবচেয়ে বড় ডাইনাসোরটির চেয়েও বড় এই নীলতিমি। এখন পর্যন্ত খুজে পাওয়া সবচেয়ে বড় নীল তিমিটির ওজন ১,৭১,০০০ কেজি। যেখানে মানুষের গড় ওজন ৬২ কেজি এবং হাতির গড় ওজন ৫,৪৪৩ কেজি মাত্র!

পৃথিবীতে এখন পর্যন্ত খুজে পাওয়া সবচেয়ে লম্বা নীল তিমির দৈর্ঘ্য ১১০ ফুট বা ৩৩ মিটার। এর মানে হচ্ছে এই তিমি’র দখল করা জায়গায় আমরা অনায়াসেই ৯ টি ফ্যামিলি সাইজড গাড়ি পার্ক করা যাবে!

একটি নীল তিমির হার্ট বা হৃদপিন্ড একটি গাড়ির সমান, যার ওজন ৪৫০ কেজি। আর নীল তিমির ব্লাড ভেসেল এতোটাই বিশাল যে আপনি অনায়েসে সাঁতার কেটে আসতে পারবেন। এর মানে হচ্ছে, সিটি কর্পোরেশন এর ড্রেইনেজ সিস্টেম ব্লু হোয়েল এর ব্লাড সার্কুলেশন সিস্টেম এর চেয়েও যথেষ্ট খারাপ!

ব্লু হোয়েল বা নীলতিমির জিহ্বার ওজন একটি প্রাপ্তবয়স্ক হাতির ওজনের সমান এবং একটি ফুটবল দল চাইলেই এই জিহ্বার উপর দাঁড়িয়ে ফর্মাল ফটোসেশন এর জন্য দাঁড়িয়ে যেতে পারবে!

ব্লু হোয়েল কোনো মাছ নয়। তার মানে হচ্ছে, তিমি মাছ বলাটা আসলে ঠিক নয়, তিমিভ্রাত্ববৃন্দের জন্যে এটি অপমানজনক কথাবার্তা বলতে গেলে। আচ্ছা, “ভ্রাত্ববৃন্দ” বললাম কেনো? তিমি প্রজাতি কোন দিক দিয়ে আমাদের ভাই হয়? ওয়েল, তিমি প্রজাতি আর আমরা একই গোত্রের সদস্য। নীল তিমিরা ম্যামালিয়া বা স্তন্যপায়ী এবং উষ্ণ রক্তের প্রানী। এবং আমরাও স্তন্যপায়ী এবং উষ্ণ রক্তের প্রানী! ওরা অক্সিজেন ছাড়া বাঁচতে পারে না, তাই সবাইকে আতঙ্কগ্রস্ত করে একটু পর পর লাফিয়ে উঠে সমুদ্রের বুক চিড়ে। একই রকমই তো আমরা, আমরাও অক্সিজেন ছাড়া বাঁচতে পারি নাহ...এবং পানিতে ডুব দিয়ে আমরাও ফুঁস করে ভেসে উঠি অক্সিজেনের অভাব অনুভব করলে!

একটি নীলতিমি সন্তান প্রসব করতে ১০-১২ মাস সময় নেয়। একটি সদ্যজন্ম নেওয়া নীলতিমির উচ্চতা ৭.৫ মিটার এবং ওজন ৫.৫-৭.৫ টন। যেখানে কিনা মানবজাতির ইতিহাসে এখন পর্যন্ত প্রাপ্ত সবচেয়ে লম্বা মানুষটির উচ্চতা...!!! নাহ থাকুক, মানুষের সাথে আর কমপেয়ার না করি যেখানে হাতির মতো প্রানীই পাত্তা পাচ্ছে নাহ!

একটি শিশু নীলতিমি জন্মের পর থেকে প্রতিদিন ২২৫ লিটার করে মায়ের দুধ পান করে, যার ফলে শিশু নীলতিমির ওজন ঘন্টায় ৩.৫ কেজি করে বৃদ্ধি পায়! এবং মাত্র ৮ মাস বয়সে, ২২.৫ টন ওজন এবং ১৫ মিটার দীর্ঘ দেহ নিয়ে সাগর দাপিয়ে বেড়ায় একটি শিশু নীলতিমি!

যদিও নীলতিমি সাইজে বিশাল, কিন্তু খাবার হিসেবে গ্রহন করে চিংড়ির মতো দেখতে ছোট ক্রাস্টেশিয়ানদের, যাদের নাম হচ্ছে “ক্রিল”! নীল তিমি প্রতিদিন প্রায় ৩৬০০ কেজি খাবার গ্রহন করে থাকে!

ব্লু হোয়েল বা নীল তিমির একটি অন্যতম বিশেষত্ব হচ্ছে এর আওয়াজ। একটি নীল তিমি ১৮৮ ডেসিবেল এর চেয়েও উঁচু স্বরে আওয়াজ তৈরি করতে পারে, যা ৫৪০ কি.মি দূর থেকে শোনা যায়। অথচ একটি জেট বিমান শুধুমাত্র ১২০ ডেসিবেল আওয়াজ তৈরি করে।

ব্লু হোয়েলরা কেমন?
ব্লু হোয়েল বা নীল তিমিরা আচরনে মানুষের চেয়ে যথেষ্ট ক্লাসি স্বভাবের এটা বলা যায়...কারন?
-ব্লু হোয়েলরা যথেষ্ট সামাজিক প্রানী...তারা সমুদ্রে ঘুরে বেড়ানো মানুষ বা বোট এর ক্ষতি করে না।চিন্তা করুন, ব্লু হোয়েল এর জায়গায় আপনি থাকলে কি করতেন? একটা সীমানা এঁকে দিয়ে বলে দিতেন, “এই এলাকা আমার, বহিরাগত প্রবেশ নিষেধ!”
-রশিয়া, ইউএসএ বা চায়নার মতো সাইজে বড় বলে জোর যার মুল্লুক তার ভাব নেয় না।
-ব্লু হোয়েলরা মানুষের মতো অন্য প্রানীর নামে গেইম বা অন্য কিছু তৈরি করে অন্যান্য প্রানীদের রেপুটেশন নষ্ট করে না!
-ব্লু হোয়েলরা মানুষের মতো হুজুগে ট্রেন্ডী নয়!
-ব্লু হোয়েলরা সামাজিক জেন্ডার ডিসক্রিমিনেশনে বিশ্বাসী নয়, বাবা এবং মা ব্লু হোয়েল সমান দায়িত্ব ভাগ করে নেয়!

ব্লু হোয়েল বনাম মানুষঃ
ক্যাপিটালিস্ট মানবজাতি আফ্রিকা থেকে শুরু করে এশিয়া, সাইবেরিয়া থেকে সাহারা মরুভূমি এমন কোনো পথ-প্রান্তর বাকি রাখে নি যেখানে সম্পদের লোভে ঝাঁপিয়ে পড়ে নি! মানবজাতির এই ক্যাপিটালিস্ট ইন্টারেস্ট থেকে রেহাই পায় নি ব্লু হোয়েল বা নীল তিমিরাও! আর এই ক্যাপিটালিস্ট ইন্টারেস্ট এর কারনে নীল তিমি এখন মারাত্মক বিপদাপন্ন প্রানী। পৃথিবীতে মাত্র ১৫০০-২৫০০টি নীল তিমি টিকে আছে। এবং হয়তো আর বেশিদিন নেই যখন নীল তিমি আর সমুদ্রে খুজে পাওয়া যাবে না, পাওয়া যাবে হয়তো মিউজিয়ামে...তাও হয়তো কঙ্কালটা দেখা যাবে এক্সিবিশন হিসেবে, কারন এতো বড় প্রানীটির দেহ ফরমালিন কনটেইনারে ডুবিয়ে রাখার সুযোগ কই!

কেনো আপনি এই লেখাটি পড়ছেন?
এই কদিনে ব্লু হোয়েলময় হয়ে গেছে আমাদের ফেসবুক জীবন। ইস্যুবিহীন ফেসবুক জীবন অপছন্দকারী আমরা লুফে নিয়েছি বেশ কিছু মুখরোচক খবর। যদিও এর বেশিরভাগই ভুয়া। এই যেমন, কিছুদিন আগে ব্লু হোয়েল গেম খেলে আত্মহত্যা করা হলিক্রস এর মেয়েটির যে খবর ভাইরাল হয়ে গেছে সেটিও ভুয়া, আসলে এমন কোনো প্রমানই পাওয়া যায় নি যার ভিত্তিতে বলা যেতে পারে মেয়েটি এই গেইমটি খেলে আত্মহত্যা করেছে। অথচ এই ভুয়া খবর পড়েই আমরা প্যানিকড হয়ে গেছি...পাগলের মতো ব্লু হোয়েল এর লিঙ্ক খুজেছি/খুজছি! অথচ সম্ভবত অধিকাংশ ফেসবুকার জানিই নাহ যে, ব্লু হোয়েল গেম এর কোনো লিঙ্কই নেই!

যাই হউক, ব্লু হোয়েল গেম নিয়ে আমরা যথেষ্ট উদ্বেগ এবং উত্তেজনায় আছি। যদিও যেই প্রানীটির নামে এই গেম এর নামকরন করা হয়েছে সেই প্রানীটি সম্পর্কে আদৌ কেউ কিছু জানি কিনা সেটা নিয়ে যথেষ্ট সন্দেহ আছে। সেই প্রানীটি সম্পর্কে জানলেও, প্রানীটি কতোটা বিপদাপন্ন তা হয়তো জানি না। আবার অনেকে হয়তো ব্লু হোয়েল জিনিষটা কি সেটাই জানি নাহ, অসম্ভব কিছু নাহ! আর যারা এই সাগর দাপিয়ে বেড়ানো বিশাল কিন্তু শান্ত প্রানীটি সম্পর্কে জানেন না তাদের জন্য এই লেখাটি!

পরিশেষঃ
সত্যি কথা হচ্ছে, ব্লু হোয়েল গেম নিয়ে টেনশনের কিছু নেই। কারন আমাদের এই ডিপ্রেশন বিলাসী জেনারেশন ব্লু হোয়েল গেম এর লিঙ্ক খুজে পাওয়ার মতো ইন্ট্যালেকচুয়ালি যথেষ্ট ক্যাপেবল না। কারন ভিকে বা ডার্কওয়েব এর মতো ব্যাপারগুলো ক’জনই বা বুঝে, বলুন?

প্রথম প্রকাশিতঃ এখানে

Level 0

আমি জিএমশুভ। বিশ্বের সর্ববৃহৎ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির সৌশল নেটওয়ার্ক - টেকটিউনস এ আমি 12 বছর যাবৎ যুক্ত আছি। টেকটিউনস আমি এ পর্যন্ত 19 টি টিউন ও 96 টি টিউমেন্ট করেছি। টেকটিউনসে আমার 1 ফলোয়ার আছে এবং আমি টেকটিউনসে 0 টিউনারকে ফলো করি।

আমি জিএমশুভ। পড়ালেখার পাশাপাশি লেখা লেখি করছি। ভালবাসি টেকনোলজিকে। নেট ব্রাউজ করা আর বই পড়া আমার প্রধান সখ।আর ভালবাসি নতুন কিছু জানতে এবং অন্যকে জানাতে। ফেসবুকে আমি: http://facebook.com/gms.me


টিউনস


আরও টিউনস


টিউনারের আরও টিউনস


টিউমেন্টস