ফেইক ওয়েব হোস্টিং প্রোভাইডারঃ এই সমস্যার শেষ কোথায়?

আজকাল ব্যবসা-বাণিজ্য, ব্যক্তিগত পোর্টফোলিও বা সামাজিক যোগাযোগের ক্ষেত্রে ওয়েবসাইট একটি গুরুত্বপুর্ন বিষয়। দিনকে দিন ওয়েবসাইটের চাহিদা বেড়েই চলেছে। সেইসাথে দেশী বিদেশী বিভিন্ন হোস্টিং প্রোভাইডার ডোমেইন এবং হোস্টিং সার্ভিস প্রদান করছে।

কিন্তু প্রকৃতির স্বভাবই হচ্ছে একটা আসলের বিপরীতে তিনটা (বা আরো বেশী) নকল গজিয়ে উঠা। তাই স্বভাবতই ব্যাং এর ছাতার মতো এখানে সেখানে অসংখ্যা হোস্টিং প্রোভাইডার গজিয়ে উঠছে। আর সমস্যা এতদুর গড়িয়েছে যে এখন নকলের ভিড়ে আসল চেনা বড় দায়।

যদিও হোস্টগেটর, ব্লুহোস্ট, হোস্টডাইম বা নেমচিপের মতো আন্তর্জাতিক সার্ভিস প্রোভাইডার রয়েছে, কিন্তু ইচ্ছা থাকলেও ই-কারেন্সি ব্যবহারের সীমিত সুযোগ থাকায় বেশীরভাগ (৯৯.৯৯%) মানুষের পক্ষে এসব প্রোভাইডারের কাছ থেকে সার্ভিস সেওয়া সম্ভব হচ্ছেনা।

এখানে আমি কিন্তু বলছিনা যে বাংলাদেশী হোস্টিং প্রোভাইডাররা সব ফ্রড। কিন্তু অবস্থা তো সেই রকম, চুন খেয়ে মুখ পোড়ার পর দই দেখলেও খেতে ভয় লাগে। যেমনঃ গত ২০১১ সালে আমি একটা হোস্টিং সহ ডোমেইন নিয়েছিলাম ট্রানটর হোস্ট থেকে (trantorhost.com)। আমি সরাসরি ওদের অফিস থেকে নিয়েছিলাম। ওদের অফিসটা ছিলো তখন নিউ এলিফ্যান্ট রোডের বাটা সিগন্যালের সাথে। আমার ডোমেইন ছিলো bdtechschool.com. মাস তিনেক পর হঠাৎ একদিন দেখি আমার সিপ্যানেলে লগিন হচ্ছেনা। ওদের ফোন দিলাম, কোন উত্তর নেই। দুদিন অপেক্ষা করলাম। দুদিন পর দেখি, আমার ডোমেইনে অন্য একজনের সাইট। তখন কি সাইট ছিলো, ঠিক মনে নেই। এরপর আবার ওদের ফোন দিলাম, আগেই মতোই উত্তর নেই। এরপর অন্য একটি নাম্বার থেকে ফোন দিলাম, সাথে সাথে রিসিভ করলো। আমি আমার সমস্যা বলতেই এমন ভাব করলো, আমি ওদের কাছ থেকে কোন সার্ভিসই নেইনি, আমিই ফ্রড। আমাকে বললো ইনভয়েস নিয়ে অফিসে যেতে 😥 . কিন্তু ততক্ষনে আমিতো বুঝেই গেলাম, বিষয়টা কি। কিন্তু আর তো কিচ্ছু করার নেই।

এরপর ফেসবুকে পরিচয় হলো এক লোকের সাথে। বিশাল ভাবসাব। তার অনেক বড় কোম্পানী। বাংলাদেশ এবং আমেরিকাতে যৌথভাবে বিজনেস করে (ওয়েবসাইটঃ domaingood.com). কিন্তু সমস্যা, শেয়ার্ড হোস্টিং এ তাদের দুই বছরের নীচে কোন প্যাকেজ নেই, আবার খরচও তুলনা মূলক ভাবে বেশী। এটা ২০১২ সালের শেষের দিকের কথা। যাই হোক, আমি তাকে দুই বছরের খরচ হিসেবে ৮৬ ডলার, টাকায় ৬,৮৮০ টাকা ডিবিবিএল এ দেই। সম্ভবত তখনো বিকাশ আসেনি। কিন্তু এরপর থেকে ঐ লোকের ফোন বন্ধ। ফেসবুকেও আনঅ্যাভাইলেবল। প্রায় চার মাস পর তাকে ফোন পেলাম। বললো, সে দেশে ছিলোনা, আমেরিকায় চলে গিয়েছিলো! আজই আমাকে সার্ভিস দিবে!! কিন্তু আমার পছন্দের ডোমেইনটা ততদিনে অন্যকেও নিয়ে নিয়েছে। তো আর কি, আমাকে টাকা ফেরত দিবে। ভালো কথা, কিন্তু দেখি আমাকে ফেরত দিয়েছে ৬ ডলার, মানে ৪৮০ টাকা আরকি। তারপর থেকে ফেসবুকে আমাকে ব্লক!!! এরপর আমার মাথা থেকে ব্যক্তিগত ওয়েবসাইটের ভূত একদম নেমে গেছে :lol:।

আর সাম্প্রতিক একটা ঘটনা হচ্ছে, নামটা আগে বলেনেই, আপনারা অনেকেই হয়তো বিডিওয়েবকেয়ার এর নাম শুনেছেন, কয়জন প্রতারিত হয়েছেন জানিনা। আমি আমার এক ছোট ভাইকে ওখান থেকে একটা উইন্ডোজ সার্ভার নিয়ে দেই, ই-টোকেন এর কাজ করবে বলে। খরচ কম তাই। ঐ লোকেও তো অনেক পাট নিলো। এই সেই, ইত্যাদি ইত্যাদি। অনেক বড় ব্যবসা তার। যদিও এতে আমি খুব একটা অবাক হইনি। পুর্ব অভিজ্ঞতা বলে কথা :-)। ১৫ দিন পর থেকে এরাও উধাও।

আমাদের চারপাশে এই ধরনের আরো অনেক প্রোভাইডার আছে, যারা অন্যকোন প্রোভাইডারের কাছথেকে ৫ জিবি রিসেলার প্যাকেজ কিনে নিজেকে হোস্টিং কোম্পানীর মালিক হিসেবে দেখায়, খাইদাই আইএনসি, শেয়ার্ড/রিসেলার/ভিপিএস/ডেডিকেটেড হোস্টিং ইত্যাদি প্রোভাইড করে 😀 . কিন্তু আপনি যদি এদের সার্ভিসে অসন্তুষ্ট হয়ে ডোমেইন ট্রান্সফার করতে চান, কিংবা টাকা ফেরত চান, কখনোই দিবেনা। তাহলে কি আপনি আপনার ওয়েবসাইটটি হারাবেন, আমার মতো?

সবচেয়ে আশ্চর্য লাগে, যখন দেখি এইরকম কোন ওয়েবসাইট (যেহেতু এরা কোন কোম্পানী না, একটা ওয়েবসাইটই এদের সম্বল।) এর বিজ্ঞাপন টেকটিউনসের চলছে। তখন আর হাসি চেপে রাখতে পারিনা। যদিও এতে টেকটিউনসের কোন দোষ নেই। কারন টিটি টাকা পাবে, বিজ্ঞাপন প্রকাশ করবে, আসল নকল যাচাই করা টিটির কাজ নয়।

আপনি হয়তো বলতে পারেন, আমি কিভাবে জানলাম, যে এটা একটা রিসেলার সাইট মাত্র। উত্তর একটাই, চেনা বামনের পৈতা লাগেনা। ডেভেলপার হওয়ার সুবাদে এইপর্যন্ত দেড় শতাধিক প্রভাইডারের সাথে পরিচিত হয়েছি। যা থেকে আসল প্রভাইডার দেখেছি মাত্র চারটি! তাহলে বাকীগুলো কি আশাকরি বুঝেছেন সবাই!! আবার সেইসব রিসেলারদের মধ্যথেকেও বোধহয় এখন পঞ্চাশটিও টিকে নেই। মাত্র আড়াই বৎসরের ব্যবধানে।

অনেকবার দেখেছি, ধরুন ক্লায়েন্টের একটা সাইট ডেভেলপ প্রায় শেষ করেছি বা শুরু করেছি, হঠাৎ দেখি সাইটটা সাসপেন্ডেড। আরেকটু ভালো করে দেখি, ঐ সাইটের হোস্টিং প্রভাইডারের ওয়েবসাইটও সাসপেন্ডেড, খোলার নাম নেই। তখন কি আর বুঝতে বাকী থাকে, এটা কি ধরনের প্রভাইডার?

আপনি রিসেলার হোন, প্রভাইডার হোন, আমার তাতে কিচ্ছু আসে যায়না। কথা হচ্ছে আমরা সাধারন গ্রাহকগন কি অপরাধ করেছি? কেন আমাদের এতো ভোগান্তিতে ফেলছেন আপনারা? আর যদি সার্ভিস নাই দিতে পারেন, তবে খামোখা এই কাজে হাত দিচ্ছেন কেন? অন্ততঃ নিজেরা উধাও হবার আগে আপনি যার কাছ থেকে সার্ভিস নিয়েছেন, তার সাথে তো একবার পরিচয় করিয়ে দিতে পারেন। যাতে আমরা অন্তত ডোমেইনটাকে উদ্ধার করতে পারি।

যাই-হোক অনেক কথা বললাম, পাঠকদের মুল্যবান সময় নষ্ট করার দুঃখিত। যদি কারো মনে কষ্ট দিয়ে থাকি, তবে ক্ষমা চেয়ে নিচ্ছি।

আমি উদয় খান। বিশ্বের সর্ববৃহৎ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির সৌশল নেটওয়ার্ক - টেকটিউনস এ আমি 9 বছর 6 মাস যাবৎ যুক্ত আছি। টেকটিউনস আমি এ পর্যন্ত 7 টি টিউন ও 85 টি টিউমেন্ট করেছি। টেকটিউনসে আমার 0 ফলোয়ার আছে এবং আমি টেকটিউনসে 0 টিউনারকে ফলো করি।


টিউনস


আরও টিউনস


টিউনারের আরও টিউনস


টিউমেন্টস

ঠিক বলছেন

আমি Code For Host, Inc থেকে প্রায় ৪/৫ বছর যাবৎ সার্ভিস নিচ্ছি। কোন সমস্যা নেই ও কাস্টোমার সেবাও ভালো। আমার জানামতে এরা লাইসেন্সধারী ও ইনকর্পোরোশন কোম্পানি।

একবার সেম কেসে পরেছিলাম ভাই।

Godaddy, iPage, Hostgator theke sorasori nite paren, help lagle bolben.

আমিও একটা নিয়েছিলাম সিলেটের একজনের কাছ থেকে। একবার সাইট ক্র্যাস করলো কোন হেল্প নাই। তারপর হঠাৎ একদিন দেখি সব শেষ। এখন গুগলের সাইট থেকে সাব ডোমেইন ব্যবহার করছি। বিনামূল্যে একটা সাব ডোমেইন থাকলে মন্দ কি। 😉

আমি নিয়ছি নেটকন থেকে ,ভালই চলছে

    দেশী সবাই যে খারাপ তা কিন্তু নয়। কিন্তু খারাপের ভিড়ে ভালো চেনাটাই তো মুশকিল।

Level 2

1st time ekbar dora khaisilam. Pore oi company lokjon k mere boba banie felsi.
Er por theke nije hosting nisi and only for my friend and familier person (Mobile cost, tea etc.) amar pocket theke. 🙂

    মেরেছিলেন? বেশ করেছিলেন। সেটা কি সত্যিই কোম্পানী ছিলো, নাকি ছ্যাচরা রিসেলার টাইপ ছিলো।

এমন সমস্যায় আমিও পড়েছিলাম। অনেক দু:খ ভারাক্রান্ত মন নিয়ে আজ আপনর লেখাটা পড়ে অতীতের তিক্ত অভিজ্ঞতার কথা মনে পড়ে গেলো। ধন্যবাদ https://goo.gl/TbVejD

    google.com.bd তে যাবেন। তারপর web hosting/hosting in bd ইত্যাদি লেখে সার্চ দিবেন। টপ ৩ এ যে ৩ টা ওয়েবসাইট পাবেন তাদের ব্যাকলিংক চেক করবেন। এবং অবশ্যইই way back machine দিয়ে সাইটের ইতিহাস চেক করে নিবেন। তাহলেই বুঝবেন কোন কম্পানি কি রকম।
    আশা করি এরপর আর কেউ ঠোকবে না ।

১. ভাই হোস্টিং কত ? ১ জিবি স্পেস ২০ জিবি ব্যান্ডউইথ ১০০০ টাকা । কি বলেন ভাই অমুক কোম্পানী তে ৫০০ টাকায় অানলিমিটেড স্পেসও দেয় অাপনাদের দাম বেশী কেন ? না ভাই নিবো না ঐখান থেকেই নিবো । গত দেড়বছর ধরে এই কথা শুনে অাসতেছি । ভাই একটা ভিপিএস নিতে যেখানে নূন্যতম ২০০ ডলার লাগে সিপ্যানেল সহ যাতে স্পেস থাকে ১০-৩০ জিবি অার ডেডিকেটেড সার্ভার নিলে তো কথা নাই ! ৫০০ টাকায় অানলিমিটেড স্পেস ব্যান্ডউইথ তারা সেখানে দেয় কিভাবে ? ২৪-৭ লাইভ সাপোর্ট দেবার পরও অামরা তাদের সাথে পেরে উঠি না কেন জানেন? কারন অামরা ব্যবসা করতে এসেছি টাকা নিয়ে কয়েকদিন পর গায়েব হতে না । কিন্তু সাধারন অনেক গ্রাহকই এটা বুঝেতে পারেন না তাদের কম মূল্যে সব অানলিমিটেড চাই !!! সুতরাং ধরা খান । হোস্টিং বিজনেস ৪০০০ টাকা দিয়ে রিসেলার কিনেও করা যায় আবার লাখ টাকা দিয়ে সার্ভার কিনেও করা যায় ।

ভাই ভালো জিনিস নিলে অবশ্যই দাম কে গুরুত্ব দিবেন – টপ ৫টি বাংলাদেশী হোস্টিং কোম্পনীর সাথে দাম বিচার করুন যদি বিশাল ব্যবধান দেখেন তো বুঝবেন ঘাপলা অাছে ।

২. কোম্পানী ব্যাকগ্রাউন্ড দেখুন: অামার নিজেরই পরিচিত অনেকেই অাছে যারা হোস্টিং ব্যবসা করে কিন্তু সার্ভার সম্পর্কে ব্যাসিক ধারনা পর্যন্ত নেই । সুতরাং, কোম্পানী কার, তাদের সম্পর্কে বিস্তারিত দেখে নিন ।

৩. মেইন সার্ভার দেখুন : বাংলাদেশী কোনো কোম্পানীরই নিজস্ব সার্ভার দেশে নেই সবাই বাহিরের থেকে সার্ভার ব্যবহার করে, সুতরাং অাইপি দিয়ে মুল সার্ভারের ইনফরমেশন দেখুন ।

সব থেকে বড় কথা সাইটের ব্যাকগ্রাউন্ড চেক করা । কারা এটা চালাচ্ছে, কতদিন ধরে চালাচ্ছে, ফেসবুক পেজের রিভিউ কেমন, সাইটের নিরাপত্তা, ডিজাইন সব কিছুই দেখতে হবে বিচার করে ।