কোডিংয়ে মেয়েরা পিছিয়ে নেই তার প্রমাণ দেখুন এই ১০টি কোডিং সংস্থাগুলো থেকে

টিউন বিভাগ প্রতিবেদন
প্রকাশিত
জোসস করেছেন

টেকনোলজিতে মেয়েদের অবস্থান কতটুকু এ নিয়ে গত বেশ কয়েক বছর ধরেই বিভিন্ন তর্ক বির্তক, যুক্তি রয়েছে। তবে বর্তমানে টেকনোলজি সেক্টরে দিন দিন মহিলাদের সংখ্যা বৃদ্ধি পাচ্ছে। অনেকেই মনে করে থাকেন যে টেকনোলজি সেক্টরে মহিলাদের উজ্জল ভবিষ্যৎ রয়েছে এবং বিশ্বে ট্যালেন্টেড মহিলার সংখ্যা দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে। আর আমি আজ আপনাদের জন্য নিয়ে এলাম এমন ১০টি সাইটের খবর যেগুলো দেখে আপনিও বুঝবেন যে কোডিংয়ে মেয়েরা পিছিয়ে নেই। এই ১০ টি কোডিং সাইটগুলোই প্রমাণ করে যে কোডিং এবং কম্পিউটার সাইন্স সেক্টরে মেয়েরা পিছিয়ে নেই। এই সাইটগুলোর অধিকাংশই ক্ষুদ্র পরিসর থেকে শুরু করে বর্তমানে গ্লোবাল বা বিশ্বব্যাপী নিজেদের সার্ভিস ছড়িয়ে দিয়েছে। তো চলুন আর কথা না বাড়িয়ে দেখে নেই এই সাইটগুলো:

Made With Code

আমাদের আজকের লিস্টের সর্বপ্রথমে রয়েছে Made with Code। গুগলের একটি প্রজেক্ট হিসেবে এই Made with Code সাইটটি ২০১৪ সালের ১৯ জুন আনুষ্ঠানিক ভাবে উন্মোচন করা হয়। Made with Code হচ্ছে একটি কমিউনিটি ভিক্তিক সাইট যেটা মেয়েদের কোডিং করতে উৎসাহ দিয়ে আসছে। সাইটটিতে রয়েছে অনেক মজাদার সব প্রজেক্ট যেটার মাধ্যমে মেয়েরা সহজেই কোডিং শিখতে পারে। সাইটে অভিভাবক এবং শিক্ষকদের জন্য আলাদা রির্সোস রয়েছে এবং বিভিন্ন ইভেন্টস এর জন্য রয়েছে নোটিশ বোর্ড। এছাড়াও সাইটটিতে মেন্টর এবং সাইট নির্মাতাদের নিয়ে আলাদা স্টোরি সেকশন রয়েছে যেখানে মহিলাদের কোডিংকে পেশা হিসেবে নিয়ে নেওয়ার অনুপ্রেরণামূলক জীবন কাহিনী রয়েছে।

Girls Who Code

২০১২ সালে Reshma Saujani এই Girls Who Code সাইটটি চালু করেন এবং এটাকে আমেরিকার মেয়েদের ন্যাশনাল কোডিং সাইট হিসেবেও অনেকেই ব্যাখ্যায়িত করে থাকেন। বেশ পুরোনো এই সাইটটি এখনো ভালো মতোই তাদের কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছে। বিভিন্ন মৌসুমে সাইটি আমেরিকার বিভিন্ন হাই স্কুলের মেয়েদের কম্পিউটার কোডিং শিখিয়ে থাকে। আর সাইটটিতে শিক্ষক হিসেবেও রয়েছেন বিভিন্ন মহিলা কর্মকর্তা। Girls Who Code সাইটটির ক্যাম্প গুলোতে অধিকাংশ সময়েই বিভিন্ন টেক জায়ান্ট প্রতিষ্ঠান এবং তাদের বড় বড় কর্মকর্তারা অংশগ্রহণ করে থাকেন।

Hackbright Academy

আমাদের আজকের লিস্টের ৩য় স্থানে রয়েছে Hackbright Academy। Hackbright Academy নিজেদের কে মহিলাদের জন্য একটি এক্সক্লুসিভ সফটওয়্যার ডেভেলপমেন্ট প্রোগ্রাম হিসেবে আখ্যায়িত করে থাকে। সাইটটি প্রতিষ্ঠা করেছেন Christian Fernandez  এবং David J. Phillips। Hackbright Academy বছরব্যাপী সঠিক এবং উপযুক্ত কোডিং কোর্সের আয়োজন করে থাকে। এই সকল কোর্সে অংশগ্রহণের জন্য বয়সের সীমাবদ্ধতা থাকলেও Hackbright Academy তে কাজ করার জন্য কোনো বয়সের লিমিটেশন দেওয়া নেই। ২০ থেকে ৪০ বছরের মহিলারা Hackbright Academy এর কোর্সগুলোতে অংশগ্রহণ করতে পারবেন। কোর্সগুলো টেক ইন্ডাস্ট্রির কোয়ালিফাইড ইন্সটাক্টরদের দ্বারা পরিচালনা করা হয়।

Black Girls Code

নাম শুনেই বুঝতে পারছেন কৃষাঙ্গ মেয়েদের কোডিংয়ের জন্য এই Black Girls Code কাজ করে। Kimberly Bryant ২০১১ সালের এপ্রিল মাসে এই সাইটটি চালু করেন। তিনি বিভিন্ন স্কুলে ক্লাস টাইম শেষে কোডিং শেখানোর জন্য ওয়ার্কশপের আয়োজন করেন। এই ওয়ার্কশপগুলোতে ৭ থেকে ১৭ বছর বয়সী মেয়েদের তিনি কোডিং শিখানোর চেষ্টা করেন। কোডিং ছাড়াও প্রতিষ্ঠানটি রোবোটিকস এবং বড় বড় কম্পিউটার সাইন্সমূলক ইভেন্ট এর আয়োজন করে থাকে।

Rails Girls

মেয়ে এবং মহিলাদের মাঝে টেকনোলজি টুলসের সঠিক ব্যবহার এবং টেকনোলজি জ্ঞান সঠিকভাবে ছড়িয়ে দেবার উদ্দেশ্যে ২০১০ সালের নভেম্বরে Rails Girls সংস্থাটি চালু করা হয়। বর্তমানে সংস্থাটি বিশ্বব্যাপী বিভিন্ন টেকনোলজিমূলক ইভেন্টস এর আয়োজন করে থাকে। একই সাথে সংস্থাটি একটি নন-প্রোফিট বা অলাভজনক প্রতিষ্ঠান এবং একটি সেবামূলক প্রতিষ্ঠান হিসেবে নিজেদের স্থান প্রতিষ্ঠা করতে পেরেছে। আর বিশ্বব্যাপী টেকনোলজি ইভেন্ট এর আয়োজন করার কারণে সংস্থাটি বিভিন্ন দেশের বিভিন্ন ভাষায় গাইডলাইন দিয়ে থাকে।

Girl Develop It

আমাদের আজকের লিস্টের ৬ষ্ঠতম স্থানে রয়েছে Girl Develop It সংস্থাটি। Girl Develop IT সংস্থাটি ২০১০ সালে Sara Chipss এবং Vanessa Hurst প্রতিষ্ঠা করেন। সংস্থাটি প্রতিষ্ঠার শুরু থেকেই আমেরিকার বিভিন্ন শহরে মহিলাদের জন্য কোডিং ক্লাসের ব্যবস্থা করে আসছে। তাদের কোডিং ক্লাসগুলো মধ্যবর্তী পরিবারের জন্য টার্গেট করেই সূলভমূল্যে রাখা হয়েছে। এছাড়াও তাদের প্রতিটি শহরের জন্য আলাদা করে ক্লাস চ্যাপ্টার রয়েছে সেগুলো বিভিন্ন সময়ে শহরগুলোতে বিভিন্ন টেকনোলজি ইভেন্টস এর আয়োজন করে থাকে।

Vidcode

Kickstarter কোম্পানির একটি প্রজেক্ট হচ্ছে এই Vidcode। এটি মূলত একটি ওয়েব অ্যাপ যেখানে ভিডিওতে ইফেক্টস প্রয়োগের মাধ্যমে মেয়েদের কম্পিউটার কোডিং শেখানো হয়। মেয়েদেরা সাধারণত তাদের শখের বসেই প্রোগ্রামিং শিখে এই কথাটি থেকেই সাইটটির নির্মাতা Alexandra Diracles এবং Melissa Halfon এর মাথায় সাইটির নির্মাণের আইডিয়া আসে। এই ওয়েব অ্যাপটি ভিডিওতে ইফেক্ট প্রয়োগ করার সময় ইফেক্ট এর কোডগুলো প্রদশর্নের মাধ্যমে মেয়েদের কোডিং শিখিয়ে থাকে, আর কোডিং সম্পর্কে পাশের স্লাইডবারে সহজ ভাষায় বুঝিয়ে দেওয়ারও ব্যবস্থা রয়েছে Vidcode সাইটে।

Ladies Learning Code

মেয়েদের কোডিং শেখানোর এই সংস্থাটি ২০১১ সালের জুলাই মাসে কানাডার Toronto শহরে একটি সেমিনার আকারে শুরু হয়েছিলো। পরবর্তীতে সেমিনার থেকে এটি একটি পূর্ণাঙ্গ সংস্থায় রূপ নেয় এবং পুরো কানাডায় তাদের কার্যক্রম শুরু করে দেয়ে। বর্তমানে সংস্থাটি নতুন এবং অনভিজ্ঞ মেয়েদের জন্য বিভিন্ন টেকনোলজি ইভেন্টস এর আয়োজন করে থাকে। আর তাদের এই ইভেন্টসগুলোতে তরুণীদের আগ্রহ অনেক বেশি দেখে সংস্থাটি ৬ থেকে ১৬ বছরের কিশোরীদের জন্য আলাদা এক্সট্রা প্রোগ্রামের ব্যবস্থা করেছে। ঘুরে আসুন তাদের ওয়েবসাইট থেকে এখানে ক্লিক করে।

Code First: Girls

যুক্তরাজ্যের মহিলাদের জন্য উপযুক্ত কোডিং শেখার সাইট হচ্ছে এই Code First: Girls। যুক্তরাজ্যের আন্ডারগ্রাজুয়েট মহিলাদের কর্মসংস্থানের জন্য Code First: Girls সংস্থাটি কোডিং শেখার ব্যবস্থা করেছে। গ্রাজুয়েট মহিলাদের জন্যেও সংস্থাটির কোর্স রয়েছে কিন্তু সেটা শুধুমাত্র লন্ডনের নির্দিষ্ট কিছু শহরের জন্য সীমাবদ্ধ রয়েছে। কোডিং কোর্স ছাড়াও সংস্থাটি বিভিন্ন টেকনোলজি ইভেন্টস এবং টেকনোলজি ক্যারিয়ার নিয়ে মোটিভেশনাল ইভেন্টস এর আয়োজন করে থাকে।

Girls Teaching Girls To Code

আমাদের আজকের লিস্টের সবার শেষে রয়েছে Girls Teaching Girls To Code প্রোগ্রামটি। নামের মধ্যেই আপনারা ইতিমধ্যেই বুঝে গিয়েছেন যে এখানে মেয়েরাই মেয়েদের কোডিং শেখায়।  Girls Teaching Girls To Code প্রোগ্রামটিতে স্ট্যান্ডফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের কম্পিউটার সাইন্স ডিপার্টমেন্টের মহিলা স্টুডেন্টরা বিভিন্ন হাই স্কুলের মেয়েদের কম্পিউটার সাইন্স বিষয়ে ক্লাসের মাধ্যমে শিক্ষা দিয়ে থাকে। এর মাধ্যমে হাই স্কুলের মেয়েদের টেকনোলজিতে ক্যারিয়ার গড়ার জন্য প্রোগ্রামটি অনেক অবদান রেখে আসছে।

পরিশিষ্ট:

এই ছিলো আজকের ১০ টি কোডিং সংস্থা যেগুলোর মাধ্যমে আপনি বুঝতে পেরেছেন যে বহিবিশ্বে কম্পিউটার কোডিং সেক্টরে মহিলাদের আধিপত্য দিন দিন বেড়েই চলেছে। কিন্তু দুঃখের বিষয় হচ্ছে আমাদের দেশে এখনো মেয়েরা টেকনোলজি সেক্টরে ক্যারিয়ার গড়া নিয়ে বেশ পিছিয়ে রয়েছে। কিন্তু তা বলে একেবারেই এরা অন্ধকারে রয়েছে তা নয়। দিন দিন আমাদের দেশের মেয়েও টেকনোলজিতে নিজেরে ক্যারিয়ার গড়ার জন্য প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। আশা করবো আজকের টিউনটি আপনাদের কাছে ভালো লেগেছে। টিউনটি ভালো লাগলে উপরের জোস বাটনে ক্লিক করতে ভূলবেন না যেন। আজ তাহলে এ পর্যন্তই থাক। আগামীতে অন্য টপিক নিয়ে আমি চলে আসবো আপনাদেরই প্রিয় বাংলা টেকনোলজি সোশাল প্লাটফর্ম টেকটিউনস এ। টিউনটি পড়ার জন্য ধন্যবাদ।

Level 10

আমি ফাহাদ হোসেন। Supreme Top Tuner, Techtunes, Dhaka। বিশ্বের সর্ববৃহৎ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির সৌশল নেটওয়ার্ক - টেকটিউনস এ আমি 12 বছর 3 মাস যাবৎ যুক্ত আছি। টেকটিউনস আমি এ পর্যন্ত 661 টি টিউন ও 428 টি টিউমেন্ট করেছি। টেকটিউনসে আমার 149 ফলোয়ার আছে এবং আমি টেকটিউনসে 0 টিউনারকে ফলো করি।

যার কেউ নাই তার কম্পিউটার আছে!


টিউনস


আরও টিউনস


টিউনারের আরও টিউনস


টিউমেন্টস

বাংলাদেশি মেয়েদের কোন এধরনের উদ্যাগ নেই। সত্যি ই খুব দুঃখজনক।