নতুন মোবাইল কেনার পর সেটি ধীরে ধীরে কেন স্লো বা ধীরগতির হয়ে যায়?

Level 12
কন্টেন্ট রাইটার, টেল টেক আইটি, গাইবান্ধা

বন্ধুরা সকলেই কেমন আছেন? আশা করছি আপনারা সকলেই আল্লাহর রহমতে ভালো আছেন। বরাবরের মত আজও হাজির হয়েছি নতুন একটি টিউন নিয়ে। আজকে এই টিউনে আমরা খুব গুরুত্বপূর্ণ একটি বিষয় নিয়ে আলোচনা করব।

আমরা যখন একটি স্মার্টফোন কিনি তখন সেটি অনেক দেখে শুনে এবং অনেক ভেবেচিন্তে কিনে থাকি। স্মার্টফোনটি যখন আমরা কিনে থাকি তখন সেটি অনেক ভালো পারফর্ম করে, তবে এর কিছুদিন পর সেটি অনেক স্লো হতে থাকে। মোবাইলটি কেনার পর প্রথমে যে রকম ছিল পরবর্তীতে তখন আর সে রকম থাকে না। আমরা তখন ভাবি যে আমাদের ফোনটি খারাপ, আমরা আশাহত হয়ে পড়ি। সে সময় আমরা অনেক ভিডিও দেখি অনেক এবং টিপস-এন্ড-ট্রিকস মোবাইলের উপর প্রয়োগ করে থাকি। তবে এসব প্রয়োগ করেও মোবাইলটি আগের মত পারফর্ম করে না।

আমরা আমাদের ছোটখাটো কিছু বিষয় যদি ঠিক করে নিতে পারি তবে আমাদের স্মার্টফোনটি হয়তোবা অতটা স্লো হবে না।

Mobile phone

আজকে আমি আপনাদেরকে কয়েকটি টিপস-এন্ড-ট্রিকস বলব যেগুলো আপনার স্মার্টফোনের ওপর প্রথম থেকেই প্রয়োগ করলে আপনার সাধের স্মার্টফোনটি হয়তোবা ভবিষ্যতে স্লো হওয়ার হাত থেকে বেঁচে যাবে। আমরা স্মার্টফোন ব্যবহারে যে ভুলগুলো প্রতিনিয়ত করে থাকি সেগুলো আমরা লক্ষ্যই করি না। আর সেই ভুলগুলো আমরা না করলে আমাদের প্রিয় স্মার্ট ফোনটি আরো অনেক ভাল পারফর্ম করতে পারে। আপনার স্মার্টফোনটি স্লো হবে না, হ্যাং হবে না যদি আপনি কিছু বিষয় লক্ষ্য করেন।

আপনি হয়তোবা আজকের টিউনের বিষয়গুলোর মধ্যে কয়েকটি বিষয়ে জানেন। তবে আমি আপনাকে কথা দিচ্ছি, আজকের এই টিউনে যেসব বিষয়ে বলব সেগুলোর মধ্যে কিছু বিষয়ে আপনি জানলেও হয়তোবা কিছু বিষয়ে আপনি জানেন না। তাই আমি আপনাদেরকে পুরো টিউনটি মনোযোগ দিয়ে পড়ার জন্য অনুরোধ করছি। এজন্য অবশ্যই সম্পূর্ণ টিউনটি মনোযোগ দিয়ে পড়তে থাকুন। টিউনটি যদি আপনাদের কাছে ভাল লেগে থাকে তবে টিউনটিতে একটি জোসস করবেন। তবে চলুন এবার তবে শুরু করা যাক।

১. ফোনে এক্সটার্নাল এসডি কার্ড লাগালে

প্রথমেই যে কারণে আমাদের ফোন স্লো হয়ে যায় তা হল আমাদের ফোনে এসডি কার্ড লাগালে। আমরা কিন্তু সবাই আমাদের ফোনে এসডি কার্ড লাগিয়ে থাকি। বর্তমানে আমাদের ফোনের স্টোরেজ যতটা ফার্স্ট হয়েছে ততটা এসডি কার্ড হয়নি। ফোনের রম যতটা দ্রুত কাজ করে এসডি কার্ড বর্তমানে তার থেকে অনেক ধীর গতিতে কাজ করে। আমরা মোবাইলে যেসব এসডি কার্ড গুলো ব্যবহার করি সেসব বেশিরভাগই তাই হয়। যেগুলো থাকে অত্যন্ত ধীর গতির।

SD Card

আমরা যখনই এসডি কার্ড থেকে কোনো তথ্য নিতে থাকি তখন সেটি অনেক ধীর গতিতে দিয়ে থাকে। এসডি কার্ড থেকে সেই তথ্যটি অনেকে ধীরগতিতে আসার ফলে ফোনটিকে অনেক স্লো মনে হয়। বলতে গেলে যার ফলে ফোনটি স্লো হয়ে যায়। কিন্তু যখন আমাদের ফোনের মেমোরি থেকে সেই তথ্যটি রিড বা রাইট করা হয় সেটি হয় অনেক দ্রুত। প্রসেসর কোন তথ্য নেওয়ার জন্য খুব দ্রুত কাজ করতে পারে। কোন অ্যাপ এর ডাটা গুলো যদি এসডি কার্ডে থাকে তবে প্রসেসর যখন কোন কাজের জন্য কিছু রান করবে তবে সেটি এসডি কার্ড থেকে নিতে অনেক দেরী লাগবে, যে কারণে ফোনটি অনেক স্লো মনে হবে।

ফোনে এসডি কার্ড লাগালে ফোনটি অনেকটা স্লো হয়। বিশেষ করে ফোনে খারাপ কোয়ালিটির এসডি কার্ড লাগালে সেটি ফোনকে ভয়ানক রকমের স্লো করে দেয়। আমার মতে ফোনে এসডি কার্ড যতটা সম্ভব না লাগানোই ভালো। এক্ষেত্রে ফোন কেনার সময় এই জিনিসটা খেয়াল রাখবেন যে, আপনার ফোনে যেন এসডি কার্ড লাগানোই না লাগে। যেন শুরু থেকেই আপনার ফোনে স্টোরেজ বেশী থাকে। আপনাকে যেন আর বাহিরে থেকে কোন এসডি কার্ড লাগাতে না হয়।

আপনি লক্ষ্য করলে দেখবেন যে অনেক দামি ফোনে এসডি কার্ড লাগানো এর অপশন নেই। এসডি কার্ড লাগানো এর অপশন দেওয়া থাকলে যদি কোনো কারণে খারাপ কোয়ালিটির এসডি কার্ড ফোনে লাগানো হয় তবে ফোনটি অনেকটা স্লো হয়ে যেতে পারে। যে কারণে কিন্তু তারা সেসব ফোনে বাহিরে থেকে এক্সটার্নাল এসডি কার্ড লাগানো এর ব্যবস্থা রাখে না। তাই আপনার ফোনের স্টোরেজ যদি অনেক বেশি হয় তবে ভিডিও, অডিও ফাইলগুলো ফোন মেমোরিতে রেখে দেবেন। ফলে আপনার ফাইল গুলো দ্রুত ওপেন হবে। এছাড়া আপনার ফোনে যদি কোন মোবাইল অ্যাপ্লিকেশন ইন্সটল করা থাকে, তবে সেগুলো ফোন মেমোরিতে থাকার ফলে খুব দ্রুতই কাজ করবে।

২. ফোনের স্টোরেজ ভর্তি না করা

Phone storage

আপনার ফোনের স্টোরেজ যদি বেশি হয়ে থাকে অথবা কম হয়ে থাকে তবে আপনি কখনোই সেটি ভর্তি করবেন না। আপনার ফোনটির স্টোরেজ যদি পরিপূর্ণ হয়ে যায় তবে ফোনটি অনেক ধীর গতিতে কাজ করবে। যেটি ফোনের গলা অবধি ভরার মতো। এই উদাহরণটি আপনার সঙ্গে দেওয়া যায়। একইভাবে আপনার গলা অবদি যদি খাবার হয়ে যায় তখন আপনার কি হবে। আপনার গলা অবদি যদি খাবার হয়ে যায় আপনি কি আর খেতে পারবেন?

এক্ষেত্রে আপনার খাওয়াটা কিন্তু ধীরগতির হয়ে যাবে। আপনি প্রথমে খেতে বসে যেরকম তাড়াতাড়ি খেতে পেরেছেন, পেট ভরে গেলে ঠিক অতটা খেতে পারবেন না। ঠিক একই রকম কিন্তু মোবাইলের ক্ষেত্রেও হয়। মোবাইলের স্টোরেজ প্রথমে শূন্য থাকা অবস্থায় যেরকম পারফর্ম করে পরবর্তীতে স্টোরেজ পুরো হয়ে যাবার পর সেরকম আর কাজ করে না। ফোনের প্রসেসিং অনেক স্লো হয়ে যায়, হ্যাং করে এবং ফোনটি অনেক স্লো কাজ করে। তাই সবসময় চেষ্টা করবেন ফোনের স্টোরেজ যতটা সম্ভব খালি রাখা। যদি আপনার ফোনের স্টোরেজ ৫০% খালি রাখতে পারেন তবে এর চেয়ে আর ভালো কিছু হতেই পারে না।

৩. মোবাইলে Default launcher অথবা থিম বাদ দিয়ে অন্য কোনটি ব্যবহার করলে

Theme

আপনার ফোনটি স্লো এবং হ্যাং হয়ে যাবার দ্বিতীয় যে বিষয়টি আপনাদেরকে বলবো তা হল আমরা মোবাইল প্রথমে কেনার সময় যে Default launcher এবং Default theme থাকে সেগুলো আমরা পাল্টিয়ে ফেলি। এসব Launcher এবং Theme গুলো দেখতে অনেক ছোট মনে হয়। যেগুলো থাকে কয়েক এমবি মাত্র। কিন্তু আসলে এটি সেই কয়েক এমবি জায়গা দখল করে রাখে না। এটি ব্যাকগ্রাউন্ডে অনেক বেশি সাইজ দখল করে রাখে। যাতে কিন্তু ফোনের অনেক Ram দখল করে থাকে।

এতে করে যাদের ফোনের Ram কম এমনিতেই তাদের ফোন হ্যাং করতে শুরু করে, ফোনটি অনেকটাই স্লো হয়ে যায়। সেসময় আমরা ফোনটির নির্মাতা কে দোষারোপ করি। এ সমস্যা থেকে বাঁচতে আপনি সবসময় আপনার ফোনটিকে বাই ডিফল্ট অবস্থায় ব্যবহার করার চেষ্টা করবেন। আপনার ফোনটি যে launcher বা operating system এর জন্য তৈরি করা হয়েছে সেটি হতে পারে আপনার মোবাইলের জন্য বেস্ট। আপনি যদি বাহিরে থেকে কোন Theme বা Launcher মোবাইলে সেট করেন তবে সেটি আপনার মোবাইলকে হ্যাং এবং স্লো করে দিবে।

৪. অ্যাপ আইকন এবং মোবাইলের থিম ডিফল্ট রাখা

Mobile app icon

আমরা শুধুমাত্র আমাদের ফোনে বিভিন্ন থিম এবং ওয়ালপেপার সেট করে সন্তুষ্ট থাকি না। আমাদের ফোনে অ্যাপ আইকন পরিবর্তন, মোবাইলের ফ্রন্ট চেঞ্জ সহ যাবতীয় যত কাস্টমাইজ করা যায় সেসবের সমস্তই করে থাকি। এটা করে কিন্তু আমাদের মোবাইলটি হ্যাং করতে শুরু করে। আমাদের এটি মনে রাখা উচিত যে আমাদের ফোনটি কিন্তু কোন কম্পিউটার নয় যেদিকে মনের মত করে কাস্টমাইজ করে নিতে হবে। বরং এটি একটি মোবাইল।

ফোনের ওপরে এতসব অতিরিক্ত কাস্টমাইজেশন এর ফলে যাদের ফোনের রেম অনেকটা কম, তাদের ফোনের রেম কিন্তু এতে করে অনেকটাই পূর্ণ হয়ে যায়। রেমের জায়গাগুলো এসব কাস্টমাইজ এর কারণে খরচ হয়ে যায়। ফোনের অতিরিক্ত রেম খরচ হবার কারণে কিন্তু আমাদের ফোনটি অনেক স্লো এবং হ্যাং হয়ে যায়।

৫. মোবাইলে অপ্রয়োজনীয় অতিরিক্ত অ্যাপ না রাখা

আমরা যখন ফোন কিনি তখন কিন্তু অনেক অ্যাপ মোবাইলে ইন্সটল করতে থাকি। এভাবে করে প্রতিনিয়ত আমাদের মোবাইলে অ্যাপ্লিকেশনের সংখ্যা বাড়তেই থাকে। কিন্তু সেসব অ্যাপ্লিকেশনের মধ্যে আমরা দিনে কয়েকটি মাত্র অ্যাপ্লিকেশন ব্যবহার করে থাকি। কিন্তু ফোনের মধ্যে এ সময়েও ভর্তি রয়েছে প্রচুর অ্যাপ, যে অ্যাপ্লিকেশন গুলো আমরা খুলছি না। আমরা এটা ভাবি যে সেই আপ্লিকেশন গুলো আমরা ব্যবহার করছি না, যে কারণে সে অ্যাপ্লিকেশনগুলো আমাদের মোবাইলের ওপর কোনো প্রভাব ফেলবে না এবং সেগুলো নিস্ক্রিয় অবস্থায় রয়েছে।

তবে আমরা যেসব ব্যবহার করি না, কিন্তু দেখা যায় যে সেগুলো ব্যাকগ্রাউন্ডে কাজ করছে। যার ফলে শুধু ব্যাটারি খরচ হচ্ছে সেটি নয়, এটি আপনার মোবাইলের প্রসেসিং পাওয়ার কেও সবসময় ব্যবহার করছে। যার ফলে আমাদের ফোনটি অনেক ভাল হওয়া সত্বেও পারফরম্যান্স দিন দিন কমে যাচ্ছে। আপনি যদি একটু ভেবে দেখেন যে, আপনার ব্যবহৃত প্রত্যেকটি অ্যাপ যদি একটু একটু করে আপনার মোবাইলের প্রসেসিং পাওয়ার কে ব্যবহার করে তবে আপনার মোবাইলে ইন্সটল করা অতিরিক্ত অ্যাপগুলো নির্দিষ্ট একটি জায়গা দখল করে রাখবে।

তাই আপনি সবসময় চেষ্টা করবেন আপনার ফোনে অতিরিক্ত অ্যাপ্লিকেশন না রাখার। আপনি যে সব অ্যাপগুলো নিয়মিত ব্যবহার করেন এবং যেগুলো বেশি প্রয়োজনীয় সেগুলোই আপনার মোবাইলে রাখতে পারেন। কোন অ্যাপ এর দরকার যদি মাসে দুই এক বার হয় তবে সেগুলো ফোনে না রাখাই ভালো, যদি আপনার ফোনটি ভালো পারফরম্যান্স এর না হয়ে থাকে। যখন সে সব অ্যাপগুলো আপনার দরকার পড়বে তখন সেগুলো ইন্সটল করে নিবেন।

যদি এর একটি উদাহরণ দেওয়া যায় তবে ধরুন বিকাশ অ্যাপের কথা। যারা টাকা লেনদেনের কাজ বেশি পরিমানে করেন তাদের ক্ষেত্রে এই আপনি সবসময় মোবাইলে রাখা দরকার পড়ে। তবে আপনার ফোনে যদি মাসে দুই থেকে একবার টাকা আসে, তবে বিকাশ অ্যাপটি আপনার ফোনে না রাখাই ভালো। কেননা এটি ফোনের অনেকটি জায়গা দখল করে রাখে। এছাড়া অ্যাপটি আপনার ফোনে থাকলেও সেটি কোন কাজে দেবে না। শুধু শুধু এটি আপনার প্রসেসর এবং Ram কে ব্যবহার করবে।

ঠিক এরকম ভাবে আপনার ফোনে অনেক অ্যাপই রয়েছে যেগুলো প্রতিনিয়ত আপনি ব্যবহার করেন না। কিন্তু আপনি সেসব অ্যাপ আপনার মোবাইলে ইনস্টল করে রেখেছেন। যেটি কিন্তু আপনার ফোনের জন্য মোটেও ভালো নয় যদি আপনার ফোনটি কম বাজেটের হয়ে থাকে। আপনার ফোনটি যদিও অনেক ভালোও হয়, তবুও কোন অপ্রয়োজনীয় অ্যাপ আপনার ফোনে রাখা উচিত হবে না। আপনি সবসময় চেষ্টা করবেন আপনার ফোনে আপনার প্রয়োজনীয় এবং প্রতিনিয়ত ব্যবহারযোগ্য অ্যাপ গুলো ইনস্টল করে রাখার, যদি আপনি আপনার ফোনটিকে স্লো না দেখতে চান।

Apps

মোবাইলে অতিরিক্ত অ্যাপ কিন্তু আপনার মোবাইলকে স্লো করে দেয়। আপনার ফোনে যদি মোট ৫০ টি মোবাইল অ্যাপ্লিকেশন ইন্সটল করা থাকে তবে সেগুলোর মধ্যে আপনি যদি মাত্র দশ টি অ্যাপ নিয়মিত ব্যবহার করেন তবে বাকি গুলো কিন্তু এমনিতেই আপনার মোবাইলে থেকে গেল। তবে সেসব অ্যাপগুলো কিন্তু আপনার মোবাইলে নিষ্ক্রিয় অবস্থায় থাকবে না। সেগুলো কিন্তু সে সময়ও ব্যাকগ্রাউন্ড এ চালু থাকে।

আপনার বর্তমানের রান করানো অ্যাপসমূহ যদিও আপনার ফোনটির প্রসেসর এর অধিকাংশ জায়গা দখল করে কাজ করবে, তবুও বাকি অ্যাপ গুলোর জন্যও প্রসেসরকে কিন্তু কাজ করতে হচ্ছে। ফলে আপনার মোবাইলের ব্যাকগ্রাউন্ড এর অ্যাপ গুলো যদি অধিক পরিমাণে হয়ে যায় তবে ব্যাকগ্রাউন্ডে সেইগুলো রান করাতে প্রসেসর অধিক কাজ করতে হবে, যা কিন্তু আপনার মোবাইলকে স্লো এবং হ্যাং করবে। এটি সবসময় মনে রাখবেন যে আপনার মোবাইলে যত পরিমাণ অ্যাপ্লিকেশন ইনস্টল করা থাকবে আপনার মোবাইলটি তত পরিমাণ স্লো এবং হ্যাং হওয়ার সম্ভাবনা থাকে। তাই আপনি অপ্রয়োজনীয় কোন অ্যাপ মোবাইলে রাখবেন না।

এছাড়া আমরা অনেক সময় থার্ড পার্টি মোবাইল এপ্লিকেশন ইন্সটল করি। যেটি কয়েকদিন পরে গিয়ে ধরা পড়ে যে, সেটি একটি ম্যালওয়ার বা স্পাইওয়্যার। যে অ্যাপটি আপনার মোবাইলের গুরুত্বপূর্ণ ডাটাগুলো বিভিন্ন কোম্পানির কাছে শেয়ার করছে। সে সব প্রতিষ্ঠানে আবার সেগুলো কাজে লাগাচ্ছে আপনাকে অনলাইন প্লাটফর্মে বিজ্ঞাপণ দেখানোর কাজে।

এসব ম্যালওয়্যার এবং স্পাইওয়্যার অ্যাপ্লিকেশনগুলো আপনার মোবাইলে ব্যাকগ্রাউন্ডেও কাজ করতে থাকে। আপনার মোবাইলের গুরুত্বপূর্ণ ডেটাগুলো তারা অনেক বিজ্ঞাপণ দাতা প্রতিষ্ঠান কাছে শেয়ার করে। এসব অ্যাপ গুলো আপনার প্রসেসরকে ব্যাকগ্রাউন্ডে ব্যবহার করে।

তাই আপনি যখন কোন মোবাইল অ্যাপ্লিকেশন ডাউনলোড করবেন সেটি অবশ্যই গুগল প্লে স্টোর অথবা অ্যাপল স্টোর থেকে করবেন। তবুও গুগল প্লে স্টোর থেকে অ্যাপ ডাউনলোড করার ক্ষেত্রে আপনাকে কিছু বিষয় লক্ষ্য রাখতে হবে। অ্যাপটির রেটিং কি রকম, অ্যাপটি ব্যবহার করে মানুষের অভিজ্ঞতা ইত্যাদি। এসব ম্যালওয়্যার যুক্ত অ্যাপ্লিকেশনগুলো শুধু আপনার মোবাইলের তথ্যই চুরি করে না, এটি আপনার মোবাইলকেও স্লো করে দেয়।

৬. মোবাইলের ব্যাটারি সেভার চালু করে রাখলে

এরপর আমি আপনাদেরকে যে বিষয়টি বলবো সেটি হল আমরা অনেক সময় আমাদের ফোনের ব্যাটারি বাঁচানোর জন্য ব্যাটারি সেভার চালু করে রাখি। যার ফলে আমাদের ফোনের ব্যাটারি ব্যাকআপ হয়তো বা অনেকটা বেড়ে যায়, কিন্তু আমরা খেয়াল করি না যে আমাদের মোবাইলের সিপিইউ এর পারফরম্যান্স এতে কমে যায়। ব্যাটারি সেভার প্রসেসরকে আন্ডার লক করে দেয়। যার ফলে ফোনটি অনেকটা ল্যাক করে, হ্যাং করে যায়।

এবার আপনার মনে হতে পারে যে তাহলে কি ব্যাটারি সেভার চালু রাখা উচিত না অথবা আমরা কি ব্যাটারি সেভার তবে চালু করবো না? এক্ষেত্রে আমি বলবো ব্যাটারি সেভার অবশ্যই আপনি চালু রাখবেন, ঠিক তখনই যখন দেখবেন আপনার ব্যাটারী শেষ হয়ে আসছে। যখন দেখবেন যে আপনি দীর্ঘক্ষন বাড়ির বাহিরে রয়েছেন এবং সেখানে চার্জ দেওয়ার কোন সুযোগ নেই তখন ব্যাটারি সেভার চালু করা উচিত। এছাড়া অপ্রয়োজনে আপনার মোবাইলের ব্যাটারি সেভার অন রাখা উচিত নয়।

৭. থার্ড পার্টি মোবাইল অ্যাপ্লিকেশন ইন্সটল না করা

আমরা অনেক সময় বিভিন্ন সোর্স থেকে থার্ড পার্টি অ্যাপ্লিকেশন গুলো ইন্সটল করি। যেটি কিন্তু আমাদের মোবাইলের ব্যাটারি পারফরমেন্সে এবং সিপিইউ পারফরম্যান্স কে কমিয়ে দেয়। আমরা অনেক সময় অনেক গুগল প্লে স্টোর বাদ দিয়ে বিভিন্ন ওয়েবসাইট থেকে অ্যাপ ডাউনলোড করি। যেটি কিন্তু আমাদের এবং আমাদের ফোনের জন্য নিরাপদ নয়। এতে করে আপনার তথ্য চুরি হয়ে যেতে পারে। এবার আমাদের মনে এ প্রশ্ন আসতেই পারে যে তারা এসব তথ্য দিয়ে কি করবে? তারা এসব তথ্য কোন কাজে ব্যবহার করবে?

আপনি যখন থার্ড পার্টি কোন অ্যাপ মোবাইলে ইন্সটল করবেন তখন সে অ্যাপগুলো আপনাকে ট্রাক করবে। আপনি কোন ওয়েবসাইটে প্রবেশ করছেন, কোন বিষয়ে বেশি সার্চ করছেন, আপনি কোন লোকেশনে থেকে ইন্টারনেট ব্রাউজ করছেন এবং কোন বিষয়ে বেশি ইন্টারেস্ট দেখাচ্ছেন সেগুলো তারা পৌঁছে দেবে অজানা কোন সার্ভারে। সেসব তথ্য গুলো আপনাকে অনলাইন প্লাটফর্ম এর বিজ্ঞাপণ দেখানোর কাজে ব্যবহার করা হবে। এতে করে আপনার অনেক ব্যক্তিগত তথ্য চলে যেতে পারে কোন বিজ্ঞাপণ দাতা প্রতিষ্ঠান কাছে।

সেসব third-party মোবাইল অ্যাপ্লিকেশনগুলো আপনার মোবাইলে ইন্সটল করা থাকায় আপনার ফোনের যেসব সমস্যা গুলো হবে তা হলো, আপনি যখন আপনার মোবাইলে ইন্টারনেট ব্রাউজ করবেন তখন ডাটা অনেক দ্রুত খরচ হয়ে যাবে কিন্তু ব্রাউজিং অনেক ভাল মনে হবেনা। শুধু তাই নয়, এতে করে আপনার মোবাইলের ব্যাটারি দ্রুত শেষ হয়ে যাবে এবং সেইসঙ্গে এ কাজে আপনার মোবাইলের সিপিইউ কাজ করায় মোবাইল স্লো হওয়া এবং ল্যাক করা শুরু করবে।

থার্ড পার্টি অ্যাপ্লিকেশনগুলো শুধুমাত্র আপনার ফোনের তথ্যই চুরি করে না এটি আপনার ফোনের ব্যাটারি পারফরমেন্স এবং সিপিইউ এর পারফরম্যান্স কমে দেয়। তাই আপনার যখন কোনো অ্যাপ্লিকেশন এর প্রয়োজন পড়বে সেগুলো অবশ্যই গুগল প্লে স্টোর অথবা অ্যাপল স্টোর থেকে ডাউনলোড করে নিবেন। এতে করে হয়তোবা আপনি আপনার মোবাইলকে স্লো এবং হ্যাং হওয়ার হাত থেকে বাঁচাতে পারবেন।

৮. মোবাইলে কোন বুস্টার অ্যাপ্লিকেশন ইন্সটল না করা

আজকের টিউনের টপিকের শেষ পয়েন্ট এটি। ‌এই পয়েন্টটি আলোচনা করার আগে একটি পয়েন্ট নিয়ে আলোচনা করা যাক। আমরা অনেক সময় আমাদের ফোনকে সুপারফাস্ট করানোর জন্য গুগল প্লে স্টোর থেকে বা অ্যাপল স্টোর থেকে বিভিন্ন অ্যাপ ডাউনলোড করে থাকি। যেগুলোর মাধ্যমে আমাদের Ram কে বুস্ট করার চেষ্টা করি। যেখানে এমন এনিমেশন থাকে যে একটি রকেট এসে পুরো মোবাইলকে পরিষ্কার করে দিয়ে গেল। মোবাইলটির রকেটের মতো ফার্স্ট হয়ে গেল। কিন্তু আসলেই ফোনটি স্লো ই থেকে যায়। কাজের কাজ বেশি কিছু হয়না।

দেখা যায় যে, সেসব Ram বুস্টার আরো মোবাইলের গুরুত্বপূর্ণ ডেটা গুলোকে ডিলিট করে মোবাইলটিকে ফাস্ট করেছে। যারা একটু মোবাইল ব্যবহারে কম অভ্যস্ত তারা মোবাইলকে ফাস্ট করানোর জন্য সর্বপ্রথম যে কাজটি করে তা হল প্লে স্টোর থেকে বিভিন্ন বুস্টার অ্যাপ ইন্সটল করে থাকে। অনভিজ্ঞ বেশিরভাগ লোকেই এই কাজটি সর্বপ্রথম করে। সেই অ্যাপের এর মাধ্যমে একের পর এক শুধু ফাইল ডিলিট করতেই থাকে। ফলশ্রুতিতে পরবর্তীতে দেখা যায় যে ফোনের গুরুত্বপূর্ণ তথ্যগুলোই ফোনে আর নেই। এরকম অ্যাপ যারা ইন্সটল করে থাকে তাদের ক্ষেত্রে প্রথম দিকে এরকম সমস্যাই হয়ে থাকে।

সত্যি বলতে যে, আমার ক্ষেত্রেও প্রথমদিকে এরকম সমস্যা অনেকবার হয়েছে। আমিও অনেকবার এরকম অ্যাপ ইন্সটল করার মাধ্যমে আমার অনেক তথ্য হারিয়েছি, যখন আমি মোবাইল হাতে প্রথম পাই। বিভিন্ন বুস্টার অ্যাপ আপনার মোবাইলকে ঠিকই ফাস্ট করবে, তবে সে আপনার মোবাইলের সমস্ত তথ্য গুলোকে ডিলিট করে দিবে তারপর ফাস্ট করবে। যদিও এরকম সব সময় হয় না। সব গুলোই এমনভাবে তৈরি করা নয়। বরংচ সে সব অ্যাপগুলো মোবাইলের অনেকটা জায়গা দখল করে থাকে, যেটি ফোনকে আরো স্লো করে দেয়।

আপনি যদি আপনার মোবাইলের অবাঞ্ছিত ডেটাগুলো ডিলিট করতে চান তবে আপনি এটি মোবাইলের সেটিং থেকে ও করতে পারেন।

শেষ কথা

মোবাইল নতুন কেনার পর যেরকম পারফর্ম করে, পরবর্তীতে সময় যাবার সঙ্গে সঙ্গে আর সেরকম পারফর্ম করে না। এটিই স্বাভাবিক ব্যাপার। চিরকালই একটি যন্ত্র সচল থাকে না এবং সেটি নতুনের মত কাজ করে না। তবুও যদি কিছু বিষয় মেনে চলা যায় তবে অনেক সময় সেটি ভালো চলে। আপনার সাধের স্মার্টফোনটি যদি প্রথম থেকেই ব্যবহারের ক্ষেত্রে যত্নবান হন তবে সেটি অনেকদিন ভালো পারফর্ম করবে। যদিও সকল টিপস-এন্ড-ট্রিকস ফোনের ওপর প্রয়োগ করে মোবাইলটিকে নতুনের মত করা সম্ভব নয়।

আপনার ফোনটি যদি একেবারেই স্লো এবং হ্যাং করে তবে আপনি মোবাইলটিকে factory reset করতে পারেন। এতে করে আপনার মোবাইলের সমস্ত ডেটা গুলো মুছে গিয়ে ফোনটি আবার আগের মত হয়ে যাবে। তবে বন্ধুরা আজ এখানেই বিদায় নিচ্ছি। আশা করছি এই টিউনটি আপনাদের কাছে অনেক ভালো লেগেছে। দেখা হবে পরবর্তী টিউনে আরো নতুন কিছু নিয়ে ইনশাআল্লাহ। ধন্যবাদ

Level 12

আমি মো আতিকুর ইসলাম। কন্টেন্ট রাইটার, টেল টেক আইটি, গাইবান্ধা। বিশ্বের সর্ববৃহৎ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির সৌশল নেটওয়ার্ক - টেকটিউনস এ আমি 3 বছর 5 মাস যাবৎ যুক্ত আছি। টেকটিউনস আমি এ পর্যন্ত 333 টি টিউন ও 93 টি টিউমেন্ট করেছি। টেকটিউনসে আমার 60 ফলোয়ার আছে এবং আমি টেকটিউনসে 2 টিউনারকে ফলো করি।

“আল্লাহর ভয়ে তুমি যা কিছু ছেড়ে দিবে, আল্লাহ্ তোমাকে তার চেয়ে উত্তম কিছু অবশ্যই দান করবেন।” —হযরত মোহাম্মদ (সঃ)


টিউনস


আরও টিউনস


টিউনারের আরও টিউনস


টিউমেন্টস