ই-মেইল নিরাপত্তার টুকিটাকি (নিরাপদ থাকুন, বিব্রতকর পরিস্থিতি এড়িয়ে চলুন)

নিত্যদিনের জীবনে আজ আমরা অনেকেই ই-মেইল ব্যাবহার করে থাকি। ই-মেইল আজ আমাদের অন্যতম (কোন কোন ক্ষেত্রে প্রধান) যোগাযোগ মাধ্যম। অফিসের কাজে, ব্যাবসায়, বন্ধু কিংবা আত্মীয়-স্বজনের সাথে যোগাযোগে আমরা ক্রমশই ই-মেইল নির্ভর হয়ে পড়ছি। আর হবই বা না কেন? যার মাধ্যমে আমাদের প্রয়োজনীয় বার্তাটি হাজার হাজার মাইল দূরে কয়েক সেকেন্ডে ইপ্সিত গন্তব্যে পৌঁছে যাচ্ছে, তাকে কি আর দূরে ঠেলে রাখা যায়?

যাহোক, কাজের কথায় আসি। ই-মেইল এর নিরাপত্তা খুব জরুরী একটা বিষয়। এইদিকে আমাদের অনেকেরই নজর নেই। অনেকে আমরা ব্যাপারটাকে আমলে নেই না – অনেকে আবার খুব একটা জানিও না। ই-মেইল নিরাপত্তার বিষয়টি আলোচনা করবার আগে আসুন আমরা জেনে নেই, নিরাপত্তাহীন একটি ই-মেইল এড্রেস আমাদের কি কি অসুবিধায় ফেলতে পারে।

নিরাপত্তাহীন ই-মেইল এর কিছু উল্লেখযোগ্য ঝুঁকিঃ

- আপনার ই-মেইল যদি নিরাপদ না হয়, তাহলে বিভিন্ন শ্রেণীর সাইবার-অপরাধীরা সহজেই আপনার একাউন্টে প্রবেশ করতে পারবে ও আপনার এড্রেসবুকে রক্ষিত আপনার বন্ধু-বান্ধব, সহকর্মী, আত্মীয়-স্বজনের ই-মেইল এড্রেসগুলো জেনে নিতে পারবে। ফলাফলঃ ঐসব এড্রেসে ‘স্প্যাম অ্যাটাক’ (অনাকাঙ্খিত বা অপ্রয়োজনীয় ই-মেইল আক্রমণ)।

- নিরাপত্তাহীন ই-মেইল এড্রেসে ঢুকে স্প্যামাররা আপনার ই-মেইল এড্রেস ব্যাবহার করে আপনার এড্রেসবুকের সব এড্রেসে নানাধরনের আজে বাজে(মাঝে মাঝে দারুন আপত্তিকর) ই-মেইল বা ওয়েবসাইট এর লিঙ্ক পাঠাতে থাকবে - আপনার সম্পূর্ণ অগোচরে! চিন্তা করুন – আপনার অফিসের বস, আত্মীয় বা বন্ধুরা যদি এটাকে স্প্যাম হিসাবে না ধরতে পারে, তাহলে এধরনের একটা মেইল ‘আপনার’ কাছ থেকে পেলে কি ধারনা নেবে।

- আমরা অনেকেই আমাদের বিভিন্ন জরুরী টেলিফোন নম্বর, ব্যাংক একাউন্ট নম্বর বা বিভিন্ন লগ-ইন পাসওয়ার্ড আমাদের ইনবক্সে ‘আর্কাইভ’ করে রেখে দেই। আপানার ই-মেইলের নিরাপত্তা বিঘ্নিত হলে এসমস্ত ব্যাক্তিগত মুল্যবান তথ্য সাইবার-ক্রিমিনালদের হাতে পড়বে। ফলাফল কি হবে তা সহজেই অনুমেয়।

- আপনার বহুল প্রচলিত ই-মেইল এড্রেসটির নিরাপত্তা না থাকলে, সেটি যে কোন সময়ে সাইবার-অপরাধীদের কবলে পড়ে চিরজীবনের জন্য আপনার নাগালের বাইরে চলে যাবে। আপনি বহু বছর ব্যাবহার করা ঐ ই-মেইল একাউন্টে আর প্রবেশ করতে পারবেন না। ফলাফলঃ নতুন ই-মেইল এড্রেস নেয়া এবং সবাইকে পুনরায় তা জানানোর মত একটি ক্লান্তিকর কাজ!

- আমাদের মধ্যে যাদের ই-মেইল সুরক্ষিত নয়, তাদের মাধ্যমে সহজেই ভাইরাস ছড়িয়ে পড়তে পারে – যার ভুক্তভোগী শুধু আপনিই হবেন না, আপনার এড্রেসবুকে রক্ষিত আপনার প্রিয়জনদের অনেকেই এর শিকার হবেন।

- নিরাপত্তাহীন ই-মেইলের আরেকটি ভয়ংকর ব্যাপার হল ফিশিং (Phishing) বা ‘আইডেন্টিটি থেফট’। বিখ্যাত কিছু ওয়েবসাইটের অনুকরণে তৈরি করা ফিশিং সাইটে আপনাকে আমন্ত্রণ জানানো হবে ফিশিং ই-মেইল এর মাধ্যমে। আপনি হয়তো, ই-বে বা আমাজন থেকে নিয়মিত কোন কিছু কিনে থাকেন। ফিশিং ই-মেইলের মাধ্যমে আপনাকে একই চেহারার ওরকম একটা সাইটে নিয়ে যাওয়া হবে। সরল মনে আপনার ক্রেডিট কার্ড ইনফরমেশন দিয়েছেন তো মরেছেন। আপনার একাউন্ট থেকে মুহূর্তে গায়েব হয়ে যাবে শত কিংবা হাজার ডলার।

ই-মেইল এর এরকমই অনেক নিরাপত্তা ঝুঁকি আছে, যা আরও ব্যাপক ও সুদূরপ্রসারী। তবে সাদামাটা কথায় আমরা উপরের বর্ণনার মত কোন না কোন ঝুঁকির মধ্যেই বাস করছি।

কি করা যায়ঃ

সহজ প্রশ্ন – উত্তরটা ব্যাপক। অনেক কিছুই আমরা করতে পারি। স্প্যাম ফিল্টার কনফিগারেশন, ই-মেইল গেইটওয়ে স্ক্যানার, মেইল সার্ভারের এনক্রিপটেড অথেন্টিকেশন ইত্যাদি দুর্বোধ্য কিছু উপায় শিখতে যেয়ে ঘাম ছুটাতে ও বেশ কিছু টাকাপয়সার শ্রাদ্ধ করতে পারি। অথবা, আম-জনতার জন্য প্রযোজ্য কিছু ব্যাবস্থা নিতে পারি। আমি যেহেতু আম-জনতারই অংশ, তাই সামান্য কিছু সরল অথচ কার্যকরী পরামর্শ দেবার চেষ্টা করব। এই পরামর্শগুলো অনেকের কাছেই হাস্যকর বা অবান্তর মনে হতে পারে, কিন্তু আসলেই এগুলো কার্যকরী।

- ওয়েব মেইলের (জি-মেইল, ইয়াহু ইত্যাদি) পরিবর্তে, ই-মেইল আদান-প্রদানে নির্দিষ্ট কোন POP3 বা IMAP ক্লায়েন্ট ব্যাবহার করুন।

- আপনার ই-মেইল এড্রেসটির পাসওয়ার্ড যথাসম্ভব কঠিন করুন। মনে রাখবেন, ‘myownemail’, ‘3442764’, ‘ODRISSHO’ এগুলো কোন কঠিন পাসওয়ার্ড নয়। বিভিন্ন ধরনের পাসওয়ার্ড হান্টিং সফটওয়্যার দিয়ে এগুলো বের করে ফেলা যায়। কঠিন পাসওয়ার্ডের উদাহরণ হলঃ ‘rYaNIQ29Ta’ বা ‘mYoWs276bR’।

- আপনি যদি কোন ই-মেইল ক্লায়েন্ট (যেমন মাইক্রোসফট আউটলুক বা মজিলা থান্ডারবার্ড) ব্যাবহার করেন, তাহলে সেখানে HTML বা XHTML ই-মেইল রেন্ডারিং বন্ধ করুন। ওয়েবমেইল (জি-মেইল, ইয়াহু ইত্যাদি) এর ক্ষেত্রেও তাই করুন। HTML বা XHTML ই-মেইল রেন্ডারিং বলতে বোঝায়, আপনার ই-মেইলগুলোকে ওয়েবপেজের মত করে দেখানো। এটা নিস্ক্রিয় করে আপনি ‘plain text’ বা সাধারন লিখা অপশনটি বেছে নিন। কেন? HTML বা XHTML ই-মেইল রেন্ডারিং করলে আপনার ই-মেইলে বেশি স্প্যাম অ্যাটাক হবার সম্ভাবনা রয়ে যায়।

- দীর্ঘ সময় ই-মেইলে সাইন-ইন হয়ে থাকবেন না। কাজ শেষে লগ-আউট বা সাইন-আউট করে বেরিয়ে আসুন। এটা আপনার বাসার/ব্যাক্তিগত কম্পিউটার/ল্যাপটপের ক্ষেত্রেও প্রযোজ্য।

- আপনার ই-মেইল একাউন্টের স্প্যাম-ফিল্টার অপশনটি সর্বদা কার্যকর রাখুন।

- অপরিচিত এড্রেস থেকে ই-মেইল আসলে তাকে ভালভাবে নিরীক্ষা করুন। কোন ধরনের এটাচমেন্ট আসলে, আগে নিশ্চিত হোন, তারপর খুলুন। ই-মেইলে আসা এই এটাচমেন্ট এর মাধ্যমেই ভাইরাস ছড়িয়ে পড়ে।

- আপনার ই-মেইলের অতিরিক্ত কোন নিরাপত্তা ব্যাবস্থা (যেমনঃ জি-মেইলের ‘টু-স্টেপ ভেরিফিকেশন’) থাকলে তা ব্যাবহার করুন।

- মনে রাখবেন, বিখ্যাত ই-মেইল সার্ভিস প্রোভাইডাররা (ফ্রি ওয়েবমেইলসহ) আপনাকে কক্ষনো ই-মেইলের মাধ্যমে আপনার পাসওয়ার্ড চাইবে না। তাই [email protected] অথবা [email protected] টাইপের কোন ঠিকানা থেকে ই-মেইল আসলে জাস্ট ওটা মুছে ফেলুন।

- ই-মেইলে কক্ষনো ক্রেডিট কার্ড বা গুরুত্বপূর্ণ একাউন্ট ইনফরমেশন শেয়ার করবেন না। কষ্ট করে একটা ফোন করুন অথবা কোন পূর্ব-নির্ধারিত কোড ব্যবহার করুন।

- কোন মেইল নিয়ে সন্দেহ হলে (যেমনঃ নাইজেরিয়া থেকে আপনার নামে বিরাট সম্পত্তির উত্তরাধিকার সম্পর্কিত কোন ই-মেইল, বা আপনার কোন নিকটাত্মীয় থেকে লন্ডন এয়ারপোর্টে অর্থাভাবে আটকে যাবার কোন কাহিনী ইত্যাদি) মেইলটির সাবজেক্ট লাইন অথবা ভেতরের কিছু লাইন কপি করে গুগল সার্চ দিয়ে দেখুন ওটা কোন ফালতু বা ‘hoax’ মেইল কিনা।

- মাঝে মাঝেই আপনার পাসওয়ার্ডটি বদলান। কাজটি বোরিং, কিন্তু এটা আপনার ই-মেইল একাউন্টকে সুরক্ষিত রাখবে।

- আপনি যদি প্রসিদ্ধ কোন ওয়েবমেইল (জি-মেইল, ইয়াহু ইত্যাদি) ব্যবহারকারী হন, তাহলে মনে রাখবেন, আপনার লগ/সাইন ইন পেজ এর এড্রেস শুরু হবে “https://...” এইভাবে (সিকিউর সার্ভার এড্রেস) কখনো শুধু “http://...” নয়।

আজ এখানেই শেষ করছি। সবাই ভাল থাকবেন ও নিরাপদে ই-মেইল ব্যবহার করবেন – এই কামনায়।

Level 2

আমি মোহাম্মদ ইউসুফ। বিশ্বের সর্ববৃহৎ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির সৌশল নেটওয়ার্ক - টেকটিউনস এ আমি 15 বছর যাবৎ যুক্ত আছি। টেকটিউনস আমি এ পর্যন্ত 96 টি টিউন ও 1054 টি টিউমেন্ট করেছি। টেকটিউনসে আমার 1 ফলোয়ার আছে এবং আমি টেকটিউনসে 0 টিউনারকে ফলো করি।


টিউনস


আরও টিউনস


টিউনারের আরও টিউনস


টিউমেন্টস

darun
Donnobad

আমার কাছে কয়েকদিন আগে কয়েকটা মেইল আসছিল বলে আমি নাকি ১ মিলিয়ন ডলার লটারি পাইছি/আর বলে ১ জন ধনি লোক বিমান দুর্ঘটনায় মারা গেছে তার সম্পত্তি নাকি গরিব দেশে দিয়ে দিবে বাংলাদেশ থেকে আমাকে সিলেক্ট করা হয়েছে / আবার আরেকজন বলে আমার সাথে বেবসা করবে ইনভেস্ট তার এই সব বলে আমার নাম ঠিকানা ফোন নাম্বার ব্যাংক অ্যাকাউন্ট নাম্বার চায়/আমি শুধু ১ টা কথাই বলি DO YOU THINK I AM FOOL LIKE THAT YOU তারপর থেকে আর মেইল আসেনা হাহাহাহাহহাহাহ

বেশ দারূণ হয়েছে আপনার টিউন… ভালো লিখেছেন। ৫০ তম টিউনের অগ্রীম শুভেচ্ছা রইলো…

Level 0

Thanks, brother

সরাসরি প্রিয়তে।

খুব ভাল লিখেছেন | খুব কাজের জিনিস |
যারা জানেননা তাদের তো কাজে লাগবেই, আর যারা জানেন তাদের ক্ষেত্রে reminder হিসাবে খুব ভালো |

keep it up