প্রাণীদের উপবাস (জানার আছে অনেক কিছু)

খরা বা শীতের সময় না খেয়ে থাকাটা প্রাণীদের জীবনেরই একটা অংশ। না খেয়ে টিকে থাকার অনেক উপায় তাদের জানা। কিছু কিছু প্রজাতি তো খাদ্য ছাড়াই দিনের পর দিন টিকে থাকতে পারে। জানুন এ রকমই কয়েকটি প্রজাতির কথা।

***ইস্টার্ন পিগমি পসাম

মোটাতাজা হয়ে শীতনিদ্রা

অস্ট্রেলিয়ার ইস্টার্ন পিগমি পসাম (নিচে) প্রতিকূল পরিবেশে টিকে থাকতে পারে কোনো রকম খাবার না খেয়েই। প্রাণীটির শরীরে জমা থাকা ফ্যাট শীতনিদ্রার সময় গড়ে প্রায় ৩১০ দিন শক্তি জোগায়, স্তন্যপায়ী প্রাণীদের মধ্যে যা সর্বোচ্চ। জীববিজ্ঞানীরা মনে করেন, এটির আরেকটি প্রজাতি লিটল পিগমি পসাম ছয় মাস শীতনিদ্রায় থাকে। দুটো প্রজাতিই পোকা, পুষ্পরেণু ও পুষ্মমধু খায়। খাবার যখন পর্যাপ্ত থাকে তখন মোটা না হওয়া এগুলো পর্যন্ত খেতেই থাকে। দুর্দিনের জন্য খাদ্য জমিয়ে রাখে নিজের শরীরেই।

বেশির ভাগ প্রাণীর জন্যই জীবনটা খাদ্যঘাটতি আর খাদ্য-উদ্বৃত্তের সময়ের মধ্যে একটা ভারসাম্য। ঘাটতির সময়টায় যে প্রজাতি নিজেকে ভালোভাবে খাপ খাওয়াতে পারে, তার টিকে থাকার সম্ভাবনাটা সবচেয়ে বেশি। কিছু কিছু প্রাণী আবার উপবাসশিল্পী। তারা খাদ্য দুষ্প্রাপ্যতার সঙ্গে এমনভাবে মানিয়ে নেয় যে, মাসের পর মাস না খেয়েও টিকে থাকতে পারে। কোনো কোনো প্রজাতি আবার কয়েক দিন না খেলেই অক্কা পায়।

দীর্ঘদিন না খেয়ে বেঁচে থাকাটা নির্ভর করে দক্ষতার সঙ্গে শক্তি সঞ্চয় করে রাখার কৌশলের ওপর। মূল্যবান শক্তি জমিয়ে রাখার জন্য অনেক প্রাণী তাদের শরীরের তাপমাত্রা কমিয়ে ফেলে। অনেকেই আবার শরীরের অনেক অঙ্গে রক্তের সরবরাহ কমিয়ে দেয়। পরিপাক ও রোগপ্রতিরোধ প্রক্রিয়াটাকে থামিয়ে রাখে।

আর্কটিক গ্রাউন্ড স্কুইরেল আট থেকে দশ মাসব্যাপী শীতনিদ্রার সময় শরীরের তাপমাত্রা ২৭ ডিগ্রি ফারেনহাইট কমিয়ে আনে।

কালো ভালুক আবার সুপ্ত অবস্থায় চলে যায় যেখানে তার শরীরের তাপমাত্রা স্বাভাবিকই অবস্থায় থাকে। অস্ট্রেলিয়ার ডোরাকাটা বরোউয়িং ব্যাঙ প্রতিকূল আবহাওয়ায় সুপ্ত অবস্থায় থাকে চার থেকে পাঁচ বছর। উপবাসের সময়টায় এটি থাকে মাটির নিচের সুড়ঙ্গে। সঞ্চিত শক্তি ভালোভাবে ব্যবহার করার জন্য এটি শরীরের বিপাকক্রিয়া পাল্টে ফেলে।

***শরীরের ভান্ডার

বেশির ভাগ প্রাণীর জীবনে খাওয়া ও উপবাসের চক্র উপস্থিত। তারা এই চক্র হিসাব করেই পরিকল্পনা করে। সামুদ্রিক পাখি স্টর্ম পেট্রেলের ছানারা শরীরের চর্বির স্তর থেকে শক্তি পায়। ধারণা করা হয়, খাবারের অভাব হলে শরীরে জমা চর্বির ভান্ডার থেকে শক্তি পায় তারা। কারণ দুর্যোগপূর্ণ পরিবেশের কারণে কয়েক দিন পর্যন্ত তাদের মা-বাবা তাদের খাওয়াতে পারে না। অনেক পরিযায়ী পাখিকে মরুভূমি বা সমুদ্রের ওপর দিয়ে এক স্থান থেকে অন্য স্থানে যাওয়ার সময় না খেয়ে থাকতে হয়। তখন তারা তাদের শরীরে সঞ্চিত ফ্যাট থেকে শক্তি পায়। গার্ডেন ওয়ারব্লের সাহারার ওপর দিয়ে তানজানিয়া থেকে ইথিওপিয়ায় যায়। এই দীর্ঘ যাত্রার সময় এটির যকৃৎ, প্লীহা, কিডনি ও পরিপাকতন্ত্রের কাজ স্বাভাবিকের চেয়ে অর্ধেকে নেমে আসে। এমনকি এটির হূৎপিণ্ড ও পাখার মাংশপেশির অংশও সংকুচিত হয় চর্বিকে জায়গা দিতে।

***বাদামি ভালুক

ঘুমিয়ে ওজন কমানো

শীতকালে প্রায় সাত মাস শীতনিদ্রায় থাকে বাদামি ভালুক। সুপ্ত অবস্থায় এটি তার বিপাক ক্রিয়া ও হূৎস্পন্দন কমিয়ে দেয়। কিন্তু শরীরের তাপমাত্রা স্বাভাবিক রাখে। বছরের যে পাঁচ মাস এটি জেগে থাকে, সে সময়ে এটি বেরি, গাছের মূল, পোকামাকড়, মাছ, ইঁদুরজাতীয় প্রাণী খেয়ে শরীরে চর্বি জমায়। এই চর্বিই তাকে পুরো শীতনিদ্রার সময় শক্তি জোগায়।

***মোটা লেজের বামন লেমুর

সরীসৃপের স্বভাব

মাদাগাস্কারের এই প্রাণী প্রতি শীতে সাত মাসের জন্য শীতনিদ্রায় যায়। তখন এটি গুটিসুটি হয়ে থাকে গাছের খোঁড়লে। শরীর ও লেজে জমানো চর্বির ভান্ডার থেকে এটি শক্তি পায়। সরীসৃপের মতোই এটির শরীরের তাপমাত্রা চারপাশের তাপমাত্রার মতো থাকে। যদি গাছের ফোকরের ভেতরের তাপমাত্রা ওঠানামা করে, তবে এটির শরীরের তাপমাত্রাও সে অনুযায়ী ওঠানামা করে।

***অ্যাটলাস মথ

না খেয়েই মৃত্যু

শুয়োকীট সারা দিন কেবল খেয়েই যায়। কিন্তু পূর্ণবয়স্ক পোকায় রূপান্তরের পর এই মথ না খেয়েই থাকে। অ্যাটলাস মথের মতো অনেক পূর্ণবয়স্ক মথের মুখের অংশ ঠিকমতো গড়েই ওঠে না। এসব পূর্ণ বয়স্ক মথের পুরো জীবনটাই নির্ভর করতে হয় শূককীট অবস্থায় শরীরে জমা ফ্যাটের ওপর। কিন্তু এই সঞ্চয়ে বেশি দিন চলে না। তাই অ্যাটলাস মথের আয়ু মাত্র দুই থেকে তিন সপ্তাহ।

***অস্ট্রেলিয়ান বারোউয়িং ব্যাঙ

পাতাল গমন

অস্ট্রেলিয়ান বারোউয়িং ব্যাঙ দীর্ঘ খরার সময় নিজেকে রক্ষা করতে মাটির নিচের সুড়ঙ্গে চলে যায়। সেখানে এটি চর্বির সঞ্চয়ের ওপর নির্ভর করে পাঁচ বছর পর্যন্ত সুপ্তাবস্থায় থাকতে পারে। চামড়ার একটি আবরণের ভেতর কোকুন অবস্থায় থাকে। যখন বৃষ্টি হয়, ব্যাঙগুলো মাটির ওপরে উঠে বংশবিস্তার করে আর খায়। নিজের শরীরের অর্ধেক আকৃতির প্রাণীও তারা খেয়ে ফেলে।

***বার-টেইলড গডউইট

এক ট্যাংকে ৭ হাজার মাইল

আলাস্কার এই পাখিটি না থেকে হাজার হাজার মাইল ভ্রমণ করে প্রতিবছর। ভ্রমণের সময় এটি কিছুই খায় না। একটি গবেষণায় দেখা গেছে, একটি পাখি পশ্চিম আলাস্কা থেকে যাত্রা শুরু করে আট দিন পর ৭ হাজার ২৫৭ মাইল ভ্রমণ করে নিউজিল্যান্ডে পৌঁছেছে। এ সময় এটি কিছুই খায়নি। যাত্রা শুরু করার আগে গডউইট পাখির পরিপাকতন্ত্র সংকুচিত হয় এবং তাদের শরীরের ওজনের অর্ধেই থাকে ভ্রমণে শক্তির উৎস চর্বি।

***পাইথন পেট মোটা

পাইথন এক বছর না খেয়ে থাকতে পারে। কিন্তু যখন তারা খায়, তারা তাদের শরীরের আকারের দেড় গুণ বড় প্রাণীও গিলতে পারে। খাবার গেলার পর অজগরের পরিপাকতন্ত্র কাজ শুরু করে। বড় প্রাণী খাওয়ার ২৪ ঘণ্টা পর অজগরের পাকস্থলী ও খাদ্যনালি আকারে দ্বিগুণ হয়। এরপর প্রায় দেড় বছর আর না খেলেও চলে।

***ভূমির শামুক নিজের খোলসে বন্দী

প্রলম্বিত খরা বা ঠান্ডা আবহাওয়ায় ইউরোপের ল্যান্ড লেইল কয়েক সপ্তাহ নিজেদের খোলসে আবদ্ধ করে রাখে। তারা খোলসের মধ্যে ঢুকে এক ধরনের মিউকাস নিসৃত করে, যা খোলসের মুখ বন্ধ করে দেয়। ফলে এটির শরীর থেকে পানি বের হয়ে যায় না। বিপাক ক্রিয়া কমিয়ে এটি শক্তি কম খরচ করে। যখন পানি আবার পাওয়া যায় অথবা তাপমাত্রা বাড়ে, শামুকগুলো জেগে ওঠে এবং খোলস থেকে বেরিয়ে আসে।

***লাংফিশ বাঁচার জন্য ধীরস্থির

আফ্রিকার লাংফিশের ফুলকাও আছে আবার ফুসফুসও আছে। যখন পানির স্বল্পতা দেখা দেয় এগুলো পুকুর বা নদীর তলের মাটিতে গর্ত করে থাকে। মিউকাসের একটি স্তর এগুলোর শরীরকে সুরক্ষিত রাখে। শক্তি বাঁচাতে বিপাক ক্রিয়া ধীরগতির করে ফেলে লাংফিশ।

***টারডিগ্রেড

টারডিগ্রেড না খেয়ে প্রায় এক যুগের মতো থাকতে পারে। মাইক্রোস্কোপিক এ প্রাণী ক্রিপটোবায়োসিস নামের একটি সুপ্ত অবস্থার মধ্য দিয়ে যায়। তখন তাদের শরীরের বিপাক ক্রিয়া পুরোপুরি বন্ধ হয়ে যায়। তারা শূন্যের নিচে ৪৫৯ ডিগ্রি ফারেনহাইট থেকে ২০০ ডিগ্রি ফারেনহাইট তাপমাত্রায় পর্যন্ত বাঁচতে পারে। এমনকি ছয় হাজার অ্যাটমোস্ফিয়ার চাপেও এগুলো টিকে থাকতে পারে।

Level 0

আমি সাবিহা। বিশ্বের সর্ববৃহৎ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির সৌশল নেটওয়ার্ক - টেকটিউনস এ আমি 13 বছর 9 মাস যাবৎ যুক্ত আছি। টেকটিউনস আমি এ পর্যন্ত 98 টি টিউন ও 753 টি টিউমেন্ট করেছি। টেকটিউনসে আমার 3 ফলোয়ার আছে এবং আমি টেকটিউনসে 0 টিউনারকে ফলো করি।

খুব সাধারন একটি মানুষ।সারাদিন কম্পিউটার নিয়ে পড়ে থাকি।মুভি দেখি,ব্লগ এ ব্লগ এ ঘুরাঘুরি করি।পড়ালেখা করতে বরাবরই ভয় লাগে। আর ফেসবুক এ একটা পেজ খুলেছি।যারা সময় পাবেন একটু ঢু মেরে আসবেন।


টিউনস


আরও টিউনস


টিউনারের আরও টিউনস


টিউমেন্টস

সবচেয়ে লম্বা দম্পতির দিনকাল

কিশা যখন তার স্বামী উইলকো ভ্যান ক্লিফ বোল্টনকে নিয়ে ঘর থেকে বেরিয়েই বুঝতে পারেন, প্রতিবেশীরা অবাক হয়ে তাদের দেখছেন। অনেকে আবার তাদের দেখতেই ডাগেনামের বাড়ির সামনে ভিড় করেন। মানুষের আর দোষ কী? পৃথিবীর সবচেয়ে দীর্ঘকায় দম্পতিদের দেখার কৌতূহল তো থাকবেই। বেশি না, ২৯ বছর বয়সী উইলকো মাত্র সাত ফুট আর তার ৩১ বছরের স্ত্রী লম্বায় ছয় ফুট পাঁচ ইঞ্চি! ও হ্যাঁ, কারও মনে কোনো সন্দেহের মৌমাছি গুনগুন করলে বলে নেওয়া যেতে পারে, খালি পায়েই এতখানি লম্বা এই দম্পতি। গিনেস বুকে নাম লেখানো এই দম্পতির চার বছরের ছেলে লুকাস আর দুই বছরের মেয়ে ইভাও বাবা-মায়ের পদাঙ্ক অনুসরণ করে দ্রুতই বাড়ছে।

সবার মাপমতো জামাকাপড় খুঁজে পাওয়াই পরিবারটির জন্য বড় চ্যালেঞ্জ। ৯৫ কেজির কিশা স্বীকার করলেন, ৩৮ ইঞ্চি লম্বা পদযুগলে শোভা পেতে পারে এমন পাজামা এসেক্সের দোকানগুলোতে খুঁজে পাওয়া সহজ নয়। আর মিতব্যয়ী এয়ারলাইনসগুলোতে পা রাখা নিয়ে স্বামী-স্ত্রীর অসুবিধাও একরকম নৈমিত্তিক। কিন্তু সুবিধার দিকগুলোও তো দেখতে হবে, সর্বোচ্চ তাকটির নাগাল পেতে কখনোই মই ব্যবহার করতে হয় না কিশার। পরস্পরকে জেনেই গাঁটছড়া বেঁধেছেন তারা।

বার্কিং এন্ড ডাগেনাম কলেজের নিরাপত্তারক্ষী উইলকো জানান, ছাত্রছাত্রীরা প্রায়শই ইংরেজ ফুটবলার পিটার ক্রাউচের সঙ্গে তুলনা করে তাকে। শুধু যদি ওর মতো ফুটবল খেলতে পারতাম! বিনয়ের সঙ্গে বলেন উইলকো। তবে সাত ফুট লম্বা ১১৮ কেজি এই শরীরের মানে হলো, পড়তে এসে কেউ লড়তে চাইলে তাদের আলাদা করে দেওয়া মোটেও কঠিন কাজ নয় আমার জন্য। আর কেউ কোনো বেচাল করলে ৪০ ইঞ্চি লম্বা পায়ে দৌড়ে তাদের ধরে ফেলাও ছেলেখেলা উইলকোর জন্য। কিন্তু নিজের জন্য পোশাক, বিশেষ করে একজোড়া ভালো জুতা খুঁজে পাওয়া সত্যিই চ্যালেঞ্জ উইলকোর জন্য। এই দম্পতির শয়নকক্ষে মাত্রই ছয় ফুট লম্বা একটি খাট আঁটে। তার মানে তাদের দুজনের পা-ই ঘুমের সময় কিছুটা বাইরে থাকে। চৌকাঠ থেকে শুরু করে নানা জায়গাতেই লম্বা মাথার টোল দিতে হয় তাদের। আর তাদের-রেনোল্ট মেগান গাড়িটা সেই অল্প যানগুলোর একটা সানরুফ দিয়ে মাথা কিছুটা বের না করে দিয়েও যা চালাতে পারে উইলকো।

ও হ্যাঁ, আসল কথাই তো বলা হয়নি। এই দম্পতি একে অপরকে খুঁজে পেল কোথায়? চারপাশে শুধু খাটো ছেলেদের দেখতে দেখতে বিরক্ত কিশা লম্বাদের ওয়েবসাইটে প্রেমের বারতা পাঠালেন। উইলকোও বুঝলেন, তাকেই খুঁজছে কিশা।

নিউজ অব দ্য ওয়ার্ল্ড অবলম্বনে।

এই না হলে টিউন। সিজনের সাথে একদম খাপ খাইইয়ে গেছে। কিন্তু মন্তব্যটার পজিশনিংগ ঠিক বুঝতে পারলাম না।

Level 0

খুবই ভালো হয়েছে।

ভাল হয়েছে,
ধন্যবাদ শেয়ার করার জন্য।

Level 0

আমি এমন একটা প্রাণী যে আপনার এই টিউনটা পড়তে গিয়েই ক্ষিধা লেগে গেছে।
বলুনতো আমি কোন ধরনের প্রাণী?

থ্যাংকস আপনাকে ধন্যবাদ।