বিলুপ্তির দ্বারপ্রান্ত থেকে ফেরা পাঁচ প্রজাতি

‘লোনসাম জর্জ’-এর নাম শুনেছেন? গ্যালাপাগোস কচ্ছপ প্রজাতির এই একটি বান্দাই টিকে আছে পৃথিবীতে। ক্লোনিং করা সম্ভব না হলে জর্জ মরার পর পৃথিবী থেকে বিদায় নেবে এ জাতটি। তবে মানুষের ঐকান্তিক চেষ্টায় বিলুপ্তির পথ থেকে নাটকীয়ভাবে ফিরে এসেছে অনেক প্রজাতি। বন্য প্রাণী সংরক্ষণকারীরা তাই বিপন্নপ্রায় প্রাণীদের ‘রেডলিস্ট’-এর মতো বিলুপ্তির পথ থেকে ফিরে আসা প্রজাতিগুলোর ‘ব্লু লিস্ট’ও বানাচ্ছেন। পাঁচটি প্রজাতি নিয়ে সংরক্ষণকারীদের সাফল্যের কাহিনি তবে শুনুন

****ব্ল্যাক ফুটেড ফেরেট

ব্ল্যাক ফুটেড ফেরেট বা মুসটেলা নাইগ্রিপেস উত্তর আমেরিকার ছোট একটি স্তন্যপায়ী প্রাণী। এগুলো সাধারণত প্রেইরি ডগ নামের ছোট ছোট স্তন্যপায়ী প্রাণী খেয়ে বাঁচে। কিন্তু প্রেইরি ডগ শস্যের অনেক ক্ষতি করে বলে কয়েক দশক ধরেই মার্কিন সরকার এগুলো নিধন করছিল। এর ফলে বিপন্ন হয়ে পড়ে ব্ল্যাক ফুটেড ফেরেট। ১৯৭০-এর দশকে ধারণা করা হয়েছিল, এ প্রজাতি বিলুপ্ত হয়ে গেছে। কিন্তু ১৯৮১ সালে উইয়োমিংয়ে ব্ল্যাক ফুটেড ফেরেটের ছোট একটি দলের সন্ধান পাওয়া যায়। কিন্তু এগুলোর সংখ্যাও বিভিন্ন রোগে দ্রুত কমছিল। ১৯৮৬ সালে মাত্র ১৮টি ব্ল্যাক ফুটেড ফেরেটের অস্তিত্ব ছিল। এগুলোর সব কটিকেই ধরে সংরক্ষিত অবস্থায় লালন-পালন করা হয় কয়েক বছর। এরপর বংশবিস্তারের মাধ্যমে ব্ল্যাক ফুটেড ফেরেটের সংখ্যা বাড়লে ১৯৯১ সালে এগুলোকে আবার বনে ছেড়ে দেওয়া হয়।

সংরক্ষিত অবস্থায় রাখা ব্ল্যাক ফুটেড ফেরেটগুলো টিকে থাকলেও ১৯৯৭ সাল নাগাদ মুক্ত ফেরেটগুলো সংখ্যা কমে পাঁচে নেমে আসে। কিন্তু বন্য প্রাণী সংরক্ষকদের ঐকান্তিক চেষ্টায় এগুলোর সংখ্যা আবার দুই শ ছাড়িয়ে যায়। তবে এখনো কিন্তু এ প্রজাতি বিলুপ্তির হুমকির মুখে আছে।

****বালি স্টারলিং

এই পাখির মূল সমস্যা এর সৌন্দর্য। চোখ ধাঁধানো সাদা পালক, চোখের চারপাশে নীল চামড়া এবং লেজ ও ডানার আগায় কালো দাগ-সব মিলিয়ে বালি স্টার্লিংয়ের সৌন্দর্য নজরকাড়া। তাই এগুলো খাঁচায় পোষা জনপ্রিয় হতে থাকে। পোচারদের মূল টার্গেটে পরিণত হয় বালি স্টারলিং।

বালি স্টারলিং কেবল ইন্দোনেশিয়ার বালিতে মেলে। ১৯৯০ সালে এগুলোর সংখ্যা ১৫তে নেমে আসে। সংরক্ষণকারীদের প্রচেষ্টায় এগুলোর সংখ্যা ৫০ পর্যন্ত ওঠে। কিন্তু পোচারদের হামলায় ২০০১ সালে এ পাখির সংখ্যা ছয়ে নেমে আসে। তাই বন্দী অবস্থায় তাই এগুলোর প্রজনন করে বনে ছাড়া হতে থাকে। ২০০৮ সালে মুক্ত অবস্থায় বালি স্টারলিংয়ের সংখ্যা দাঁড়ায় ১৪৫-এ। কিন্তু গত বছর জরিপ চালিয়ে দেখা যায়, এগুলোর সংখ্যা আবার কমছে।

****নীল ইগুয়ানা

কী বৈপরীত্য! যে ইগুয়ানাটা গিরগিটি শ্রেণীর প্রাণীদের মধ্যে সবচেয়ে দীর্ঘজীবী, সেটিই এখন বিলুপ্তির হুমকির মুখে। নীল ইগুয়ানা সর্বোচ্চ ৬৭ বছর বাঁচে। লেজসহ এটি দেড় মিটার লম্বা হয়। এগুলো চামড়ার রং ধূসর থেকে নীলের মধ্যে পরিবর্তন করতে পারে। কিন্তু ক্যারিবীয় দ্বীপ গ্র্যান্ড কেইমানে মানুষের আনা কুকুরের হামলায় নীল ইগুয়ানার সংখ্যা কমতে থাকে। ২০০২ সালে মাত্র ১৫টি নীল ইগুয়ানার অস্তিত্ব ছিল।

শেষে ব্ল- ইগুয়ানা রিকভারি প্রোগ্রাম নামের বিশাল এক সংরক্ষণ প্রকল্পের মাধ্যমে এগুলোকে বাঁচানো হয়। সংরক্ষিত স্থানে শত শত নীল ইগুয়ানার প্রজনন ঘটিয়ে মুক্ত পরিবেশে ছেড়ে দেওয়া হয়। কিন্তু এত চেষ্টার পরও ২০০৫ সালে মাত্র ২৫টি নীল ইগুয়ানা বন্য অবস্থায় টিকে ছিল। ভাগ্যিস, এগুলো পরিবর্তনের সঙ্গে মানিয়ে নিতে সক্ষম প্রজাতি। তাই সংরক্ষণবাদীরা এখনো আশাবাদী, কৃত্রিম প্রজননের ক্ষতিকর প্রভাব এড়িয়ে এগুলো পৃথিবীতে টিকে থাকবে।

****গোলাপি ঘুঘু

ভারতীয় মহাসাগরের মরিশাস দ্বীপে পাওয়া যায় বিশ্বের সবচেয়ে দুর্লভ ঘুঘু পিংক পিজিয়ন। এগুলোর সংখ্যা এখন ৩৫০ এর ওপরে। কিন্তু এগুলো একসময় বিলুপ্তির দ্বারপ্রান্তে চলে গিয়েছিল। দুই দশকের সংরক্ষণ-চেষ্টায় এগুলোর সংখ্যা বাড়ানো গেছে।

গোলাপি ঘুঘু ৩৮ সেন্টিমিটার দীর্ঘ। এগুলোর পালক গোলাপি। বাসস্থান হারিয়ে এগুলো বিলুপ্তির মুখে পড়েছিল। আর এ দ্বীপে শিকারি বানরের সংখ্যা বেড়ে যাওয়ায় আরও বিপদে পড়ে ঘুঘুগুলো। ১৯৯০ সালে মাত্র ১০টি গোলাপি ঘুঘু খুঁজে পাওয়া যায়।

তাই চালু হয় সংরক্ষিত অবস্থায় প্রজনন। একই সঙ্গে এগুলোর আবাস বাড়ানো হয়, আর এগুলো শিকারির সংখ্যা কমানো হয়। ফলে ধীরে ধীরে বাড়ে এগুলোর সংখ্যা। তা না হলে এত দিনে গোলাপি ঘুঘু পৃথিবী থেকে চির বিদায় নিত।

****পেডার গ্যালাক্সিয়াস

১৯৭২ সালে পরিবেশবাদীদের জোরালো আন্দোলন সত্ত্বেও পানিবিদ্যুৎকেন্দ্রের বাঁধ নির্মাণ করে অস্ট্রেলিয়ার তাসমানিয়ার লেক পেডার ডুবিয়ে ফেলা হয়। এর ফলে অন্যান্য প্রাণীর মতো ক্ষতিগ্রস্ত হয় পেডার গ্যালাক্সিয়াস। এই লেকেই কেবল এ মাছটি পাওয়া যেত।

শত চেষ্টা সত্ত্বেও লেক থেকে বিলুপ্ত হয়ে যায় মাছটি। ১৯৯৬ সালে শেষবারের মতো পেডার লেকে দেখা যায় এ মাছটি। এর আগেই অবশ্য সংরক্ষিত অবস্থায় কয়েকটি মাছ রাখা ছিল। এগুলোর বংশ বিস্তার করে পাশের দুটো লেকে ছাড়া হয়। লেক ওবেরনে ১৯৯২ সালে ছাড়ার পর বংশ বিস্তার করে চলছে পেডার গ্যালাক্সিয়াস। কিন্তু স্ট্র্যাথগর্ডন ড্যামে ছাড়া মাছগুলো টিকে থাকলেও বংশ বিস্তার করতে পারছে না।

Level 0

আমি সাবিহা। বিশ্বের সর্ববৃহৎ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির সৌশল নেটওয়ার্ক - টেকটিউনস এ আমি 13 বছর 8 মাস যাবৎ যুক্ত আছি। টেকটিউনস আমি এ পর্যন্ত 98 টি টিউন ও 753 টি টিউমেন্ট করেছি। টেকটিউনসে আমার 3 ফলোয়ার আছে এবং আমি টেকটিউনসে 0 টিউনারকে ফলো করি।

খুব সাধারন একটি মানুষ।সারাদিন কম্পিউটার নিয়ে পড়ে থাকি।মুভি দেখি,ব্লগ এ ব্লগ এ ঘুরাঘুরি করি।পড়ালেখা করতে বরাবরই ভয় লাগে। আর ফেসবুক এ একটা পেজ খুলেছি।যারা সময় পাবেন একটু ঢু মেরে আসবেন।


টিউনস


আরও টিউনস


টিউনারের আরও টিউনস


টিউমেন্টস

খুবই চমৎকার টিউন । আর টেগগুলো অসাধারন ।

খুব সুন্দর টিউন তো !
এখানে কমেন্ট এত কম পড়ছে কেন ?

অসাধারন লিখেছেন।
অনেক ধন্যবাদ।

অনেক অনেক ভাল টিউন,
অনেক ভাল লিখেছেন আপনি এবং অনেক কিছু জানতে পারলাম টিউন থেকে।
অনেক অনেক ধন্যবাদ সুন্দর টিউনটির জন্য।

Level 0

ধন্যবাদ সুন্দর টিউনটির জন্য । অনেক কিছু জানতে পারলাম

Level 0

আরো চাই

আমার যদি একটা “বালি স্টারলিং” থাকত। উফফফফফফফফফফফ… জটিল। সুন্দর… কি বলব। আমার তো এই মূহুর্তে যে কোন কিছুর বিনিময়ে পাখিটা পেতে ইচ্ছা করছে। নিজেকে বড্ড অসহায় লাগছে… এই পাখিটা আমার চায়ই চায়।
সাবিহা এই টিউন করা উচিত হয় নাই। এখন আমার কি হবে। I AM IN LOVE

Level 0

ভাল লাগল৷

Thanks

সুন্দর টিউন… 🙂