চলুন জেনে নেওয়া যাক ইন্টারনেট বিহীন এক পৃথিবীর গল্প

টিউন বিভাগ প্রতিবেদন
প্রকাশিত
জোসস করেছেন
Level 12
কন্টেন্ট রাইটার, টেল টেক আইটি, গাইবান্ধা

বন্ধুরা সবাই কেমন আছেন? আশা করছি সকলেই আল্লাহর রহমতে ভালো আছে। 'ইন্টারনেট' যে বিষয়টি আমাদের জীবনের সঙ্গে ওতপ্রোতভাবে জড়িত। বর্তমানে যেন এক মুহূর্তও চলে না ইন্টারনেট ব্যতীত। তবে আপনি কি কখনো ভেবে দেখেছেন কি এমন হতো যদি ইন্টারনেটই না থাকতো?

আপনাকে যদি প্রশ্ন করা হয় পৃথিবীর সবচাইতে জনপ্রিয় বাক্য কোনটি অথবা কক্সবাজার যেতে কত টাকা খরচ হয় এমন হাজারো প্রশ্নের উত্তর পেতে আমরা দ্বারস্থ হই ইন্টারনেটের উপর। একটা সময় ছিল যখন প্রয়োজনীয় কোন বিষয় খুঁজে পাবার জন্য যেতে হতো পাঠাগারে এবং সেখানে সারিসারি বই এর মধ্য থেকে খুঁজে নিতে হতো প্রয়োজনীয় তথ্যটি। তবে বর্তমানে সে ধারণা একেবারেই পাল্টে গেছে। তবে আজকে আমি আপনাদেরকে নিয়ে যেতে চাই ইন্টারনেটবিহীন এক পৃথিবীর গল্পে।

কেমন হবে ইন্টারনেটবিহীন পৃথিবী?

ইন্টারনেট আছে বলেই কিন্তু ঘরে বসে মিলিয়ন ডলার আয় করা সম্ভব হচ্ছে। কিন্তু কখনো কি ভেবে দেখেছেন যদি পৃথিবীতে ইন্টারনেটেই না থাকতো তাহলে কি হতো? কিছুই হয়তো হতো না। কেননা এভাবেই তো পৃথিবী চলেছে শতাব্দীর পর শতাব্দী। আর পৃথিবীতে ইন্টারনেট এসেছে কয়েক যুগ আগে। তাহলে ইন্টারনেট বিহীন পৃথিবী চলবে না কেন? বিষয়টি যত সহজ ভাবে আপনি চিন্তা করছেন এটি মোটেও এত সহজে না।

এখন আপনাদের মনে প্রশ্ন আসতে পারে যে ইন্টারনেট কি আসলেই শাটডাউন করার আশঙ্কা আছে? এর উত্তর হবে না। কারণ পৃথিবীর কোন দেশে ইন্টারনেট বন্ধ করার ব্যবস্থা থাকলেও পুরো বিশ্বের ইন্টারনেট বন্ধ করার কোন একটি সুইচ নেই। ইন্টারনেট হচ্ছে অনেকগুলো কম্পিউটারের একটি মিলিত নেটওয়ার্ক ব্যবস্থা। তাই কোন একটি বা একাধিক কম্পিউটারে না থাকলে বা কাজ না করলে বাকি গুলো বন্ধ হয়ে যাবে না, তখনো চালু থাকবে অনেক কম্পিউটার। তাই বিশ্বের এক প্রান্তে ইন্টারনেট বন্ধ হয়ে গেলেও আরেক প্রান্তে তা ঠিকই চলবে।

তবে আজকের টিউনটি যেহেতু ইন্টারনেটবিহীন পৃথিবী সম্পর্কে। তাই পৃথিবী থেকে ইন্টারনেট এর অস্তিত্ব বিলুপ্ত না হয়ে গেলেও আপনাকে ইন্টারনেটবিহীন পৃথিবীর গল্প শোনাতেই হবে। তবে চলুন বিস্তারিত আলোচনা করে নেই।

ইন্টারনেট না থাকার কারণে সবার আগে এই বিষয়টি উপলব্ধি করবে গুগল-ফেসবুক এর মতো প্রতিষ্ঠানগুলো। কারণ তারা বিলিয়ন ডলারের ব্যবসা হারাবে। আপনি ভাবুনতো ফেসবুক, টুইটার, ইনস্টাগ্রাম ছাড়া একদিন। বলতে চাচ্ছি কেমন হবে যদি না থাকে ইন্টারনেট। অনেকেই হয়তো বা বলবেন বেশ ভালই হবে। মানুষ স্মার্টফোন থেকে মুখ ঘুরিয়ে এবার হয়তো সামনের মানুষটির সাথে কথা বলতে শুরু করবে। ইমেইল আর মেসেঞ্জার এর মেসেজ বাদ দিয়ে চিঠি লিখতে শুরু করবে।

ভার্চুয়াল জগতে নয় বাস্তব দুনিয়াতে ও আবার সামাজিক হয়ে উঠবে সবাই। তবে বিষয়টা ঠিক এতটা সহজ নয়। ইন্টারনেট শুধু চিঠির অস্তিত্বকে বিলুপ্ত করেনি। দৈনন্দিন জীবনের বেশিরভাগ কাজেই মানুষ জড়িয়ে ফেলছে ইন্টারনেটের সঙ্গে। সহজ করেছে আমাদের দৈনন্দিন জীবনযাত্রার প্রতিটি ধাপকে। এই যেমন সকালে উঠে গাড়ি ডাকা থেকে শুরু করে ব্যাংকের লেনদেন কিংবা দুপুরের খাবারের অর্ডার সবই হচ্ছে ইন্টারনেটের মাধ্যমে। আর হঠাৎ করে যদি ইন্টারনেট চলে যায় তবে কেমন হবে আমাদের জীবনযাত্রা তা একবার কল্পনা করে দেখুন। প্রায় থমকে যাবে আমাদের জীবন।

আপনি কোথায় বেড়াতে গিয়ে যদি হারিয়ে যান তবে সেখান থেকে কিভাবে আপনার গন্তব্যে পৌঁছাবেন? নিশ্চয় সেসময় ইন্টারনেট থাকলে আপনি চলে যেতেন সেই গুগল ম্যাপে এবং আপনার লোকেশন টি দেখে আপনার গন্তব্যে পৌঁছে যেতেন। তবে তখন এটি সম্ভব নয়, কেননা সে সময় ইন্টারনেট ই নেই। ইন্টারনেট না থাকলে আপনি হয়তোবা এই লেখা টি ও পড়তে পারতেন না বা পড়ার অনুধাবন উপলব্ধিই করতে পারতেন না। কেননা 'ইন্টারনেট' এই শব্দটি আপনাদের সে সময় কোন প্রয়োজনে আসবে না।

এবার আসা যাক ইন্টারনেটভিত্তিক প্রতিষ্ঠান গুগলের মত জায়ান্টের দিকে। ইন্টারনেট না থাকলে বন্ধ হয়ে যাবে গুগল, অ্যামাজন আর ফেসবুক এর মতো প্রতিষ্ঠান। তারা হারাবে বিলিয়ন ডলারের ব্যবসা। ফলে বেকার হয়ে পড়বে এসব প্রতিষ্ঠানের সাথে জড়িত লাখো মানুষ। সেই সাথে ইন্টারনেট ভিত্তিক বিজ্ঞাপণ এর সাথে যুক্ত এমন ব্যবসা ও মুখ থুবড়ে পড়বে। ফলে দারিদ্রতা এবং বেকারত্ব মানুষের উপর চেপে বসবে। এক কথায় উন্নত বিশ্বের দেশগুলো পড়বে বড় ধরনের অর্থনৈতিক সংকটে।

ইন্টারনেট না থাকলে প্রথমে ফিরে আসবে চিঠি আর ফ্যাক্স মেশিন। ওয়ারলেস ফাইল ট্রান্সফার সিস্টেম না থাকলে কম্পিউটারের একটির সাথে অন্যটির যোগাযোগের জন্য লাগবে বৈদ্যুতিক তার এবং সেই সঙ্গে ব্যবহার করতে হবে সিডি। ইন্টারনেটবিহীন পৃথিবীতে মানুষ শিক্ষা, বিনোদন এর জন্য প্রয়োজনীয় তথ্যাদি খুঁজে পাবেনা। কেননা সেগুলো খুঁজে পাওয়ার জন্য গুগল কিংবা ইউটিউব নেই। ইন্টারনেট না থাকলে বেকার হবে লক্ষ লক্ষ ফ্রিল্যান্সার।

এবার আসা যাক অর্থনীতির দিকে। ব্যাংকিং সেবা বেশিরভাগই ইন্টারনেট ভিত্তিক। ইন্টারনেট না থাকলে থাকবেনা ই-ট্রানস্ফার সিস্টেম। ক্রেডিট কার্ড কিংবা ডেবিট কার্ড হয়ে যাবে মূল্যহীন প্লাস্টিক। বন্ধ হয়ে যাবে অ্যামাজন কিংবা বাংলাদেশি দারাজ এর মতো প্রতিষ্ঠানগুলো। আর বিটকয়েনের কি হবে তা আমরা সবাই জানি। বিটকয়েন তখন হবে একটি অতীত মাত্র।

সত্যি কথা বলতে যে পৃথিবীর প্রায় অর্ধেকেরও বেশি মানুষ বুঝবেই না যে ইন্টারনেট নেই, কারণ বর্তমান এই সময়েও বিশ্বের ৪০০ কোটি মানুষ ইন্টারনেট সংযোগেরই বাইরে। ফলে তারা উপলব্ধি করতে পারবে না যে ইন্টারনেট বিষয়টি আর নেই। এবার আপনাদের মনে প্রশ্ন আসতে পারে তাহলে এসব দেশের উপর কি কোনো প্রভাব পড়বে না? তারাও বাদ যাবেনা এ প্রভাব থেকে। বিশ্ববাণিজ্য যেহেতু ইন্টারনেট ভিত্তিক তাই ভুক্তভোগী হবে তারাও। আন্তর্জাতিক ট্রানজিট, বিমান যোগাযোগ ব্যাহত হওয়ায় পণ্য পরিবহনের খরচ বাড়বে ব্যাপকহারে। আর এর প্রভাব পড়বে নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের বাজারে। ফলে নিম্নআয়ের মানুষেরা পড়বে চরম দারিদ্র্যতায়।

যদিও ইন্টারনেটকে পৃথিবী থেকে বর্তমানে মুছে ফেলা বা বিলুপ্তি ঘটানো সম্ভব নয়, তবুও ইন্টারনেটবিহীন পৃথিবী কেমন হতে পারে সে সম্পর্কে আপনাদেরকে একটি ছোট্ট ধারনা দেবার চেষ্টা করলাম। তবে বন্ধুরা এই ছিল ইন্টারনেট বিহীন এক পৃথিবীর গল্প। যদি টিউনটি আপনাদের কাছে ভাল লেগে থাকে তবে জোসস করতে ভুলবেন না। সম্পূর্ণ টিউনটি পড়ার জন্য ধন্যবাদ। আসসালামু আলাইকুম।

Level 12

আমি মো আতিকুর ইসলাম। কন্টেন্ট রাইটার, টেল টেক আইটি, গাইবান্ধা। বিশ্বের সর্ববৃহৎ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির সৌশল নেটওয়ার্ক - টেকটিউনস এ আমি 3 বছর 5 মাস যাবৎ যুক্ত আছি। টেকটিউনস আমি এ পর্যন্ত 333 টি টিউন ও 93 টি টিউমেন্ট করেছি। টেকটিউনসে আমার 60 ফলোয়ার আছে এবং আমি টেকটিউনসে 2 টিউনারকে ফলো করি।

“আল্লাহর ভয়ে তুমি যা কিছু ছেড়ে দিবে, আল্লাহ্ তোমাকে তার চেয়ে উত্তম কিছু অবশ্যই দান করবেন।” —হযরত মোহাম্মদ (সঃ)


টিউনস


আরও টিউনস


টিউনারের আরও টিউনস


টিউমেন্টস